খুবিতে রিক্যাপচারিং পার্টিশন শীর্ষক কর্মশালা

দেশভাগ ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে গৃহত্যাগী যে বিপুল জনগোষ্ঠীর স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে তা পুনরুদ্ধারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিন ও কলকাতার নেতাজী সুভাষ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক প্রকল্প বাস্তবায়নে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর অঞ্চলের এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলাসমূহে বসবাসরত অভিবাসী প্রান্তিক সত্তরোর্ধ জনগোষ্ঠীর স্মৃতিধারণ করা হবে। আজ (১৫ মার্চ) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে ইংরেজি ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে লোকেটিং পোস্ট-পার্টিশন অ্যামনেসিয়া ইন মেমোরি এন্ড লেটারেচার: অ্যান ইন্দো-বাংলাদেশ পারেসপেক্টিভ এর আওতায় রিক্যাপচারিং পার্টিসন শীর্ষক দুদিনব্যাপী এক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

ইংরেজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সাবিহা হকের সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে যৌথ প্রকল্পের সামগ্রিক দিক তুলে ধরেন নেতাজী সুভাষ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মানবিকবিদ্যা অনুষদের অধিকর্তা ও প্রকল্প সমন্বয়কারী মনন কুমার ম-ল। আলোচনায় অংশ নেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রকল্পের শ্রীদীপ মুখার্জী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সিনিয়র প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান। কর্মশালার দ্বিতীয় পর্বে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রত্যক্ষদর্শীর স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষাবিদ, একাধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া একাত্তরে গৃহত্যাগী, শরণার্থী, স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের শিল্পী দীপা বন্দোপাধ্যায়। এ পর্বে মডারেটর ছিলেন ইংরেজি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. সাবিহা হক। তৃতীয় পর্বে পার্টিসন সাহিত্যের পরিসর ও সাম্প্রতিক ভাবনা শীর্ষক বিষয়ে মুলবক্তব্য উপস্থাপন করেন নেতাজী সুভাষ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মানবিকবিদ্যা অনুষদের অধিকর্তা মনন কুমার ম-ল। এ পর্বে মডারেটর ছিলেন ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সিনিয়র প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান। এ সময় ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

Post MIddle

উপস্থিত শিক্ষার্থী যারা কেউ মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরেই তাদের জন্ম, যারা দেশ বিভাগের কথা শুনলেও তেমন কোনো প্রেক্ষাপটের ধারনাই তাদের নেই-এমন কয়েকশত ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের কাছে আলোচকবৃন্দ তুলে ধরেন বঙ্গভঙ্গ থেকে ১৯৪৭, এরপর থেকে ১৯৭১, অতঃপর ১৯৭৫ এর পনেরই আগস্টের পর ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দীপা বন্দোপাধ্যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে প্রায় সোয়া ঘন্টারও বেশি সময় তুলে ধরেন প্রত্যক্ষ ঘটনা, দুর্ভোগ, নিপীড়ন, জন্মভূমির ভিটেবাড়ি ত্যাগ ও শরণার্থী জীবনের উপাখ্যানসহ ভয়ার্ত, লোমহর্ষক বর্ণনা। এ যেনো জীবন্ত ইতিহাসকে তিনি সামনে তুলে ধরেন। আর সে কারণে কানায় কানায় ঠাসা মিলনায়তনে পিনপতন নীরবতায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনেন শিক্ষার্থী ও উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ। সব মিলিয়ে পার হয় একটানা চার ঘন্টা। কিন্ত কেউ ওঠার মতো পরিস্থিতি অনুভব করেননি। তাদের অনুভব সত্তায়, তাদের মননে, তাদের হৃদয়ে এমন ভাবেই স্পর্শ করে এসব বর্ণনা। নেতাজী সুভাষ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মানবিকবিদ্যা অনুষদের অধিকর্তা মনন কুমার ম-ল বলেন গোটাবিশ্বে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক, ভৌগলিক দিকসহ সার্বিকভাবে ভারতবর্ষের মতো এতো বৈচিত্র্যময়তা আর কোথাও নেই। কিন্তু আমাদের এই বৈচিত্র্যময় আখ্যানকে নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় একরৈখিক ভাবনা শুরু করেছে। তাদের সে ভাবনা সঠিক নয়। কারণ পাঞ্জাব ভাগ হওয়া, বাংলা ভাগ হওয়া বা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এক নয়। সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর বাঙালির এক অভিযাত্রা।

জাতি সত্তায় ভাষা চর্চা, ভাষা আন্দোলন মানেই এখন বিশ্বে মুক্তির আন্দোলন। এটা বাংলাদেশের মানুষের জাতীয়তাবোধ থেকেই দীক্ষা লাভ করছে। তিনি বলেন পার্টিসনের ফলেই নানান স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়ে আছে। যা অনেক ক্ষেত্রেই দলিলে বা লিখিতরূপে নেই। আমরা সমাজের বিদগ্ধ, প্রাকৃতজনের প্রতিক্রিয়া অবিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষায় সংরক্ষণ করতে চাই। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হলে তাদের মধ্যে পার্টিসন ধারণা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারবে। অনাগতকাল ধরে এ স্মৃতি সংরক্ষণ পরবর্তী প্রজন্মের নানা প্রশ্নের ও অনুসন্ধিৎসুতার জবাব দিতে পারবে। সভাপতি প্রফেসর ড. সাবিহা হক এ কর্মশালায় উপস্থিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যে বর্ণনা তুলে ধরেন তার জন্য দীপা বন্দোপাধ্যায় এবং এ প্রকল্পের উদ্দেশ ব্যাখ্যা করে সবার মধ্যে জানার যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন তার জন্য ভারতীয় প্রতিনিধিদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি এ আন্তর্জাতিক প্রকল্পের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামানের সচেষ্ট ভুমিকা ও অবদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

পছন্দের আরো পোস্ট