শেকৃবিতে গমের ব্লাস্ট রোগ বিষয়ক সেমিনার

গমের ‘ব্লাস্ট’ রোগের ছত্রাক জীবাণু ভুট্টাও ছড়াতে পারে। বাংলাদেশের গবেষকদল সম্প্রতি গবেষণাগারে পরীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। গবেষকদলের মতে, নতুন রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন ছাড়া এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়। আক্রান্ত গম ক্ষেত পুড়িয়ে বা কেটে গবাদীপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করে এ রোগের সংক্রমন রোধ করা যাবেনা। এছাড়াও সাময়িকভাবে গমচাষ বন্ধ করাও কোন কার্যকরী সমাধান নয়। তাই বিদেশী কারিগরি সহায়তায় ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে বলে গবেষকরা জানার।

Post MIddle

৮ ফেব্রুয়ারী শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদে সেমিনার কক্ষে গমের ব্লাস্ট রোগঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ- শীর্ষক সেমিনারে গবেষকেরা তাঁদের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল হক বেগ, প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগেয় চেয়ারম্যান ড. মো. বেলাল হোসেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালন করেন সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহাম্মেদ।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে ফসলের ভয়াবহ রোগগুলোর মধ্যে গমের ব্লাস্ট রোগ অন্যতম, অনুকুল আবহাওয়ায় যা মহামারি আকারে দেখা দেয়। ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম এ রোগটি ব্রাজিলে দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ম্যাগনাপরথি ওরাইজি ট্রিটিকাম নামক একধরনের ছত্রাকের সংক্রমনে এ রোগ হয়। তবে আশা কথা হল, গবেষকদল গতবছর এরোগের জীবানুর জীবনরহস্য উম্মোচন করে

গতবছর অনাকাংখিতভাবে এ রোগটি বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় এবং দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলার প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর জমির গম বিনাশ করে। আক্রান্ত জমিতে ৪০-৫০ ভাগ, ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ ফসল নষ্ট হয়।

অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম বরেন, অত্যাধুনিক ক্রিসপার কাস ৯ জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জিনোম এডিটিং এর মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত তৈরি করা হচ্ছে। এতে পরিবেশে জীবানু থাকলেও তা গমে আক্রমন করতে পারবেনা। তিনি আরও বলেন, গমের এ রোগটি সফলভাবে দমনের জন্য জাতীয়ভাবে একটি সমন্মিত গবেষণা উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এ রোগটি নতুন কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। তাই অতিসত্তর কোয়ারেন্টাইনস নিষেধাঙ্গা আরোপ করে আক্রান্ত এলাকাসমূহ থেকে গম বীজ, শষ্য, গাছ, চারা বা অন্যান্য অংশ দেশের অন্যত্র পরিবহন নিয়ন্ত্রন করা উচিত।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, এ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং বিষয়টি নিয়ে দ্রুত দেশ-বিদেশের গবেষকদের দিয়ে গবেষণা করানো উচিত। যাতে এ নিয়ে কোনো ঝুঁকি থাকলে তা মোকাবিলা করা যায়। তিনি আরও বলেন,দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগটির বিস্তার প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহন অত্যাবশ্যক। এজন্য সরকারীভাবে মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে সকলকে সতর্ক করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানের বক্তরা জানান, দক্ষিন আমেরিকার গমের এ ভয়াবহ রোগটি অনাকাংখিতভাবে গত বছর এ দেশে দেখা দেয়। এ রোগের জীবানু বায়োলজিক্যাল সেফটি ৩ ক্যাটাগরিভুক্ত হওয়ায় এটি নিয়ে গবেষণায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কোন এলাকায় এ জীবানুটি ছড়িয়ে পড়লে তা মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোসহ সারাবিশ্ব আজ উদ্ভিগ। এমতাবস্থায় জাতীয় খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমন্মিত উদ্দ্যোগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান খুজে বের করা আহবান জানানো হয়। নতুবা এটা দেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দিবে।#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট