পদত্যাগ দাবী করে কুবি উপাচার্যের বাসভবনে তালা

শিক্ষক ডরমেটরিতে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা প্রদান, প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ ব্যতিত সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করাসহ ৪ দফা দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব নির্ধারিত সিন্ডিকেট সভা বন্ধ করার চেষ্টা করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শুক্রবার সকালে উপাচার্যের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় অংশগ্রহণ করতে আসা সিন্ডিকেট সদস্যদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। এ সময় তারা উপাচার্য বাসভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানের সাথে বাকবিতন্ডা হয় শিক্ষক নেতাদের।

বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেট সদস্যদের ই-মেইলে বার্তা প্রেরনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ না করার জন্য সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানায় শিক্ষক সমিতি। এর আগে শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দাবি নিয়ে ১২ কার্যদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছিল এবং উপাচার্যকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে গত বুধবার থেকে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় তারা। সন্ধ্যায় (৫টা ২০ মিনিট) এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপাচার্য বাসভবনে তালা লাগিয়ে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সেখানে অবস্থানে রয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির ৬দফা দাবির আংশিক পূরণ ও বাকিগুলো পূরনের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের পর এবার নতুন আরও ৪ দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। চলমান আন্দোলনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির বাধা দেওয়ার খবর প্রচার হওয়ায় উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের বাসভবনেও সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানে বাধা দিতে শুক্রবার সকাল ৯টায় বাসভবনের ভিতর ঢুকে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে সেখানে অবস্থান নেয় শিক্ষকরা।

একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর আবদুল মান্নানসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা ফটকের সামনে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফটক খুলে সিন্ডিকেট সদস্যদের ভিতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে। এসময় শিক্ষক নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যানকে সভায় অংশগ্রহণ না করতে বলে। এ নিয়ে শিক্ষক নেতারা তাঁর সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন এবং প্রয়োজনে বঙ্গভবনে গিয়ে আন্দোলন করার পরামর্শ দেন।

Post MIddle

সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভায় বাধা দেওয়ার ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। শিক্ষকরা নিজেদের দাবী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া কোনভাবে কাম্য নয়। খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত দল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে।’

শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সিন্ডিকেট সভা বন্ধ করতে না পেরে উপাচার্য বাসভবনের ফটকে বসে পড়ে। সভা শেষে সিন্ডিকেট সদস্যরা বাসভবন ছেড়ে চলে গেলে তারা ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: আবু তাহের বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি। সিন্ডিকেট সভা না করার জন্য দাবী জানিয়েছিলাম। উপাচার্য আমাদের কোন কথাই রাখেননি। তাই এখন থেকে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ায় তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে গিয়েছিলো। কিন্তু আবারও তারা অযৌক্তিক কিছু দাবী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। বাসভবনে এসে এভাবে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করা কোনভাবেই শিক্ষক সৌজন্যতার মধ্যে পড়ে না।’

পছন্দের আরো পোস্ট