কিভাবে ভাল প্রেজেন্টেশন দেওয়া যায়

আমাদের জীবনে কিছু দক্ষতা সবসময় ই কাজে লাগে। সেটা হতে পারে ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে প্রফেশনাল জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এমন ই একটা দক্ষতা হল “Presentation Skill”। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে আমরা কম বেশি সবাই জানি এই দক্ষতাটি আমাদের জীবনে খুবই প্রয়োজন কিন্তু প্রেজেন্টেশন নাম শুনলেই আমাদের বুকের ভেতর কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়। অথচ আমরা চাইলেই কিন্তু খুব ভাল একজন প্রেজেন্টার হতে পারি।

কিছু কৌশল অনুসরণ আর নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে যে কেউ নিজেকে একজন ভাল প্রেজেন্টার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। আজ আমি প্রেজেন্টেশন দক্ষতা সম্পর্কিত কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি এ লেখাটি আপনাদের প্রেজেন্টেশন দক্ষতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমি বুঝানোর সুবিধার ক্ষেত্রে পুরো বিষয় টাকে ৩ ভাগে ভাগ করেছি।

# প্রেজেন্টেশন দেওয়ার একদম প্রাথমিক অবস্থা

# প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত

# প্রেজেন্টেশন চলাকালীন সময়

প্রাথমিকভাবে করনীয়:

ভাল প্রেজেন্টেশন দেওয়ার প্রথম শর্ত হল সতস্ফূর্ত ভাবে কথা বলতে শেখা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রেজেন্টেশন দিতে হয় ইংরেজিতে, যেটা আমাদের অনেকের জন্যই খুব কঠিন। আমাদের মধ্যে অনেকেই খুব ভাল ইংরেজি বোঝে কিন্তু বলতে পারে না।

অনুশীলন

আসলে কোন ভাষায় কথা বলার দক্ষতা অর্জনের জন্য শুধু প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন। আপনার যদি কারো সামনে ইংরেজিতে কথা বলতে লজ্জা লাগে তাহলে আপনি আপনার রুমের আয়নাটিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করুন। আয়নার সামনে প্রতিদিন কিছু বলার চেষ্টা করুন। আয়নায় যে মানুষটি দেখবেন সেটা আপনারই প্রতিবিম্ব। আপনি নিজেই দেখতে পারবেন কথা বলার সময় আপনার বাচনভঙ্গি কেমন হয়।

আয়নার সামনে কথা বলা

আয়নার সামনে কথা বলাটা সত্যি খুবই কার্যকরী। আমি নিজে এর সুফল পেয়েছি। তাছাড়া আপনি যখন খুব সকালে কিংবা মধ্য দুপুরে কিংবা রাতে রাস্তায় একা একা হেটে বাড়ি বা হলের দিকে যাবেন তখনো আপনি চারপাশের প্রকৃতি নিয়ে কিছু বলার অভ্যাস করুন।

ইংরেজিতে বলার চেষ্টা করুন

আপনি সারাদিনে কি করবেন বা আপনার সারাদিন কেমন গেল এগুলো নিজে নিজে ইংরেজিতে বলার চেষ্টা করুন। এভাবে কয়েকদিন অনুশীলন করার পর যখন দেখবেন আপনার কথা বলার মধ্যে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে তখন আপনি আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির (যে মোটামুটি ভাল ইংরেজি পারে)সাথে কথা বলা শুরু করেন। কোন ভুল হলে তাকে ধরিয়ে দিতে বলেন। এভাবে কয়েকদিন অনুশীলনের পর কোন একটা ক্লাবের সেশনে যান, যেখানে আপনি নিয়মিত কথা বলার একটা প্লাটফর্ম পাবেন। এরপর উঁচু প্লাটফর্মে কথা বলা শুরু করেন। প্রথমে হয়ত অনেক ভুল করবেন। হয়ত অনেকেই হাসাহাসি করবে। কিন্তু হাল ছেড়ে দিবেন না। ধৈর্য ধরে কথা বলা চালিয়ে যান।

