চার দিন ধরে অবরুদ্ধ কুবি উপাচার্যের কার্যালয়

 

বেশ কিছুদিন ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির মধ্যে বৈরী সম্পর্ক চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ‘উপাচার্য তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ’-আখ্যা দিয়ে তার জরুরি অপসারণের দাবিতে চক্র-মানববন্ধন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একই দাবিতে গত বুধবার থেকে উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ যার ফলে আজ ৪ দিন ধরে উপাচার্য তার কার্যালয়ে আসতে পারছেন না।

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির বর্তমান নেতৃবৃন্দসহ উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ড. জি এম মনিরুজ্জামান; রসায়ন বিভাগের সভাপতি ড. এ কে এম রায়হান উদ্দিন; বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী প্রমুখ। এ সময় শিক্ষক নেতারা উপাচার্যের জরুরী অপসারণ দাবি করে বলেন- উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। বারবার শিক্ষকরা হামলার শিকার হলেও তিনি প্রশাসনকে কোন ব্যবস্থা নিতে বলছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ খারাপ পরিস্থিতির জন্য তিনিই দায়ী।

এছাড়াও বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য উপাচার্যের অপসারণ ব্যতিত অন্য কোন বিকল্প নেই বলে দাবি করে নিজেদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি ক্যাম্পাসের বাহিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক মামলা করতে অপরাগতা প্রকাশ করাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের সাথে শিক্ষক সমিতির বৈরিতার সূত্রপাত ঘটে। এই ঘটনায় শিক্ষক সমিতি বেশ কিছু দাবি নিয়ে ১২ কার্যদিবস বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিরত থাকেন।

পরে এসব বিষয় সমাধানে উপাচার্যের আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষক সমিতি। একই সাথে নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে থানায় জিডিও করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১জন শিক্ষক। তারপরও গত ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষক ডরমেটরিতে দু’জন শিক্ষকের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে।

Post MIddle

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কর্তৃক মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত তার কোন অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। ফলে শিক্ষক সমিতি নিজেদেরকে চরমভাবে নিরাপত্তাহীন মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে ‘অবাঞ্চিত’ ঘোষণা করেন এবং তার কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন।

এসব ঘটনার পর শিক্ষক ডরমেটরিতে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা প্রদান, প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ ব্যতিত সব ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবেধ নিয়োগ-বাণিজ্য বন্ধকরণসহ বেশ কিছু দাবিতে গত ১০ মার্চ পূর্ব নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম সিন্ডিকেট সভা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদেরকে ই-মেইলের মাধ্যমে সিন্ডিকেট সভায় যোগদান না করার জন্য আহ্বান জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তাদের বক্তব্য, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ উপাচার্যের সভাপতিত্বে কোন সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হতে পারেনা।

শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন ধরনের বাধা উপেক্ষা করেই শুক্রবার সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সভায় যোগ দিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ও ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানের সাথে শিক্ষক নেতাদের বাকবিত-া হয়। ইউজিসি চেয়ারম্যান উপস্থিত শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক নেতারা। একপর্যায়ে প্রফেসর আবদুল মান্নান শিক্ষকদেরকে তাদের দাবি নিয়ে প্রয়োজনে বঙ্গভবন ঘেরাও করার কথা বলেন।

এদিকে রবিবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, উপাচার্যের বাংলোতে- স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে আলোচনারত অবস্থায় উপাচার্য বাসা থেকে এসে শিক্ষকদেরকে বারবার ‘বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও’ অন্যথায় ‘দেখে নেব’ বলে হুমকি দেন। এতে উপস্থিত শিক্ষকরা চরমভাবে অপমানিত বোধ করেন। তার এ ধরনের মন্তব্য উপাচার্য হিসেবে অযোগ্যতার চূড়ান্ত বহি:প্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

জানতে চাওয়া হলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্য শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত অপমান করছেন এবং শিক্ষকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি নিয়োগে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মে সম্পৃক্ত। শিক্ষক ও ছাত্ররা এ ক্যাম্পাসে অনিরাপদ। এ অবস্থায় শিক্ষক সমিতি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তাকে আর অফিসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতেই এক ধরনের শিক্ষক এই ধরনের অযৌক্তিক আন্দোলনে লিপ্ত। পূর্বে তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়াতেই তারা ক্লাসে ফিরে গিয়েছিলেন। এখন নতুনভাবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ঘোলাটে করছেন।’এছাড়াও সব সময়ই উপাচার্যের মেয়াদের শেষ বছরে এসে তার পিছনে কিছু শিক্ষক অযথাই লেগে পড়েন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘শিক্ষকদের সকলে এ আন্দোলন করছেন না। কতিপয় শিক্ষক এ অযৌক্তিকভাবে কিছু উদ্ভট দাবি করছেন। শিক্ষকদের কোন অযৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হবে না।’

 

পছন্দের আরো পোস্ট