জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভা

আজ (২৫শে মার্চ) শনিবার সকালে গাজীপুরস্থ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এর সভাপতিত্বে গণহত্যা দিবস স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম বাংলাদেশ সরকারের কেবিনেট সচিব ও বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা জনাব এইচ টি ইমাম।আলোচক ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠে’র নির্বাহী সম্পাদক জনাব স্বদেশ রায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ।

প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব এইচ টি ইমাম বলেন, “২৫শে মার্চ ১৯৭১ মুক্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকা- ছিল চরম নিষ্ঠুর ও জাতি-বিদ্বেষী। এক রাতেই ঢাকা শহরে কমপক্ষে ১০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়, বিভিন্ন বস্তি, ঘর-বাড়ি ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত করা হয়। এরূপ হত্যাকান্ড ও নিষ্ঠুরতা দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে। জাতিসংঘ গৃহীত যে-কোনো সংজ্ঞা বিচারে ২৫শে মার্চ ও তৎপরবর্তীতে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাকা- ছিল জাতি-বিদ্বেষী নিষ্ঠুর গণহত্যা।”

স্বদেশ রায় তাঁর আলোচনায় বলেন, “অপারেশন সার্চলাইট নামে ২৫শে মার্চ রাত থেকে শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাঙালি নিধন। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে তাদের হাতে ৩০ লক্ষ বাঙালি প্রাণ হারান, প্রায় ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ঘটে, লক্ষ লক্ষ ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়ে তা ভস্মীভূত করা হয়, ১ কোটি মানুষ জীবনের শঙ্কা নিয়ে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়।

Post MIddle

পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাকান্ড ছিল নির্বিচার, জাতি ও ধর্ম বিদ্বেষী।” ড. মুহাম্মদ সামাদ গণহত্যার ওপর লেখা তাঁর একটি কবিতা আবৃত্তি করা ছাড়াও এ প্রসঙ্গে আলোচনায় বলে, “পাকিস্তানিরা চিরকালই বর্বর। অন্যথায় নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইতিহাসের ঘৃণ্য গণহত্যা চালাতে পারত না। এমনকি বর্তমানেও তারা নিজ দেশের মানুষদের ওপর হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। এদের পাপের শাস্তি হওয়া আবশ্যক।”

সভাপতির ভাষণে প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “পাকিস্তানিদের নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের হাত থেকে ২-৩ বছরের শিশু থেকে ৭০-উর্ধ্ব বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, ধর্মাশ্রয়ী কেউই রেহাই পায়নি। নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতনে জন্ম নিয়েছিল যুদ্ধশিশু। মাত্র ৯ মাসের সময় ব্যবধানে যত লোককে হত্যা ও গৃহছাড়া করা হয়, তা বলতে গেলে নজিরবিহীন। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের ৭১-এর গণহত্যা ছিল সমসাময়িককালের কম্বোডিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, রুয়ান্ডা, সুদানের দারফু’র ইত্যাদি হত্যাকা-ের চেয়েও অধিকতর বেশিমাত্রার ও নিষ্ঠুর। পাকিস্তানি বাহিনীর কিছু সংখ্যক স্থানীয় দোসর ছাড়া এরূপ হত্যাকা- সংঘটিত করা সম্ভব হতো না। এত বড় হত্যাকান্ড কিছুতেই বিনা বিচারে যেতে পারে না। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান বর্তমান সরকারের একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। ২৫শে মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা এবং এ মর্মে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করায় সকল সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আসলাম ভূঁইয়া ও ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নোমান উর রশীদ উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে ২৫শে মার্চ ও তৎপরবর্তী গণহত্যার ভিডিও প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জনাব মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। এ ছাড়া ৩০ লক্ষ শহীদের স্মরণে ক্যাম্পাসে প্রধান অতিথি ও অন্যান্যরা ৩০টি বৃক্ষের চারা রোপন করেন।

পছন্দের আরো পোস্ট