এখন আর টাকার পিছু দৌড়াতে হয় না

ঢাকায় যখন ছিলাম তখন আমার পকেট ভর্তি টাকা ছিল না। তখনও পড়ালেখা শেষ করিনি। পড়ালেখা শেষ হলো। এবার চাকরী খোঁজার পালা। নিয়মিত এ্যাপ্লাই করছি। জব ইন্টারভু দিচ্ছি। কিন্তু সোনার হরিনের দেখা মিলছে না। এদিকে পকেটের টাকা শেষ হয়ে আসছে। মাস শেষ না হলে তো আর টাকা পাবো না। গুনে গুনে খরচ করি।

Post MIddle

যেখানে সবাই রিক্সায় চড়ে, আমি সেখানে পায়ে হেঁটে যাই। কখনও সখনও দরদাম করে রিক্সায় চড়ি। রিক্সার ভাড়া দেয়ার সামর্থ আমার নেই। তবুও চড়ি। মাঝে মাঝে টেম্পুর পিছনে দৌড়াতে ক্লান্তি লাগে। তাই একটু-আধটু রিক্সায় চড়ি। গন্তব্যে পৌছে এতোগুলো টাকা রিক্সা ভাড়া দিতে ভীষণ কষ্ট লাগে। প্রতিমাসের শুরুতে হাত খরচের টাকাটা হাত-পেতে নিতে এখন ভীষণ অস্বস্তি লাগে।

60401_10200770940857575_433757567_nসবুজ আমার বন্ধু, একসঙ্গে পড়াশুনা করেছি। খিলগায়ে বাসা। গতরাতে ওর ছোট্ট আদুরে বোনটার জন্মদিন ছিল। যেতে পারিনি। আসলে যাইনি। পকেটে টাকা নেই। জন্মদিনের গিফ্ট কেনার সামর্থ নেই। কিন্তু বললাম, দোস্ত ভীষণ মাথাব্যথা। সবুজ জানে হুটহাট আমার মাথাব্যথার ব্যারাম আছে। গতরাতে আমার মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু সবুজ বিশ্বাস করেছে। আমার মাথাব্যথা ছিল না, কিন্তু হৃদয়ের ব্যথাটি টনটন করছে। কারণ ছোট্ট ঐ একরত্তি মেয়েটিকে আমিও যে ভীষণ ভালবাসি। সামান্য কটা টাকার জন্য আমার ভালবাসা প্রকাশ করতে পারিনি। তবে কি অর্থকড়ির অভাবে ধীরে ধীরে মানুষের ভালবাসা মরে যায়?

11846522_10207123632950907_2952268982798543805_nআমার জীবনের পরের গল্প শুধুই ইতিহাস। ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছি। ধীরে ধীরে অর্থের অভাব দূর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এখন আমি আর অর্থের পিছু দৌড়াই না। আমাকে এখন আর টাকার পিছু দৌড়াতে হয় না। কারণ আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেছি।

এখন আমার তেমন টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হয় না। কৈশর যৌবনের অভাবগ্রস্ত জীবনের কথা মনে পড়ে, টাকার অভাবে বাধ্য হয়ে দূর দূরান্তে পদবজ্রের কথা মনে পড়ে, চোট্ট একটি চকলেটের বাক্স হাতে ছোট্ট মৌটুসির জন্মদিনের কথা মনে পড়ে। এতো এতো অভাবের মধ্যেও আমি হতাশ হয়নি। স্বপ্ন আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। তাই আমি সবাইকে স্বপ্ন দেখতে বলি। স্বপ্ন দেখো, স্বপ্ন লালন করো, নিজের উপর আস্থা রেখে স্বপ্নকে আলিঙ্গন করো। একদিন দেখবে, স্বপ্ন তোমার দুয়ারে কড়া নাড়ছে।

পছন্দের আরো পোস্ট