পথ শিশুদের পাশে থাকতে চায় তন্বী

Tonni‘ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা প্রকৃত স্বপ্ন নয়; এটা মৃত স্বপ্ন। বরং যা বাস্তবায়ন করার জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে সেটাই প্রকৃত স্বপ্ন। প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন অনেক স্বপ্ন থাকে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন দেখি এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।’

কথাগুলো বলছিলো দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সৈয়দা নূরজাহান তন্বী। নরসিংদী জেলার শিবপুুর থানার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৯৫ সালের ৮ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। পাঁচ বোনের মধ্যে সে চতুর্থ হলেও শান্ত ও চাপা স্বভাবের কারণে পরিবারের সবার কাছেই তার আদর যেন একটু বেশিই ছিল।

লেখাপড়া শুরু হয় শিবপুর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকের চৌকাঠ পার হয় যথাক্রমে শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস হাই স্কুল ও শিবপুর মডেল কলেজ থেকে। তারপর নিজের স্বপ্ন পূরনের ইচ্ছা ও বাবার আগ্রহের মিশেলেই তন্বী ভর্তি হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।

‘বাবা আমাকে সবসময় সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছেন। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। রাতে বাসায় এসে সারাদিনের ঘটনা বলতেন। রাস্তার পথশিশুদের গল্প শুনাতেন। তখন খুব ছোট হলেও পথশিশুদের অবস্থা শুনে আমার খুব খারাপ লাগতো। বাবার বর্ণনামতে ভাবতাম, আমি যেখানে প্রতিদিন আদর ও আরামে থাকি সেখানে আমার বয়সী কেউ কিভাবে রাস্তার পাশে ও বস্তিতে থাকে? তখন থেকেই এই পথকলিদের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছা মনের মধ্যে পোষণ করেছি।’- বলছিলো তন্বী।

Post MIddle

পড়াশোনার পাশাপাশি উপস্থাপনা আর আবৃতি প্রতি আছে তার বিশেষ ঝোঁক। পাঁচ বছর বয়স থেকেই বড় বোনের সাথে আবৃতি ও গানের শিক্ষকের কাছে হাতেখড়ি। প্রথমে স্কুল ও পরে কলেজের বর্ষপূর্তিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা ও আবৃতি দিয়েই পথচলা। সবার প্রশংসায় উচ্ছসিত হয়ে সর্বশেষ যোগ দেন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের একমাত্র আবৃত্তি সংগঠন ‘অনুপ্রাস-কণ্ঠ চর্চা কেন্দ্রে’। ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বর্ষপূর্তি, র‌্যাগ ডে, বিশ^বিদ্যালয় দিবস, পহেলা বৈশাখ ও বিভাগীয় অনুষ্ঠানে ‘অনুপ্রাসে’র ব্যানারে কন্ঠযোদ্ধা হিসেবে তার উপস্থিতি অনুকরণীয় ও প্রশংসার দাবীদার। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির কার্যকরী পরিষদের অন্যতম সদস্য।

তার ভাষ্যমতে, ‘ভাললাগা থেকেই উপস্থাপনা আর আবৃতিতে অংশগ্রহণ। আবৃতিতে আমি আমার ভিতরের স্বত্তাকে বাহিরে প্রকাশ করি। যা আমাকে প্রশান্তি দেয়।’

তন্বীর পছন্দের পেশা শিক্ষকতা। তার কথায়, ‘শিক্ষকতার মাধ্যমে একজন সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আমাদের সমাজে এখন অনেক অনাচার-কদাচারই বর্তমান। এসব দূর করতে একজন শিক্ষক প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই করতে পারেন। তাই আমিও এর মাধ্যমে নিজেকে নিবেদিত করে দেশের জন্য কিছু করতে চাই।’

এরই সাথে তার ভাবনা হচ্ছে , ‘দেশে পথশিশু বা পথকলি বলে কেউ থাকবেনা। একজন সাধারণ শিশুর মতোই এসব শিশুরা তাদের মৌলিক অধিকার পাবে। তাদের জন্য সুন্দর পরিবেশ দরকার যেখানে তারা লেখাপড়া, খেলাধুলা সব করতে পারবে। নিজের যতটুকু সাধ্য আছে বাড়িয়ে দিতে চাই তাদের সাহায্যে। সুন্দর, স্বাভাবিকভাবে তারা বড় হবে। অন্যান্য শিশুদের মতো তারাও হবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট