বেরোবি সাংবাদিক সমিতির ইতিবৃত্ত

berobi jaউত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের ফসল দেশের অন্যতম উচ্চ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় নিযুক্ত রয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে নেই। ক্যাম্পাসে অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক মেধাবী তরুণ ক্ষুদে সাংবাদিকতার প্রয়াস ও প্রচেষ্টার স্বপ্নজাল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস), রংপুর এর উম্মেষ।

 

শুরুটা ২০১৪ সালের জুন মাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যুক্ত কয়েকজন বিচ্ছিন্ন সংবাদকর্মীর ভাবনা। এক সাথে হাতে হাত রেখে গণমাধ্যমের কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করতেই একটি সংগঠনের তাগিদ অনুভব থেকেই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় এই সাংবাদিক সমিতি। তবে সাংগঠনিকভাবে ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর একটি আহবায়ক কমিটির মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবিসাস)। সে থেকে অবধি নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার উন্নয়নে অন্যবদ্য ভূমিকা পালন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

 

একটি পুর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র অনুসারে পরিচালিত এই সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের একঝাঁক তরুণ গণমাধ্যমকর্মী নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রম দিয়ে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে আসছে এই সংগঠনটিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের পারস্পারিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ বৃদ্ধি এবং অত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার মহান ব্রত নিয়ে অকুতোভয়ে এগিয়ে চলা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন সাংবাদিক সমিতিতে বর্তমানে দেশের স্বনামধন্য প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া অন্তর্ভূক্ত প্রায় ৪০ টি পত্রিকার গণমাধ্যমকর্মী কর্মরত রয়েছে।

 

দেশের জাতীয় দৈনিক সংবাদ, দৈনিক সকালের খবর, আমাদের অর্থনীতি, ইংরেজি দৈনিক নিউএজ এবং রংপুর বিভাগীয় শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রংপুর চিত্র, দৈনিক বায়ান্নর আলো, দৈনিক দাবানল, দৈনিক যুগের আলো, দৈনিক প্রথম খবর, দৈনিক মায়াবাজার, দৈনিক নতুন স্বপ্ন, দৈনিক আখিরা সহ অন্যান্য শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক বর্তমানে এই ক্যাম্পাসে তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও দেশের প্রথম সারির জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ, বাংলামেইল, দ্য রিপোর্ট, শীর্ষ নিউজ, ক্যাম্পাসলাইভ, পিএনএস, এবিনিউজ, দৈনিক শিক্ষা, বিবার্তা ও ঢাকারনিউজ’ এর মত স্বনামধন্য একাধিক পত্রিকা এই সমিতিতে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

 

Post MIddle

অতি উৎসাহের সঙ্গে বলতে হয় যে খুব শীঘ্রই দেশের অন্যান্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দিতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন এবং নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

 

সর্বোপরি আপনাদের সকলের সহযোগিতা পেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি সময়ের মানদন্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হিসেবে তাদের পথ চলা নিশ্চিত করতে পারবে বলে প্রত্যাশা রাখে। একই সাথে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণমাধ্যমের স্বার্থ সংরক্ষণে এই সাংবাদিক সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে স্বীয় অঙ্গিকারে নিজেকে আবদ্ধ করে।

 

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা ও এর গ্রহন যোগ্যতা: সম্প্রতি দৈনিক কালের কন্ঠে উপ-সম্পাদকীয় পাতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবুসালেহ সেকেন্দার ‘সম্ভাবনাময় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সংকট’ নামের একটি কলামে বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা হচ্ছে সাংবাদিকতার ‘আঁতুড়ঘর’। সাংবাদিকতার কোনো ধরনের জ্ঞান না থাকা সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকতার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা থেকেই নিজেকে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় নিযুক্ত করেন। যদিও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা বাস্তবিকপক্ষে পূর্ণকালীন পেশা। ক্যাম্পাসে ঘটনাগুলো সময় মেপে ঘটে না। ফলে ২৪ ঘণ্টাই ক্যাম্পাস সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে ক্যাম্পাসে পূর্ণ নজরদারি করতে হয়। সে বিবেচনায় ক্যাম্পাস সাংবাদিককে দক্ষ গোয়েন্দাও বলা যায়।’ এই ভদ্রলোকের কথা অনুসারেই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা স্পষ্ট হলেও রংপুরে অঞ্চল তথা নবীন হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এর গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু?

 

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্য ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় পথে পথে যে শত বাধা রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটি উম্মুক্ত খেলার মাঠ হলেও নতুন হিসেবে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উল্টো। বলা যায়, এখনও এই সংস্কৃতির মজবুত ভিত্তি রচনা হয়নি। যার ফলে কোন বিষয়ে সত্য ঘটনার আলোকে সংবাদ প্রচার করা সত্বেও সংশ্লিষ্টদের মনমতো না হলে এখানকার গণমাধ্যমকর্মীসহ পুরো সাংবাদিক সমিতিকে কোন একটি গোষ্ঠী, ব্যক্তি অথবা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়। এমনকি হুমকি ও লাঞ্ছিতের ঘটনাও ঘটছে হরমায়েশেই। কালের কন্ঠের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছরে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব এর সঙ্গে যোগ করলে তা শতাধিক হবে।’ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানের সাথে মনে হয় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাটাও যোগ করা উচিত। সাংবাদিক সমিতি শুরু থেকে প্রায় এই দু’বছরে হুমকি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের কারণে সমিতির দু’জন প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সাংবাদিকতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। তবে হতাশা নয়, গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রসংগঠনগুলো আন্তরিক হলে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা সম্ভাবনাময় পেশা হিসেবে বিকশিত হতে পারবে বলে প্রত্যাশা রাখি।#

 

তপন কুমার রায়,
সহ-সভাপতি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস), রংপুর।
ই-মেইল: tapanbrur@gmail.com

পছন্দের আরো পোস্ট