ঈদে ঘুরে আসুন মিনি কক্সবাজার

বাংলাদেশের বৃহত্তম বিলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হালতি বিল, যা বর্তমানে ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে পরিচিত। হালতিকে দেশের সবচেয়ে গভীর বিল বলা হয়। প্রায় ১২ মিটার গভীর এই বিলে সারা বছরই পানি থাকে। বর্ষায় পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি। ৩টি জেলা জুড়ে এর বিস্তৃতি। নাটোর, নওগাঁ ও রাজশাহী জেলার বিস্তৃত অংশ জুড়ে যে জলভূমি, বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে দেখা যায় সেটাই বিখ্যাত হালতি বিল। শুকনা মৌসুমে এই বিলে জল থাকে না। তখন চাষাবাদ চলে বিলের জমিনে। তবে বর্ষায় কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে রূপের পসরা সাজিয়ে বসে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হালবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

৪০ হাজার একর জমি নিয়ে গঠিত এ বিল ছয়মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে আর বাকি ছয় মাস শুকনো অবস্থা বিরাজ করে। শুকনো মৌসুমে হালতি বিলে সবুজের সমারোহ আর বর্ষা মৌসুমে বন্যায় থৈ থৈ করে পানি। এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ওই মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে দূর-দুরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী প্রতি বছরই ভীড় জমায় হালতি বিলে।

received_633095773526772২০০৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটুল থেকে খাজুরা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সাব মারসেবল সড়ক নির্মাণ করে। এই সড়ক নির্মাণের পর থেকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের সূচনা হয়। অর্থাৎ হালতি বিলেই সমুদ্র সৈকতের আমেজ সৃষ্টি হয়। এই আমেজ নিতেই দূর-দুরান্ত থেকে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়।

কারণ, সময় ও অর্থের অভাবে অনেকের পক্ষে কক্সবাজারের হিমশীতল সমুদ্র সৈকত দেখতে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই অতি স্বল্প খরচে হালতি বিলেই সমুদ্র সৈকতের আমেজ নিতেই হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে।

বর্তমানে হালতি বিল এখন পর্যটন এলাকা হিসাবেই পরিচিতি লাভ করেছে। রাস্তার দু’ধারে থৈ থৈ পানি, মাঝে পিচ ঢালা পথ। পথটি যেন পানিতে ভাসছে। পথের দু’ধারে সবুজ লতাপাতার সমাহার। দুরে ছোট ছোট গ্রামগুলো দেখতে অনেকটা দ্বীপের মত। আর এই রাস্তাটি বিলের মাঝের গ্রামগুলোর মধ্যে গড়ে তুলেছে সেতু বন্ধন। এখানে দাঁড়িয়ে বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস, দোলায়িত ঢেউ, শেষ বিকেলের সুর্যাস্ত দেখতে অপূর্ব লাগে।

এসবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিনোদন স্পট। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। সহজেই নৌ ভ্রমন আর ডুবা সড়কের ওপর পায়ে হেটে আনন্দ উপভোগ করছে দর্শনার্থীরা। শুধু কি তাই স্বপ্নের সাধটুকু মেটাতে নৌকায় চড়ে বিলের এপার থেকে ওপাড় এবং ওপাড় থেকে এপারে আসছে হরহামেশায় করছে আনন্দ উল্লাস।

Post MIddle

বিলে বেড়ানোর জন্য স্থানীয় নৌকা পাওয়া যাবে ভাড়ায়। সারাদিনের জন্য ভালো মানের একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা। এছাড়া ইঞ্জিন নৌকা মিলবে ১ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়।

এছাড়া ব্যাক্তি মালিকানায় বাড়তি যোগ হয়েছে স্পিড বোট। হালতি বিলে পাটুল থেকে খোলাবাড়িয়া অথবা হালতি ও দিঘিরপাড় গ্রামে যেতে স্পিড বোটে জন প্রতি ভাড়া নিচ্ছে মাত্র ৫০ টাকা। প্রতি বোটে ১০ জন করে মানুষ এক সঙ্গে ঊঠতে পারে।

অপরদিকে শহরের কর্মব্যস্ত মানুষ হালতি বিলের অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে কাজের অবসর সময়কে বেছে নিচ্ছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে তারাও বেড়িয়ে পড়ছেন। এই পরিবেশ শহর আর গ্রামকে করেছে একাকার।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তান জানান, পর্যটকদের প্রয়োজনে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় গণশৌচাগার নির্মাণ ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঈদে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট