মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ইবির “মুক্ত বাংলা”

‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়…?’ রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর “স্বাধীনতা” কবিতায় যথার্থই লিখেছেন। স্বাধীনচেতা মানুষ সর্বদা স্বাধীন থাকতে চায়। এ ধরার কোন প্রাণী পরাধীন থাকতে ভালবাসে না। স্বাধীন ভাবে চলাফেরা, অপার স্বাধীনতায় নিজের অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করতে, কাজ-কর্মসহ সব স্থানে নিজেকে স্বাধীনভাবে উপস্থাপন করতে সবাই চায়। সেই স্বাধীনতাটুকু অর্জন করতে অকালে নিভে যায় তাজা প্রাণ, হাজারো মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ছাড়াও কতকিছু হারাতে হয়। আমরা বাঙ্গালী জাতি।

দীর্ঘ ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের উপর নানা জুমুল নির্যাতন চালিয়েছে। পশ্চিম-পাকিস্তানীদের জুলুম-নিপীড়ন, নির্যাতনে বাংলার মানুষ অতিষ্ট হয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেমে স্বাধীনতা অর্জন করে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া হাজারও ঘটনাকে চির স্বরণীয় করে রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা স্মৃতি ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হল ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিব নগরে (বৈদ্ধনাথ তলা ভবের পাড়া) বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন।

Post MIddle

এ ইতিহাসকে স্বরণীয় করে রাখতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) তৈরি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য “মুক্ত বাংলা”। ক্যাম্পাস ভিত্তিক প্রথম মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য এটি। ১৯৯৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্মৃতি ভাস্কর্যটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক। ভাস্কর্যের স্থাপত্য ও নকশা শিল্পী তৈরি করেছেন প্রখ্যাত ভাস্কর রশীদ আহমেদ। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রবেশের পর হাতের ডানপাশে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের পূর্ব পাশে অবস্থিত।

ভাস্কর্যটি স্ব-গৌরবে সাতটি স্থম্ভের উপর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে একটি রাইফেল ধরা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে। সাতটি স্তম্ভের অর্থ হলো সাত সদস্য বিশিষ্ট মুজিবনগর মন্ত্রিসভার প্রতীক। স্তম্ভের উপর মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার একটি দৃঢ় মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে ধরা রাইফেল। প্রতিটি স্তম্ভ বিমূর্ত প্রসারিত হাতধরা-ধরি উল্লাসিত অবয়বে ইসলামী স্থাপত্য ভিত্তিক কারুকার্যে গঠিত। আর লাল রং দিয়ে বোঝানো হয়েছে চোখে লাল সূর্যের বিজয় প্রত্যাশা। পুরা কাঠামোটি সাতটি স্তম্ভ  সম্বলিত একটি অর্ধ-উদিয়মান সূর্য।

স্তম্ভের মূল মেঝে দিয়ে বোঝানো হয়েছে মুজিব নগরের সরকার গঠনের সনদ। মোজাইক নীল টাইলসের অর্থ হল শান্তি। উপর থেকে দ্বিতীয় ধাপে কালো রংয়ের পাথর বসানো এর অর্থ হল শোক দু:খ। উপর থেকে তৃতীয় ধাপে সাদা রং এর অর্থ হলো সন্ধি ও যোগাযোগ। বেদির উপর থেকে ৪র্থ ধাপ লাল সিরামিক বড় ইট দিয়ে তৈরি এর অর্থ আন্দোলন ও যুদ্ধ। সব থেকে নিচে দেখা যাবে বিতৃস্ত টাইলসে ইট বসানোর যার অর্থ হলো লাগাতার আন্দোলন।
ভাস্কর্যের পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হয়েছে তাই এর নামকরণ “মুক্ত বাংলা” করা হয়েছে। প্রতি বছর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বরণে বিজয় দিবসে এই “মুক্ত বাংলা”য় পুষ্প-স্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

পছন্দের আরো পোস্ট