কুবিতে হলের ছাদ ধ্বসে জীবনাশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনের ছাদের কিছু অংশ ধ্বসে পড়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় হলের ৩০৬ নং রুমের ছাদে ধ্বসের এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এরপর দুপুরে পাশের ৩০৭ নং রুমের ছাদেও ফাটল দেখা দেয়। এ নিয়ে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জীবনাশঙ্কায় রয়েছেন।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভবনটি তিন তলা বিশিষ্ট, যা পাঁচ তলা করার জন্য নির্মাণাধীন। রোববার সকালে নির্মাণ শ্রমিকরা জল ছাদের উপরের ইটের ঢালাই হাতুড়ি এবং শাবল দিয়ে উঠাচ্ছিলেন। তখনই ৩০৬ নং রুমের ছাদের উত্তর দিকের কিছু অংশ ধ্বসে পড়ে ঐ রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদীনের টেবিল এবং বিছানার ওপর । তখন ঐ রুমের অন্যান্য আবাসিক শিক্ষার্থীরা থাকলেও সৌভাগ্যবসত ধ্বসস্থলের নীচে কেউ ছিলেন না। ফলে কেউ হতাহত হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এই অবস্থায় কেউ সেখানে থাকলে মারাত্মক আহতসহ মারা যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল।

এদিকে দুপুরে পাশের ৩০৭ নাম্বার রুমের ছাদের ওপর নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ করা অবস্থায় রুমের ছাদে ফাটল চোখে পড়ে শিক্ষার্থীদের। এই রুমের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ধারণা করছেন, যেকোন সময় আবারও ধ্বস নামতে পারে। এতে মারাত্মক আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

ঘটনার পর হলের প্রাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র নন্দী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তারা হলটি পরিদর্শন করেন।

Post MIddle

হল নির্মাণের অল্পদিনের মধ্যেই ছাদ ধ্বসের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে হলের নির্মাণ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, যে কাজ হয়েছে তা খুবই নিম্ন মানের। সিমেন্ট, বালি, পাথর, রড সঠিক ভাবে দেয়া হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা। এছাড়াও তাদের আশঙ্কা, পাঁচ বছরের মাথায়ই যদি এই তিন তলা ভবনের এমন অবস্থা হয়, তাহলে একে আবার পাঁচ তলা কিভাবে করা যায়? যদিও করা হয় তা হবে অতি নিম্নমানের যা কিছুদিন পরপরই শিক্ষার্থীদের জন্য হতাহতের কারণ হয়ে দাড়াবে।শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘কোন ক্যাম্পাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সেই ছাদ ধ্বসের ঘটনার পূণরাবৃত্তি আমরা কখনোই চাই না। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় আছি। প্রশাসনকে বিষয়গুলো খুব সচেতনভাবে দেখার অনুরোধ করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবার্হী প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, ‘এখন যে তিনতলা ভবনটি আছে সেটি শিক্ষা অধিদপ্তর তৈরি করেছে। এ ভবন তৈরি সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না তবে এখানে নির্মাণ ত্রুটি রয়েছে বলে ধারণা করছি এবং সেটি সমাধান করা যাবে। তবে ভবনের মূল ভিত্তিতে যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে বাকি উর্দ্ধমুখী কাজ সম্পন্ন করতে কোন সমস্যা হবে না।’

হলের প্রাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘অল্প দিনের মধ্যেই ভবনের ছাদ ধ্বসে পড়ার বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। ঘটনার বিষয় জানতে পেরে তৎক্ষনাৎ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের নিয়ে সেখানে গিয়েছি। তাদেরকে দায়িত্বের সাথে সরেজমিনে উপস্থিত থেকে কাজ করানোর জন্য বলেছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এর সুষ্ঠু সমাধান হবে।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলী আশরাফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরকে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কাজ করার জন্য বলেছি। তারা বিষয়টি দেখবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম বছরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামের এই হলটি উদ্বোধন করেন।

পছন্দের আরো পোস্ট