অধ্যাপক ড. এম এ মাননান ২য় মেয়াদে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

অধ্যাপক ড. এম এ মাননান ২য় মেয়াদে আরও চার বছরের জন্য বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৫ মার্চ ২০১৭ তারিখে এ নিয়োগ দেন যা তার বর্তমান মেয়াদ ২৩ মার্চ উত্তীর্ণের পর কার্যকর হবে।

সৃজনশীল ব্যবস্থাপনাবিদ হিসেবে সুপরিচিত ড. মাননান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ডের মানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টার্ন কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ইন্সটিটউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস-এর পরিচালক, জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট, ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চ-এর পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও তিন বার নির্বাচিত সিনেটর এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন-এর মহাসচিব ড. মাননান ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ দেশের একমাত্র সরকারি দূরশিক্ষণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উ›মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ১ম নিয়োগ পান।

তিনি ব্যবসা প্রশাসন ও বানিজ্যের কয়েকটি জনপ্রিয় গ্রন্থের লেখক, শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধের রচয়িতা, ইংল্যান্ড, দিল্লী, কোরিয়া, ম্যানিলা ও জেনেভা থেকে প্রকাশিত কয়েকটি গবেষণা গন্থের প্রণেতা এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্ব ব্যাংক, ইউনিসেফ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ব্রিটিশ কাউন্সিল, সিডা ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক ছিলেন। তিনি প্রায় চল্লিশটি দেশে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগদান/গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সেসন চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উদ্যোগে তৈরিকৃত ২০ বছর মেয়াদি উচ্চশিক্ষার স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং কমিটির সদস্য; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষক শিক্ষা কাউন্সিল-এর সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত ”প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাস্তর বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি”-এর সদস্য।

Post MIddle

ড. মাননান ফুলব্রাইট এলামনাই এসোসিয়েশন ও বৃটিশ কাউন্সিল এলামনাই এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য ও কানাডাভিত্তিক কমনওয়েলথ অব লার্নিং-এর এক্সিকিউটিভ গভর্নিং বডির সদস্য। তিনি ন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা-এর সভাপতি ও এপেক্স ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর মহাসচিব ছিলেন।

উপাচার্য হিসেবে বিগত চার বছরে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে টীম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ডিজিটাল শিক্ষার রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-নির্ভর পাঠ্যপুস্তক রচনাসহ স্বাধীনতার স্বপক্ষে কার্যক্রম পরিচালনাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। যেমন, ক) মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, খ) মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনীদের বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা-বেতনে মাস্টার ডিগ্রী পর্যন্ত অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান, গ) উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউটরদের অব্যাহত প্রশিক্ষণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ভবন – ‘‘বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অডিটরিয়াম-কাম-ট্রেনিং কমপ্লেক্স’’ স্থাপন, ঙ) ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বধ্যভূমির ম্যুরালসহকারে দৃষ্টি নন্দন ‘‘স্বাধীনতা চিরন্তন’’ ভাষ্কর্য নির্মাণ, চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ প্রাঙ্গনে সুশোভিত শহীদ মিনারে গাজীপুরের স্কুলসমূহের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালন।

তৃতীয় বিশ্বের অগ্রযাত্রায় অবিসংবাদিত নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার ২০০৯ সালে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়-এর ছয় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ও প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রযুক্তি-বান্ধব করে শিক্ষা সম্প্রসারণে দেশকে অগ্রগতির লক্ষে এগিয়ে নেয়ার জন্য নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: ছাত্র সংখ্যার দিক থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে সারা পৃথিবীতে ৭ম স্থানে উন্নীতকরণ, ৪৫ দিনের মধ্যে এসএসসি/্এইচএসসি সহ সকল পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ৩৫৮টি ই-বুক তৈরী, ইউটিউব-এ ৪৫০-এর অধিক এডুকেশনাল অডিও/ভিডিও প্রোগ্রাম আপলোডকৃত, বাউবির নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী ‘বাউবিটিউব’ চালুকরণ, ই-লার্নিং সেন্টার ও ইন্টারএকটিভ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম স্থাপন, অনলাইনে ফি জমা দেয়ার ব্যবস্থ্করণ, ওয়েবসাইট ও মোবাইলের মাধ্যমে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, নিজস্ব একাডেমিক এপ্্স চালু এবং ডিগ্রী প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টানেটভিত্তিক ই-প্ল্যাটফরম/লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুকরণ, মাইক্রো এস ডি মোবাইল এডুকেশন, নতুন কয়েকটি অনার্স, মাস্টার্স ও এমফিল/পি এইচ ডি প্রোগ্রাম প্রবর্তন, সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর জন্য বিশেষ একাডেমিক প্রোগ্রাম চালুকরণ, নিজস্ব ভিডিও রেকর্ডিং স্টুডিওতে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ক্যামেরা এবং এ্যাপেল আইম্যাক এর ফাইনাল কার্ড-প্রো এডিটিং প্যানেল সংযোজন, মুক্ত শিখন-সামগ্রী ভান্ডার তৈরী, ওয়েব টিভি/ ওয়েব রেডিও চালুকরণ, স্টুডেন্টস্ লাউঞ্জ তৈরী, ই আর পি (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) নামক ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরীর মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনয়ন, বাউবির ক্যাম্পাসকে আর্বজনা ও ধূলাবালি মুক্ত রাখার জন্য আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালুকরণ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চারটি স্তরে পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন, বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যেকোন অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধের লক্ষে তথ্য প্রবাহকে অবাধ ও স্বচ্ছ করার ব্যবস্থা গ্রহণ, সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত বিশেষ স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালনা, প্রায় ১২ বছর পর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পর পর দু’বার (২০১৫ ও ২০১৬) অত্যন্ত সাফল্যজনক ভাবে কনভোকেশন-এর আয়োজন, এবং দরূশিক্ষন পদ্ধতির শিক্ষায় বাউবিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন।

পছন্দের আরো পোস্ট