আমাকে আমার ঘনিষ্ঠ জুনিয়ররা প্রায়ই বলে, তারা কি কথা বলবে ভেবে পায় না!! আমি তাদেরকে বলি “তোমরা প্রথম দিন শুধু তোমাদের নামটা বল আর ধন্যবাদ দিয়ে শেষ কর। পরের দিন আরো ২ টা শব্দ বেশি বল। তারপরের দিন আরো ২ টা। এভাবে বলতে বলতে দেখ একদিন তোমরা ৪/৫ মিনিটের বক্তব্য খুব সহজেই দিতে পারছ। সত্যি আমি দেখেছি এখন তাদের কাছে ৫ মিনিট খুব অল্প সময়। তাই অল্প কথা দিয়েই শুরু করেন। ভুল করেন আর শিখতে থাকেন। দেখবেন একদিন আপনিও পারবেন। অবশ্যই পারবেন।

শুদ্ধ উচ্চারণ

কথা বলার ক্ষেত্রে শুদ্ধ উচ্চারণ টা একটা বড় ব্যাপার। তাই উচ্চারনের প্রতি নজর রাখুন। সেই সাথে বাচনভংগির প্রতিও গুরুত্ব দিন। সবার দিকে তাকিয়ে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

Post MIddle

প্রেজেন্টেশনের পূর্ব মুহূর্তে করণীয় :

ধরুন আপনি খুব ভাল মত কথা বলার দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছেন। আগামীকাল আপনার কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় আপনাকে প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি নিজেকে যেভাবে প্রস্তুত করতে পারেন –

# প্রথমে আপনি যে বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দিবেন সেটা নিয়ে খুব ভাল ভাবে একটি স্লাইড তৈরী করে নিবেন এবং পুরো স্লাইড টা আপনি খুব ভালভাবে স্টাডি করবেন। কোনটার পর কোনটা বলবেন তা ঠিক করে নিবেন। এটা কে বলা হয় Maping। এতে আপনার গুলিয়ে ফেলার সম্ভবনা কম থাকবে।

# অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল “Starting” অর্থাৎ আপনি শুরু কিভাবে করবেন সেটা ঠিক করা ।আপনি যদি শুরুটা একটু ভিন্ন ভাবে করতে পারেন তাহলে আপনি সকলের মনযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন।কথায় বলে -First Impression is the best Impression “। এজন্য শুরুটা খুব ভাল এবং ভিন্নধর্মী হওয়া প্রয়োজন। আপনি কিভাবে শুরু করবেন এটা আপনাকে আগে থেকেই ভেবে রাখতে হবে। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সাপেক্ষে পরিবর্তন করা লাগতে পারে। সাধারণত আমরা সকলকে ” সালাম জানিয়ে”, ” এই যায়গায় উপস্থিত হতে পারে আমি খুব আনন্দিত ” ইত্যাদি ইত্যাদি বলে শুরু করি। কিন্তু আপনি ধরাবাঁধা নিয়মে শুরু না করে একটু ভিন্ন ভাবে শুরু করেন। এক্ষেত্রে আমি ২ টা কৌশলের কথা বলছি। যে কোন একটা আপনি অনুসরণ করতে পারেন।

প্রথমত – আপনি প্রেজেন্টেশনের সাথে সম্পর্কিত কোন ছবি বা ভিডিও দেখাতে পারেন। ছবি বা ভিডিও দেখানোর পর সেখান থেকে অডিয়েন্সকে যেকোন একটা প্রশ্ন করবেন। এটা মনযোগ আকর্ষনের সবচেয়ে বেস্ট উপায় বলে আমি মনে করি। কেউ না কেউ উত্তর তো দিবে। তার প্রশংসা করে সবাই কে হাত তালি দিতে বলবেন। দেখবেন ঐ যায়গার পরিবেশটাই পাল্টে গেছে যেটা পুরোপুরি আপনার অনুকূলে।

দ্বিতীয়ত – কোন মহামনিষীর কোন বিখ্যাত উক্তি ( প্রেজেন্টেশন টপিক এর সাথে সম্পর্কিত) অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন পরিসংখ্যান অথবা প্রেজেন্টেশনের টপিকের সাথে সম্পর্কিত যে কোন প্রশ্ন দিয়ে শুরু করতে পারেন।

