শেষ হলো যুব ছায়া সংসদের চতুর্থ অধিবেশন
দেশের যুব সমাজের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাবের বিকাশ ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কৌশল হিসেবে আজ ১৬ অক্টোবর, রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ইয়ূথ এগেইনষ্ট হাঙ্গার, অক্সফ্যাম ও হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর আয়োজনে এবং সেভ দ্য চিলড্রেন সহ আরো ২৯টি বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন এবং যুব সংগঠনের সহ-আয়োজনে, ‘খাদ্য অধিকার অর্জনে কর্ম অধিকার এর নিশ্চয়তা চাই’ শীর্ষক উপপাদ্যকে সামনে রেখে ‘‘যুব ছায়া সংসদ” এর ৪র্থ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
একথা সর্বজনবিদিত যে ‘কর্মের অধিকার’ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। তবু দেশে বেকার অনেক। ‘চাকুরী’ নামের সোনার হরিণের পেছনে অবিরাম ছুটে চলেছে বহু মানুষ। তাদের অনেকেরই ভোগান্তির গল্প হৃদয় বিদারক! তবু কিছু একটা কাজ জুটে গেলেই সমস্যা শেষ হয় না। কর্মের পরিবেশ, পারিশ্রমিক, উৎসব ও অন্যান্য ভাতা, ইত্যাদি নানা বিষয়ে অনেক কথা বলার আছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের সমস্যা আরও বহুবিধ।
এর ফলে মানুষের খাদ্যের অধিকার, জীবনমানের বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মান উন্নয়নের সাংবিধানিক অধিকার ভূলুন্ঠিত হচ্ছে। ‘খাদ্য অধিকার’ জণগনের সাংবিধানিক অধিকার ঠিক তেমনিভাবে ‘কর্মের অধিকার’ও জণগনের সাংবিধানিক অধিকার। কর্মের অধিকারের সাথে মানুষের খাদ্য অধিকার ওতোপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের মহান সংবিধানের ধারা ১৫ (ক), ১৫(খ), ১৯, ২০, ২৯ (ক) অনুযায়ী নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন, জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন, সুযোগের সমতা, ইত্যাদি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। বিধায়, যুব ছায়া সংসদে সকলের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের সকল কর্মক্ষম নাগরিকদের যোগ্যতানুসারে কাজ পাবার অধিকার তথা ‘কর্ম অধিকার’ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কর্ম অধিকার নিশ্চিতকরণের পথে বাধাসমূহ অপসারণ করার দাবী ব্যক্ত করা হয়।
আয়োজিত যুব ছায়া সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ অফিস এর সাবেক কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ও কৃষি বিজ্ঞানী ড. জয়নুল আবেদীন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক খাদ্য মন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ এবং কৃষি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, প্রধান তথ্য কমিশনার, তথ্য কমিশন প্রফেসর ডঃ গোলাম রহমান; রাইট টু ফুড বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী, সেভ দ্য চিলড্রেন এর সিনিয়র ম্যানেজর- ডিআরআর এন্ড সিসিএ সৈয়দ মতিউল আহসান।
এছাড়াও আরও বরেণ্য ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সংগঠনের সম্মানিত প্রতিনিধি উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মহান জাতীয় সংসদ এর আদলে অনুষ্ঠিতব্য ‘যুব ছায়া সংসদ’ এর ৩য় অধিবেশনটিতে দেশের ৩০০ নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে ৩০০ জন যুবক (২৫ বছরের কম বয়সী) অংশ নিয়েছে। অনুষ্ঠিত ‘যুব ছায়া সংসদ’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে কর্ম অধিকার নিশ্চিতকরণের পথে বিরাজমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা এবং সরকারে নীতি নির্ধারনী মহলের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এ বিষয়ে যুব ছায়া সংসদের ২২ জন সদস্য আলোচনায় অংশ নেন এবং নানাবিধ প্রস্তাবনা ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
যুব ছায়া সংসদে স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ও ইয়ূথ এগেইনস্ট হাঙ্গার এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম কাফি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিশাত বিনতে রায়হান, বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সেন্ট জোসেফ কলেজের রাইসুল মিল্লাত শাফকাত, শ্রম ও কর্ম-সংস্থান মন্ত্রী হিসেবে মিলিটারি ইনস্টিটিউট এর শাহরিমা জান্নাত, খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেণজীর আহমেদ এবং প্রস্তাবক হিসেবে মিলিটারি ইনস্টিটিউট এর এবসানা সারিয়া দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, ‘খাদ্য অধিকার’ আদায়ের দাবীতে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ প্রথম, ১৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে দ্বিতীয় এবং ১৬মার্চ ২০১৬ তারিখে যুব ছায়া সংসদ এর ৩য় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত যুব ছায়া সংসদ অধিবেশন সমূহের মাধ্যমে সরকারের কাছে অবিলম্বে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং কর্ম অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য দাবী জানানো হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ৪র্থ যুব ছায়া সংসদ খাদ্য অধিকার অর্জনে ‘কর্মের অধিকার’ নিশ্চিতকরণের পথে বিরাজমান বাধাসমূহ অপসারণের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছে।
এছাড়াও ‘যুব ছায়া সংসদ’ আশা করছে আয়োজিত ইয়ূথ পার্লামেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যুবরা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংষ্কৃতির প্রতি আস্থাশীল হবে। তারা খাদ্য অধিকারের এবং কর্মের অধিকারের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো গভীরভাবে অনুধাবন করবে এবং কর্ম অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের কাছে আইন প্রণয়নের দাবী জানানো ছাড়াও এই বিষয়ে নিজেদের কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন হবে। এর মাধ্যমে খাদ্য অধিকারের মত মানুষের অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো নিয়েও পর্যায়ক্রমে দেশের যুব সমাজ তাদের কন্ঠ উচ্চকিত করবে, হাত উঁচিয়ে দাবী জানাবে এবং দেশের ভবিষ্যত নেতৃত্ব হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে বলে উদ্যোক্তারা প্রত্যাশা করেন।