ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের অভিষেক

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা মানে আলোর জগতে প্রবেশ করা। আলো হচ্ছে জ্ঞান। জ্ঞান না থাকলে মানুষ আলোকিত হয় না। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপাড়া করা শুধু সনদ পাওয়ার জন্য নয়। তোমাদেরকে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সনদ অর্জন করতে হবে এবং সেই জ্ঞান যেন দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হয়।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এদেশের সাধারণ জনগণের অর্থে তোমরা লেখাপড়া করছো। জনগণের অর্থ থেকেই সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। তাই দেশ ও জাতির প্রতি তোমাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। তিনি বলেন, তোমরা সৌভাগ্যবান কারন তোমরা তথ্য-প্রযুক্তিযুগের শিক্ষার্থী। ৭০’ দশকের শিক্ষার্থীদের মতো তোমাদেরকে প্রাচীন পদ্ধতিতে লেখাপড়া করতে হয় না। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর কি করবে তা বুঝতে পারেনা। কারন বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভিন্ন জগত, এখানে স্বাধীন জীবন। তাই তোমাদেরকে সর্তকভাবে পথ চলতে হবে যেন কোন অসৎ পথ তোমাদের বিপদগামী করতে না পারে।

তিনি বলেন, আমি ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলনের একজন সৈনিক ছিলাম। দেশের জন্য আন্দোলন করেছি, পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিয়েছি এবং ভাল ফলাফলও করেছি। তোমাদেরকে লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশের জন্য কাজ করতে হবে। এজন্য তোমাদেরকে দেশ, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং বিশ্বকে জানতে হবে। তিনি বলেন, আমার প্রজন্মের গর্বের বিষয় হলো আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি। তোমরা নতুন প্রজন্মের সৈনিক। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদেরা বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের গাছ লাগিয়ে গেছেন, তোমাদেরকে তার পরিচর্যা করে একে আরও সমৃদ্ধ ও উন্নত করতে হবে। আমি মনে করি, নতুন প্রজন্মের দেশ, নিজের এবং পরিবারের জন্য উন্নয়ণের যে যুদ্ধ, সে যুদ্ধে তারা জয়ী হবে। তিনি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামকে কখনো খারাপ কাজে ব্যবহার হতে দেওয়া যাবে না। কেই ব্যবহার করলে তার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে হবে। ধর্মশালা হানাহানির জায়গা হতে পারেনা।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা এবং অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছাত্র-উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মহাঃ আনোয়ারুল হক।

Post MIddle

সভাপতির বক্তৃতায় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী সম্প্রতি লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আতিকুর রহমানের মৃত্যুকে দুঃখজনক ও অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আমরা একটি বিনা সূঁতার মালায় গেঁথে রাখতে চাই। কারও কোন সমস্যা হলে একে অপরের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাশক্তির মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজেকে রক্ষা করার জন্য শতধরণের উপায় শেখানো হবে, এখানে ধ্বংসের কোন শিক্ষা দেওয়া হবে না। তিনি নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা একেকজন একেক ধরনের ফুল। আমাদের এখানে বিচিত্র মত-পথ থাকবে কিন্তু এই বিশাল ক্যাম্পাসে নিবিড় সাহচার্যের মধ্যদিয়ে আমরা বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান নবীনদের তারকা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তোমরা তোমাদের যোগ্যতা প্রমাণ করে এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছ। বিশ্বমানের নাগরিক হয়ে গড়ে উঠার জন্য ২১শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ মানবশক্তি হিসেবে গড়ে উঠার এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে দমনের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান নেয়ার আহবান জানান।

অপর বিশেষ অতিথি ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র পরীক্ষা পাশের শিক্ষা দিতে চাই না, মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে এই আশারাখি। তিনি শিক্ষার্থীদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ারও আহবান জানান।

বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাঃ সাইদুর রহমান ও আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরমিন খাতুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ ডিন প্রফেসর ড. মোঃ শামছুল আলম, আই আই ই আর এর পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাঃ মেহের আলী, বিভাগীয় জ্যেষ্ঠ সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আসাদুজ্জামান, প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ মিজানুর রহমান, প্রক্টর প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবর রহমান ও পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিস¦রূপ ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে দুপুরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এদিকে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান ক্যাম্পাসে পৌঁছার পর প্রশাসন ভবন চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর ভাইস-চ্যান্সেলরের কার্যালয়ে অবস্থানকালে সেখানে বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল আহসান চৌধুরী তাঁর নিজের লেখা “ভাষা-আন্দোলনের দলিল ও অন্যান্য” বইসহ বেশ কয়েকটি বই প্রফেসর আবদুল মান্নানকে উপহার দেন। এছাড়াও আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের প্রফেসর ড. শাজাহান মন্ডল ও প্রফেসর ড. রেবা মন্ডল তাঁদের লেখা “মানবাধিকার আইন” বইটি উপহার দেন। ##

পছন্দের আরো পোস্ট