ভার্সিটির শেষ ভাইভা এবং আমার ছুটির ঘন্টা

ভার্সিটির জীবনটা যখন শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই প্রতি ইয়ারের ভাইভা পরীক্ষা দরজায় এসে কড়া নাড়লেই আতংকে বুকটা কেঁপে উঠতো। আজ যখন প্রজেক্টের ভাইভা অর্থাৎ ভার্সিটির শেষ বিদায়ী ভাইভা দিতে যাবো, তখন দেখলাম বুকের ভিতর সেই ভয়টা এখনো বিদ্যমান আছে। আর বারবার মনেহচ্ছে এই ভয়কে কখনোই জয় করা হয়ে উঠবে না। ভয়কে জয় করতে না পারলেও একটা জিনিস ভেবে খুব ভালোই লাগছে। ভার্সিটির শেষ বিদায়ী ভাইভা পরীক্ষায়, এই প্রথম মনেহয় কোনো ভাইভার ম্যাড়ামকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পেরেছি।

Post MIddle

ভাইভা রুমের যতটা ভয়াবহতা ভেবেছিলাম, তার প্রত্যাশিত যেনো কিছুই হলো না। ম্যাডামের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নিজেকে রীতিমত অবাকই লাগছে। কারন এতো বছর ভার্সিটির ভাইভা দেওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের খুব বেশি সুখকর নয়। তাই আজ ভাইভা রুম থেকে বের হওয়ার পরেই নিজের ভিতর এক ধরনের ভাললাগা কাজ করতে ছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো, ইয়েস! আমি পেরেছি।

ভার্সিটির বিদায়ের সুর অনেকদিন ধরেই টুংটাং টুংটাং করে বাঁজতে ছিলো কিন্তু আমার ভালবাসার রসায়ন বিভাগ যেনো কিছুতেই আমাকে ছাড়ছিলো না। আর এতো সহজে ছাড়বেই বা কেনো? এই, ডিপার্টমেন্ট, এই ক্যাম্পাসেই তো কাটিয়ে দিয়েছি জীবনের অনেকটা সোনালী সময়। ছেড়ে যেতে চাইলেও ঠিক ছেড়ে যাওয়া হচ্ছিলো না। মার্স্টার্সের থিউরি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই বারবার মনে হচ্ছিলো, হুট করেই যেকোনো একদিন চলে যেতে হবে।

এর মাঝে প্রাক্টিক্যাল, ভাইভা শেষ করলাম কিন্তু প্রজেক্টের কাজ এবং ভাইভাটা যেনো শেষ হয়ে উঠছিলো না কিন্তু অবশেষে ক্যাম্পাসের বিদায়ের শেষ পেরেকটাও বুকে বেঁধে গেলো আজ। মার্স্টার্সের যাবতীয় পরীক্ষা বিষয়ক ফরমাল কার্যাবলী শেষ হয়ে গেলো। এর সাথেসাথেই শেষ হয়ে গেলো ক্যাম্পাসের জীবন, ভার্সিটির ছাত্রত্ব, হারিয়ে গেলো ডিপার্টমেন্ট থেকে ছাত্র হিশেবে সমস্ত অধিকার। এতোদিন মনের ভিতর টুংটাং টুংটাং করে বেঁজে উঠা বিদায়ের ঘন্টাটা আজ ছুটির ঘন্টায় পরিণত হলো।

ভার্সিটির জীবন অফিশিয়ালভাবে আজ ইস্তাফা দিয়ে এলাম। সেই সাথে মাথা থেকে সমস্ত দুশ্চিন্তা, প্যারার দিনও শেষ হয়ে গেলো, ভেবেছিলাম কিছুদিন একটা রিলাক্সে ক্যাম্পাসে থাকবো কিন্তু তা আর থাকা হয়ে উঠলো না। ভার্সিটির জীবনের গতি থমকে যাওয়ার আগেই খুব শ্রীঘ্রই আবার পাড়ি জমাতে হচ্ছে আমাদের শহর ঢাকা শহরে।

সবাই বলে ঢাকা শহর নাকি চাকরির শহর। এখন ভালো চাকরির আশায় ছুটিতে হবে দিনরাত। আর কোনো অজুহাত নেই, চাকরির ডিগ্রি নেয়া শেষ ভার্সিটি থেকে। যেভাবে একদিন ঢাকা শহর ছেড়ে লেখাপড়ার জন্য চলে এসেছিলাম, এই বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামে। সেভাবেই ভালো চাকরি পাবার আশায় আবার ফিরে যেতে হচ্ছে ঢাকা শহরে। এটাই বুঝি জীবনের নিয়ম, ক্ষনেক্ষনে প্রত্যাবর্তিত হতে হয় কেন্দ্রের দিকে।

হৃদয়ের গহীনে থেকে একটা অনুচ্চারিত শব্দ বারবার বের হয়ে আসছে “আমি আবার আসবো ফিরে এই ক্যাম্পাসে, হয়তো ছাত্র হিশেবে নয়, প্রাক্তন ছাত্রের বেশে। ভালো থাকিস ভাললাগার ক্যাম্পাস, ভালো থাকিস ভালবাসার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পছন্দের আরো পোস্ট