জাবির সবুজ ঘাসে ইফতার

ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই যেদিকে চোখ যায় চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। মনে হবে সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা এক টুকরো সবুজের দ্বীপ। শুধু প্রাকৃতিক লীলাভূমি নয়,সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবেও খ্যাতি আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখানে বারো মাসে তের পার্বনের মত চলে একের পর এক উৎসবাদি। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা থাকায় আচার-উৎসবে কখনো ভাটা পড়েনা। তবে দূর দিগন্তের পথে হেঁটে চলাপ থিকের নুয়ে পড়া শরীরে পথিমধ্যে বিশ্রাম নেওয়ার মত এখানেও বর্ষার মৌসুমে কিছুটা বিরতি চলে।

 

কিন্তু এবার সে সুযোগটিও নেই। বর্ষার মৌসুমে পবিত্র রমজান মাস থাকায় উৎসবে এতটুকুও ভাটা পড়েনি। ইফতারপার্টি ক্যাম্পাসে আড্ডার মূল উপলক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে দীর্ঘ ৪১ দিনের ছুটি শুরু হয়ে গেছে।ছুটি পেয়ে অনেকেই নাড়ির টানে ফিরে গেছেন স্বজনদের কাছে। তবে টিউশনি কিংবা পেশাগত কারণে যারা সে সুযোগটি পাননি মূলত সেসব শিক্ষার্থীরাই ইফতার আড্ডার প্রাণ ভোমরা।

 

আকাশে বজ্রের চোখ রাঙ্গানী, কাকভেজা বৃষ্টির ভয় উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইফতার আড্ডায় মেতে ওঠেন। পরিবার ছেড়ে আসা এসব শিক্ষার্থীরা পরিবারের সাথে ইফতারের অপূর্ণতা ঘোচাতে বন্ধুদের সাথে কেন্দ্রীয় খেলারমাঠ, টিএসসি, আবাসিকহল, টারজানপয়েন্ট, পরিবহন চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে একসাথে জমায়েত হয় ইফতার আড্ডায়। কখনো বিভাগের বন্ধুরা, কখনো সংগঠনের আয়োজনে আবার কখনো বন্ধুত্বের গন্ডি- পেরিয়ে সিনিয়র জুনিয়র একসাথে চলে এমন আয়োজন। ভূতাত্বিকবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী কে এম রিয়াদ বলছিলেন, ‘হলে একা একা ইফতার তেমন জমেনা। তাছাড়া পরিবার ছেড়ে এসেছি অনেক দিন হল। তাই ইফতারকে আনন্দঘন করতে বন্ধুদের সাথে একসাথে জমায়েত হওয়া।’

 

Post MIddle

দেশের দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্নধর্ম, বর্ণ, গোত্রের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসেন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপিঠে। ফলে শুধু সংস্কৃতির চর্চা কিংবা সৌন্দর্য নয়, ক্যাম্পাসের খ্যাতি আছে পারস্পারিক সম্প্রীতির জন্যেও। রমজান মাসে ইফতার যে শুধু মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নয়, এটা যে হয়ে উঠতে পারে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করার একটা মাধ্যম। এই বার্তা ছড়িয়ে ইফতার আড্ডা চলে সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ‘রোজা থাকিনা তাই বলে বন্ধুদের সাথে এমন মজার ইফতার আড্ডা তো মিস করা যায়না’ আদিত্য রাজ বংশী নামে এক শিক্ষার্থী ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলছিলেন।

 

শুধু বর্তমান শিক্ষার্থী  নয় পুরনো স্মৃতিতে একটুখানি ফিরে যেতে এমন আড্ডায় জমায়েত হতে চলে আসেন সাবেকশিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসে হাতের নাগালে সাধের এবং রকমারি সব ইফতার সামগ্রীর সরবরাহ থাকায় আড্ডা পায় নতুন মাত্রা। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের ডেইরি গেট, প্রান্তিকগেট ও বটতলায় মূলত ইফতার সামগ্রী বিক্রি হয়। তবে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই হলের দোকানগুলো। পেয়াজু, বেগুনী, ছোলা, জিলাপী ইত্যাদি হরেক রকমের ইফতার সামগ্রীর পসরা নিয়ে হাজির হন ক্রেতাদের সামনে। শেখ হাসিনা হলে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছিলেন দু’জন বিক্রেতা। কথা হল তাদের সাথে। কেমন বিক্রি হচ্ছে ভাই প্রশ্ন করতেই এদের একজন মুচকি হেসে বললেন, ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ায় খালারা (শিক্ষার্থী) চলে গেছে। তারপরও হয় আরকি।

 

ইফতারকালীন আড্ডা জমলেও অনেকেই ইফতারের সময় ব্যবহৃত প্যাকেট, কাগজ ও পানির বোতলসহ বিভিন্ন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলে রেখে চলে যান যা পরিবেশ দূষণকরে। তবে আমরা যদি এসব বিষয়ে একটু সচেতন হয়ে এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলি তবেই ইফতার আড্ডা পেতে পারে নতুন মাত্রা।##

পছন্দের আরো পোস্ট