প্যারিস রোডের ‘প্রহরী’

সবুজের প্রান্তরে আঁকা কল্পনার রাজ্যের ছায়াঘেরা পিচঢালা পথ। যার দু’ধারে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় অর্ধশত প্রহরী। সমগ্র পথের অনেক উচুঁতে সবুজের ছাউনি বানিয়ে রেখেছে প্রহরীরা। ফলে সূর্যের আলো কখনো ছাউনি ভেদ করে রাস্তায় নেমে আসে, কখনো বা পাতায় আটকে যায়। আবার রাতে রাস্তার দুপাশে ল্যাম্পপোস্টের আলোর ঝলকানিতে অতন্দ্র প্রহরীদের এ রাস্তায় তৈরি হয় চোখ জুড়ানো মনোরোম পরিবেশ।

ওরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের প্রহরী। পঞ্চাশটি বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার দুপাশে। আর হ্যা, যে প্যারিস রোডের কথা বলছি তার যে চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য তা এসকল প্রহরীদেরই কৃতিত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল থেকে কাজলা গেইট পর্যন্ত বিস্তৃত প্যারিস রোডের দুধারে ১৯৬৬ সাল থেকে মূর্তিমান দাঁড়িয়ে আছে এসকল কল্পিত প্রহরী নামক ‘গগণশিরীষ’ গাছ।

রাস্তার দুপাশে সুউচ্চ গাছগুলো অনেক উঁচুতে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে ব্যাকুল। ফল-ফুলহীন গাছগুলো এ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের পর সবুজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেমন চোখে পড়তে থাকে। তেমনি একটু সামনে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার মাজারের সামনে আসলেই বাম দিকে চোখে পড়ে নজর কাড়া এ প্যারিস রোডের সৌন্দর্য।

Post MIddle

ফ্রান্সের প্যারিসের রাস্তার মতো প্রশস্ত ও সৌন্দর্যমন্ডিত হওয়ায় এ রোডের নামকরণ করা হয় প্যারিস রোড। বিশ্ববিদ্যালর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে ক্যাম্পাসের কাজলা রোড থেকে শের-ই-বাংলা হল পর্যন্ত লাগানো হয়েছে এই গগণশিরীষ গাছ। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম শামসুল হক ফিলিপাইন থেকে এ গাছগুলো নিয়ে আসেন। তিনি গাছগুলো রোপণের দায়িত্ব দেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যানকে। তার হাত ধরেই লাগানো হয় গাছগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আলী ইউনুস হৃদয় জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে মুগ্ধ হয়েছিলাম প্যারিস রোডের সৌন্দর্য দেখে। তখন মনে হয়েছিলো এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বিশ্ববিদ্যালয়। তার সাথে ঐতিহ্যবাহী প্যারিস রোডের গগণশিরীষ গাছগুলো যেভাবে প্রহরীর মতোই দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার দুধারে তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। দুপাশের গাছগুলো একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকলেও মনে হয় তার শাখা-প্রশাখা অনেক উঁচুতে উঠে একে অপরে আলিঙ্গন করতে চায়।

তিনি আরো জানান, রাতে প্যারিস রোডের সোডিয়াম লাইটের আলোয় পথ চলতে কী যে প্রশান্তি তা শুধু উপলদ্ধির বিষয়, ব্যাখ্যা করা কঠিন। একটু ক্লান্তি চলে আসলেই চেষ্টা করি বন্ধুদের নিয়ে ঐ পথে ছুটে যেতে। ইচ্ছে করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে গগণশিরীষ গাছের প্রণয় লীলা দেখতে। আর মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে বৃষ্টিস্নাত প্যারিস রোডে ছুটে যেতে। যা শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই করেনি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে দিয়েছে বিমুগ্ধ প্রশান্তির নিঃশ্বাস।

ঐতিহ্যবাহী প্যারিস রোডের রূপ দেখে অভিভূত হয় সবাই। বর্ষণমুখর দিনে তরুণ-তরুণীরা ছুটে যায় প্যারিস রোডে। স্পর্শ করতে চায় অধরা সে সৌন্দর্য। তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে প্যারিস রোডের সৌন্দর্য হয়েছিলো কিছুটা মলিন। গত বছরের বৈশাখী ঝরে প্যারিস রোডের প্রহরীরা ‘বশ্যতা’ স্বীকার করে। উপড়ে পড়ে অনেক গাছ। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে আবার প্রাণ ফিরে এসেছে প্যারিস রোডের। প্রহরীরা দাঁড়িয়ে আছে এখনো। পথিকেরা প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নেয় নির্মল বাতাসে। জেগে ওঠে প্যারিস রোডের প্রহরীদের সাথে মুগ্ধ করা সজীবতায়।##

পছন্দের আরো পোস্ট