ছাত্রদের অধিকার চর্চায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণের সাথে শিক্ষাঙ্গনের গণতান্ত্রিক চর্চার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে তাই দেখা যায় শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে তা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের জন্যই ক্ষতিকর ও হুমকিস্বরূপ হয়ে ওঠে। সম্প্রতি আমাদের বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবেই অনুধাবন করা যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর রীতিনীতি চর্চার অভাবে শিক্ষার্থী শিক্ষক নির্বিশেষে সকলের ভেতর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রবণতা গাঢ় হয়ে দাড়াচ্ছে দিন দিন।

শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকার ফলে আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলো কখনো কখনো সমাজ ও মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে কার্যকর ভূমিকা পালনের সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

আর এ সমস্যা ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাই প্রয়োজন গণতন্ত্র চর্চার সঠিক প্ল্যাটফর্ম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র চর্চার মোক্ষম উপায় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল ও প্রধান সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সংগঠনটির প্রথা প্রথমে চালু হলেও বর্তমানে চালু নেই কোনটি। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান অকার্যকর বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সর্বশেষ হয়েছে প্রায় ২৩ বছর আগে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চকসু) ২২ বছর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ২৪ বছর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)-তে ২২ বছর আগে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে। অর্থাত্ সবগুলোই বর্তমানে অকার্যকর।

কিন্তু গণতন্ত্রের রেশ ধরে সেই ছাত্র সংসদের মূলমন্ত্রকে বাচিয়ে রেখে শুদ্ধ গণতন্ত্রের চর্চা করার সুযোগ পাচ্ছে সাভারের বেসরকারী গণ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৭ একর জমির উপর সবুজ গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রের হাওয়া ভালোভাবেই বইছে তার প্রমাণ এই সক্রিয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ কমিটি।
গত ২৫ এপ্রিল শনিবার সম্পন্ন হয়ে গেল সংগঠনটির ২য় কমিটির নির্বাচন। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির বৈরী হাওয়া বিরাজমান না থাকায় সুষ্ঠুভাবে চলছে এখানকার ছাত্র সংসদ।

“আমাদের নির্বাচন বেসিক গণতন্ত্রের নির্বাচনী পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কিছু সপ্ন থাকে তাদের ক্যাম্পাসকে নিয়ে। ক্যাম্পাস তাদের প্রথম ও প্রধান প্ল্যাটফর্ম। সেই প্ল্যাটফর্মকে সুন্দরভাবে সাজানোর গুরুতায়িত্ব শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর অর্পণ করেছে বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে বলিয়ান ছাত্র সংসদের বর্তমান পূর্নাঙ্গ কমিটি।” কথাগুলো বলছিলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি শামীম।

Post MIddle

তিনি আরও বলেন-“আমি ভিপি পদে দাঁড়িয়ে আমার ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের যে সমস্যাগুলো সমাধানের কথা বলেছিলাম তার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ৯০ শতাংশ উপস্থিতির কারণে সেমেস্টার ফি’র রেয়াত সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা, ক্লাসরুমগুলোতে কিছু সমস্যা রয়েছে তা দূর করা, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর সঠিক কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করা উল্লেখযোগ্য ছিল। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সমস্যাগুলো সমাধান করে শিক্ষার্থীদেরকে তাদের সপ্নের ক্যাম্পাস উপহার দেবার জন্য।”

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস ইমরান জানান-“দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের পূর্নাঙ্গ ও সচল কমিটি থাকা উচিত। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো সবসময় কতৃপক্ষের নিকট গিয়ে পেশ করতে পারে না। এই দায়িত্ব ছাত্র সংসদেরই। যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসে বর্তমান বাংলাদেশে চলমান অসুস্থ ধারার রাজনীতি নেই সেহেতু আমরা সুষ্ঠূভাবে নিষ্ঠার সাথে এ মহান দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবো।”

নির্বাচনী ইসতিহার পূরণ সম্পর্কে তিনি বলেন-“ক্যাম্পাসকে ডিজিটালাইজেশন করব, খেলাধুলায় সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধি করব এ সকল প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই তা পূরণ হবে।”

বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ছাত্র সংসদের কমিটি ঘোষিত হয় এখানে এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অনেকদিন যাবৎ এই সংগঠনের কোন অস্তিত্ব নেই। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন্দল, মারামারি, হানাহানি, সংঘর্ষ লেগেই আছে। অনেকক্ষেত্রে আবার লাঞ্চিত শিক্ষরাও। তাছাড়া সঠিক নেতৃত্ব ও গণতন্ত্রের অভাবে বেহাল অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর।

ফলে এটা স্পষ্ট যে,ছাত্র সংসদের নির্বাচন না দিয়ে আজকে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার কোন বিদেশি ও বাজারি প্রেসক্রিপশনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই দেশের সরকার থেকে শুরু করে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার স্বার্থে অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জোরালো দাবি রাখছি আজকের এই আলোচনা মধ্য দিয়ে।

পছন্দের আরো পোস্ট