বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলন ২০১৮ ও প্রাসঙ্গিক কথা

আগামীকাল ২০ অক্টোবর ২০১৮ (শনিবার) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী আপনাকে শত ব্যস্ততার মাঝেও শিক্ষক সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে সম্মতি দিয়েছেন। আপনার উপস্থিতিতে শিক্ষক সম্মেলন অনেক বেশী প্রাণবন্ত, স্বার্থক ও সফল হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি মহামিলনে পরিণত হবে।

শিক্ষকতার অভিজ্ঞা ও প্রাপ্ত তথ্য মতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি এটাই প্রথম। আগে শিক্ষকগণ পেশাজীবী হিসাবে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানাদিতে ও নির্বাচনের পূর্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হতেন। এ বিশেষ আয়োজনে শিক্ষকগণ একান্তে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁদের প্রয়োজনের বিষয়গুলো বলার সুযোগ পাবেন। ধন্যবাদ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের বর্তমান কার্যকরী পর্ষদকে যারা এ ধরনের উদ্যেগ গ্রহণ করেছেন এবং আমার বিশ্বাস তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মনের কথাগুলো সম্মেলনে তুলে ধরবেন এবং শিক্ষক সমাজ খুশী মনে সম্মেলন শেষে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।

প্রধানমন্ত্রী আপনার গতিশীল নেত্রীত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে এবং আমরা মধ্যম আয়ের দেশের দিকে ধাবমান। স্থল, সমুদ্র সীমানা জয় করে আমরা এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আকাশসীমায় উপনীত। দেশের উন্নয়নে আপনার নিরলস পরিশ্রম দেশে-বিদেশে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনে আপনাকে যে সম্মান দিয়েছেন তার জন্য আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আপনার নেত্রীত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাবে এটা আমদের বিশ্বাস।

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে মানবসম্পদের ভুমিকা অনেক। সাম্প্রতিক প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণায় বাংলাদেশের মানবসম্পদের সকল সূচকে অগ্রগতি পরিলক্ষিত। গবেষকগণ মনে করেন, এই অগ্রগতি ধরে রাখা বা আরও উন্নতির জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এ খাতের কারিগর শিক্ষকসমাজ। জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের ভালবাসতেন, সম্মান করতেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সনে (শুধুমাত্র চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে)এক্ট প্রনয়ন করেন। সেই এক্টের কল্যানে শিক্ষকরা সংগঠন করা, দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছেন।

শিক্ষকরা সিনেট, শিক্ষক সমিতি, সিন্ডিকেট, ডীন, অর্থকমিট ও একাডেমিক কাউন্সিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নির্বাচন পরিচালনাসহ নানাবিধ জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগ করেন। কিন্তু ১৯৭৩ সনের এক্টের 44(2) ধারায় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার বিধান আছে। ১৯৭৩ সনের এক্ট যেমন শিক্ষকদের জন্য বঙ্গবন্ধুর উপহার, ঠিক 44(2) ধারার সামান্য সংশোধন (নির্বাচিত হলেই কেবল চাকুরী ছেড়ে দিতে হবে)হলে শিক্ষকদের জন্য হতো প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি উপহার। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা বিশ্লেষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খুজে পাওয়া দুষ্কর। শিক্ষকরা জাতীয় রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে রাজনীতির গুনগতমান উন্নত হবে এবং সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরা উৎসাহিত হবে। আপনিও শিক্ষকদের অনেক বেশী ভালবাসেন ও সম্মান করেন বলেই প্রথমবারের মত আয়োজিত শিক্ষক সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে সম্মতি দিয়েছেন।

Post MIddle

প্রধানমন্ত্রী আপনার সরকার দেশে গবেষণা বৃদ্ধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২০০০ সনের দিকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশীপ চালু করেন। ২০০১ সনে সরকার পরিবর্তনের পর উক্ত ফেলোশিপটি বাতিল করা হয় এবং ফেলোশীপ প্রাপ্ত সকল গবেষকই ডিগ্রী সম্পন্ন না করেই দেশে ফিরতে হয়েছে যা ছিল সত্যিই দুঃখজনক।

২০০৮ সনে আপনি ক্ষমতায় আসার পর আবারও ফেলোশীপ চালুর উদ্যেগ নেন এবং ২০১০ সনের নভেম্বর মাসে নতুনরুপে দেশে ও বিদেশে অল্পসংখ্যক পিএইচডি ও স্নাতকোত্তর বিষয়ে ফেলোশীপ দেয়া হয়। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা চিত্তে জানাতে চাই যে বঙ্গবন্ধু ফেলোশীপের আওতায় প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে আমি বিদেশ থেকে পিএইচডি করার গৌরব অর্জন করি। আজ সেই ফেলোশীপের আকার ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আপনার পৃষ্ঠপোষকতায় ফেলোশিপটি ট্রাষ্ট-এ রুপান্তরিত হয়েছে। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কল্যানে আপনার সরকারের এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারাই শিক্ষক সমাজের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া, সুবিধা-অসুবিধার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। হয়ত প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক নেতাদের আবদারের সম্পূর্ণ/আংশিক/কিছু মেনে নেবেন বা শুধু শুনবেন ঘোষণা আসবে পরে, এমন অনেক কিছুই হতে পারে। সব কিছুর পরেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে আবারও দেশ পরিচালনার সু্যোগ দেয়া।

আমাদের মাঝে মতবিরোধ থাকবে, থাকবে নেত্রীত্বের প্রতিযোগীতা, কিন্তু উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভেদাভেদ ভুলে যেতে হবে। আমাদের সংগঠিত হতে হবে জাতীয় স্বার্থে ও মুক্তিযুদ্ধের শক্তির পক্ষে। প্রথমবারের মত আয়োজিত সম্মেলনের সফলতা কামনা করছি এবং আশাকরি প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের কথা শুনবেন ও প্রযোজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।#

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর। সাবেক প্রভোস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

পছন্দের আরো পোস্ট