দৃক গ্যালারিতে প্রদর্শনী জীবন ও অধিকার

বিয়ের এক বছর পরে বিধবা হন নয়নতারা। তখন তার বয়স তেরো বছর। এরপর গত চার দশক ধরে বেনারসের কাশিতে মহাদেবের উপাসনা করেই দিন কাটে তার। উপাসনা করেই জীবন পাড়ি দিলেন এই নারী। যুথিকা দেউরির গল্পছবিতে এভাবেই উঠে এসেছে এক নারীর জীবনচিত্র। নারীর জীবন ও তার অধিকার নিয়ে দৃক গ্যালারিতে শুরু হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

নারীর জীবন কি নারীর অধিকারে থাকে? জীবনের প্রতিটি পর্বে সে নিজেই কি সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে? অন্য কেউ কি তা ঠিক করে দেয় না! কখনো পরিবার কখনো সমাজ নারীকে বলে দেয় ‘এভাবে করো, এভাবে করো না’। নারীর জীবনের এমনি নানা পর্যায়ের ছবি উঠে এসেছে প্রদর্শনীতে। এই নারী কখনো সর্বংসহা, কখনো অত্যাচারের শিকার, কখনো সাহসী। এই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য নারী-পুরুষের ভেদাভেদ না করে প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন করা। এবং এটিকে একটি সামাজিক সচেতনতার বিষয় হিসাবে তুলে ধরা। প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে মানুষ হিসাবে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে সিদ্ধান্ত ও পছন্দের মূল্যায়ন। তরুণদের মাঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ এবং স্বাধীনতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাল্য বিবাহ, পারিবারিক সহিংসতা, অনলাইনে সাইবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, যৌন হয়রানি, বাক স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ তাদের জীবনের বাধা হয়েও দাঁড়াচ্ছে ক্রমশ।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এবং ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আয়োজনে ও আরএফএসইউ-এর পৃষ্ঠপোষকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘আমার জীবন, আমার অধিকার’ শীর্ষক পাঁচ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী। উদ্বোধনী পর্বে আলোকচিত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। অনলাইনে এই প্রদর্শনীর জন্য ছবি আহ্বান করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৪-৩০ বছর বয়সী প্রায় ১৫০ আলোকচিত্রীর পাঠানো ছবি থেকে বাছাই করা ২৩ জন আলোকচিত্রীর ২৪টি একক ছবি এবং ১টি গল্পছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনী।

Post MIddle

এই আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার বিজয়ী হয়েছেন ঢাকার মৌ আক্তার সুরভি, প্রথম রানার-আপ ঠাকুরগাঁওয়ের আলোকচিত্রী জ্যোতির্ময় দেব, দ্বিতীয় রানার-আপ সিলেটের আলোকচিত্রী আইমান নাকিব এবং সেরা গল্পছবির আলোকচিত্রী যুথিকা দেউরি। তাদের যথাক্রমে ২৫ হাজার, ১৫ হাজার এবং ১০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। দেওয়া হয় ক্রেস্ট এবং সনদপত্র। এছাড়া, প্রদর্শনীর বাকি আলোকচিত্রীদেরকেও অংশগ্রহণের সম্মাননা সনদ দেওয়া হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন মানবাধিকারকর্মী এবং ‘নিজেরা করি’ সংগঠনের সমন্বয়ক ও এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর বিচারক প্যানেলের সদস্য খুশি কবির এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট -এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। এ সময়ে মঞ্চে আরও বক্তব্য রাখেন প্রতিযোগিতার সদস্য প্যানেলের সদস্য আলোকচিত্রী হাসান সাইফুদ্দিন চন্দন, আবীর আবদুল্লাহ এবং তাসলিমা আক্তার। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্লাস্টের কর্মী ব্যারিস্টার ফারিয়া আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আলোকচিত্রী মুনিরা মোরশেদ মুননী।

প্রদর্শনী আগামী ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

পছন্দের আরো পোস্ট