শেকৃবিতে গমের ব্লাস্ট রোগ বিষয়ক সেমিনার

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে “গমের ব্লাস্ট রোগঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ”- শীর্ষক সেমিনার অনুষ্টিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ সেকেন্দার আলী ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল হক বেগ।

বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে ফসলের ভয়াবহ রোগগুলোর মধ্যে গমের ব্লাস্ট রোগ অন্যতম, অনুকুল আবহাওয়ায় যা মহামারি আকারে দেখা দেয়। ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম এ রোগটি ব্রাজিলে দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ম্যাগনাপরথি ওরাইজি ট্রিটিকাম নামক একধরনের ছত্রাকের সংক্রমনে এ রোগ হয়। গতবছর অনাকাংখিতভাবে এ রোগটি বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় এবং দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলার প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর জমির গম বিনাশ করে। আক্রান্ত জমিতে ৪০-৫০ ভাগ, ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ ফসল নষ্ট হয়। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি জাতীয় কারীগরি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেন। তিনি সকলকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ সমস্যাটি উত্তোরনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলামের নেতৃতে গবেষকদল গতবছর এরোগের জীবানুর জীবনরহস্য উম্মোচন করেছেন। তাদের বর্তমান গবেষণার মূল লক্ষ্য, অত্যাধুনিক ক্রিসপার কাস ৯ জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জিনোম এডিটিং এর মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত তৈরি করা। এতে পরিবেশে জীবানু থাকলেও তা গমে আক্রমন করতে পারবেনা। গবেষকদলের মতে, নতুন রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন ছাড়া এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়। আক্রান্ত গম ক্ষেত পুড়িয়ে বা কেটে গবাদীপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করে এ রোগের সংক্রমন রোধ করা যাবেনা।

Post MIddle

এছাড়াও সাময়িকভাবে গমচাষ বন্ধ করাও কোন কার্যকরী সমাধান নয়। তাই বিদেশী কারিগরি সহায়তায় ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। একাজে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের দ্য সেন্সবুরি ল্যাবরেটরি’র অধ্যাপক সোফিয়েন কামাউন এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকোলাস টেলবট। এছাড়াও রয়েছেন জার্মানীর গটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্ড্রিয়াস ফস টিডেমেন এবং সুইজাল্যান্ডের ইটিএইচ এর অধ্যাপক ডেনিয়েল ক্রল।

গবেষকদলের মতে, গমের এ রোগটি সফলভাবে দমনের জন্য জাতীয়ভাবে একটি সমন্মিত গবেষণা উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এ রোগটি নতুন কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বলে গবেষকদের ধারনা। তাই অতিসত্তর কোয়ারেন্টাইন/ সঙ্গনিরোধ নিষেধাঙ্গা আরোপ করে আক্রান্ত এলাকাসমূহ থেকে গম বীজ, শষ্য, গাছ, চারা বা অন্যান্য অংশ দেশের অন্যত্র পরিবহন নিয়ন্ত্রন করা উচিত। বিশেষকরে দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগটির বিস্তার প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহন অত্যাবশ্যক। এজন্য সরকারীভাবে মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে সকলকে সতর্ক করা প্রয়োজন বলে গবেষকদল সুপারিশ করে।

মূলত দক্ষিন আমেরিকার গমের এ ভয়াবহ রোগটি অনাকাংখিতভাবে গত বছর বাংলাদেশে দেখা দেয়। বাংলাদেশ এশিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগের জীবানু বায়োলজিক্যাল সেফটি ৩ ক্যাটাগরিভুক্ত হওয়ায় এটি নিয়ে গবেষণায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কোন এলাকায় এ জীবানুটি ছড়িয়ে পড়লে তা মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোসহ সারাবিশ্ব আজ উদ্ভিগ্ন। এমতাবস্থায় জাতীয় খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমন্মিত উদ্দ্যোগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান খুজে বের করা অপরিহার্য।##

পছন্দের আরো পোস্ট