# প্রেজেন্টেশন দেবার আগে বেশি বেশি Rehearsal করুন। স্টিভ জবস মাস্টার প্রেজেন্টার ছিলেন। তারপরো প্রেজেন্টেশন দেবার আগে তিনি অফিসের নিজ কক্ষে ৩০/৪০ মিনিট একান্তে রিহার্সাল করতেন। তাহলে আপনি আমি নই কেন!! এবার ধরুন ৪/৫ মিনিট পর আপনার প্রেজেন্টেশন শুরু হবে। তখন দেখবেন আপনি কেমন জানি নার্ভাস হয়ে যাচ্ছেন। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে হবে যা প্র‍্যাক্টিস করেছেন সবই ভুলে গেছেন। হয়ত স্টেজে গিয়ে কিছুই বলতে পারবেন না। এটা যে কোন মানুষের জন্য খুবই স্বাভাবিক। এমন কোন মানুষের ক্ষেত্রে এটা ঘটেনি সেটা
পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই সাময়িক নার্ভাসনেস যদি আপনি দূর করতে না পারেন তাহলে সত্যি আপনি স্টেজে তোতলাবেন। তাহলে কিভাবে এই Stress দূর করা যায় –

# এক্ষেত্রে আপনি কয়েকবার চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস (Deep breath) নিবেন। দেখবেন কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন।

# এরপরো যদি না কমে তাহলে ছোট্ট কোন যায়গায় ধীরে ধীরে একটু হাটাহাটি করবেন। # তারপরো যদি না হয় তাহলে একটু নিরিবিলি যায়গায় চোখ বন্ধ করে আপনার পুরো পৃথিবীকে শুন্য করে দিবেন আর মনে মনে বা একটু জোরে বলতে থাকবেন ” আমি পারব, আমি পারব।

# কোন motivational বা inspirational গান শুনতে পারেন কিছুক্ষনের জন্য। দেখবেন আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন।

মোঃ দেলোয়ার জাহান সোহাগপ্রেজেন্টেশন শুরুর সময় করনীয় :

# আপনি যখন স্টেজে উঠার পর সবার দিকে তাকাবেন। তাকানোর সময় তখন আপনার Face কে smiling রাখবেন যেন আপনাকে দেখেই আত্মবিশ্বাসী মনে হয়। তাছাড়া গম্ভীর মানুষদের অনেকেই পছন্দ করে না। দর্শকের সাথে Connected হয়ে যাওয়ার এটা প্রথম Tactics. # কখনো রোবটের মত এক যায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলবেন না। ছোট ছোট move করবেন। প্রত্যকে সারির দর্শকের দিকে তাকাবেন। শুধু মাঝের সারির দিকে তাকালেন আর কর্নারের সারির দিকে তাকালেন না তা হবে না। সবাই চায় আপনি তাকে গুরুত্ব দেন। আপনি যদি সবাই কে গুরুত্ব দেন সবাই আপনাকেও গুরুত্ব দেবে এটাই স্বাভাবিক। ভাল প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে Eyecontact, Body language অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এ বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।

# সবগুলো সেগমেন্ট সুন্দর ভাবে ব্যাখা করার পর যখন আপনি শেষ করবেন তখন আপনাকে একটু ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত সবার আগ্রহ টা বেশী থাকে বক্তব্যের শুরুর দিকে এবং শেষের দিকে। তাই শুরুর মত শেষটাও অনেক জরুরী। বেশিরভাগ মানুষ শুধু Thank You All দিয়ে হঠাৎ করে শেষ করে দেয় যেটা একদম ঠিক না।

এক্ষেত্রে যা করতে পারেন

# আপনি পুরো বক্তব্য টার সারমর্ম ১ মিনিটে বলে শেষ করতে পারেন। এতে আপনি বক্তব্যের মাঝখানে যা যা বলেছিলেন তা আবার সবার মাথায় ঢুকে যাবে।

# অথবা আপনি একটা ভাল উদাহরণ বা গল্প বলে একটা Moral দিয়ে আপনার বক্তব্য শেষ করতে পারেন। এই কৌশল গুলো খুব ভাল ভাবে আত্মস্থ করে নিয়মিত চর্চা করলে আপনি অবশ্যই একজন ভাল প্রেজেন্টার হতে পারবেন বলে আশা করি।

মোঃ দেলোয়ার জাহান সোহাগ । সভাপতি । চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব

পছন্দের আরো পোস্ট