হাবিপ্রবিতে শিক্ষক সংকট

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগে চলছে শিক্ষকের চরম সংকট। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত প্রায় ১:১০২। ইংরেজি বিভাগ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৭ টি বিভাগে ক্লাস নিতে হচ্ছে এই বিভাগের শিক্ষকদের। ফলে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে শিক্ষার্থী আছেন ছয় শতাধিক যেখানে শিক্ষক মাত্র ৬ জন। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত প্রায় ১:১০২। ইংরেজি বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের একসাথে হিসেব করলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে আরও বেশী। প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছ।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সালে ‘সোস্যাল সায়েন্স এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামে বিভাগটি চালু হয় এবং ২০১৪ সালে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। পরে বিভাগটির নামকরণ করা হয় ‘ইংরেজি’। বিভাগটিতে বর্তমানে পাঁচটি ব্যাচ রয়েছে। পাঁচটি ব্যাচে মোট ৩৩ টি কোর্সে নিয়মিত চালু আছে।

নিজ বিভাগ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ টি বিভাগে ক্লাস নিতে হচ্ছে এই বিভাগের শিক্ষকদের। এতে শিক্ষকদের ওপর যেমন ক্লাস নেওয়ার চাপ পড়ে তেমনি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হতেও বিলম্ব হয় ।

অতিরিক্ত ক্লাসের কারণে শিক্ষকরা একদিকে ক্লাস নিতে ব্যস্ত থাকেন অন্যদিকে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ব্যস্ত থাকতে হয়। এছাড়া অন্যান্য একাডেমিক কাজ করতে হয়। ফলে ক্লাস লেকচারের বিষয়গুলো পড়ে আসার সুযোগ পান না অনেক শিক্ষক। বিভাগের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বলেন, ‘এত বেশী পরিমাণ ক্লাস পরিচালনা করতে হচ্ছে, ক্লাসে গিয়ে কি বিষয়ে লেকচার দিব সে বিষয়টি নিয়মিত অধ্যয়ন করতে পারি না।’

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেমিস্টারের ক্লাস সম্পন্ন না হওয়ায় পরীক্ষা পিছাতে হচ্ছে। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, ‘ছয় মাসে সেমিস্টার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স শেষ হচ্ছে না। ফলে পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সেমিস্টার শেষ হতে ৬ মাসের বেশি সময় লাগছে।’ সেশনজটের আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী।

Post MIddle

৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত সপ্তাহে বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক ক্লাসে আসেন দুপুর ১:৩০ টায়, ক্লাসে এসে তিনি বলেন, “আজ আমি পাঁচটি ক্লাস পরিচালনা করেছি এবং আরও কয়েকটি ক্লাস পরিচালনা করতে হবে।”

একই বর্ষের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন জানান, “সেমিস্টারের ফলাফল সময়মতো প্রকাশ হয় না, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখায় অভিযোগ করলে তারা বলেন, “ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকরা ফলাফল জমা না দিলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখা কিভাবে ফলাফল প্রকাশ করবে?

জানা গেছে, অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার কারণে একজন শিক্ষকের প্রতি সেমিষ্টারে প্রায় ৫০০০ টি খাতা মূল্যায়ন করতে হয়।

বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, ইংরেজি বিভাগ চালু করার সময় বিভাগে শিক্ষক ছিলেন একজন। বিভাগ চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত তিনবার মোট ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৪ সালে।

এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১ মার্চ। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ইংরেজি বিভাগে কোন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না ফলে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ মনোভাব পোষণ করেন। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মনিরুল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম বর্তমান ভিসি আবুল কাসেম স্যারের সময়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ইংরেজি বিভাগকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, কিন্তু আমাদের আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে।’

বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মো. নওশের ওয়ানের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকালে বলেন, ‘বিভাগে পদ এবং শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলেছি। বিষয়টি আমরা আরও বেশী গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করব।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়েছে। আমরা এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশনে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরব।’

পছন্দের আরো পোস্ট