“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও শিক্ষক সমাজ”

6d4f2199-efd6-4881-822f-aacc6a36b032আধুনিক গ্লোবালাইজেশনের যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যার মধ্যে ফেসবুকে শিক্ষকদের অগ্রায়ন সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আমাদের অনেক কিছু জানার ও শেখার সুযোগ আছে বৈকি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের চাঞ্চল্যকর ঘটনা বর্তমানে ফেসবুকেই সবার আগে পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তা হয়তো ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবাগও কখনও কল্পনা করেননি । বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল আগের তুলনায় অনেক বেশি। বছর পাঁচেক আগে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা যা ছিল বর্তমানে তা কয়েক গুন বেড়েছে।

 

 

আমরা শিক্ষকরা ফেসবুকে শিক্ষা বিষয়ক অনেক তথ্য পাচ্ছি। এক কথায় ফেসবুককে বর্তমানে জ্ঞানের ভাণ্ডার বললে ভুল হবে না। সকল স্তরের শিক্ষকরা প্রতিদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরছেন।

প্রযুক্তিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচাক দুটো দিক আছে। সামাজিক মাধ্যমে অসামাজিকতার ছোঁয়াও লক্ষনীয়। যা নেতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচ্য। এর ফলে আমরা কিছু কিছু নতুন ফেসবুক ব্যবহারকারী শিক্ষকরা কিছুটা ব্যতিক্রমও ঘটাচ্ছি। স্ট্যাটাস দেয়ার ক্ষেত্রে কোনকিছুর বাচবিচার না করেই যেকোনো ছবি,অনুভুতি, ঘটনা এই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছি। এর মধ্যে ঘটছে অসংখ্য বানানের ভুল।

 

 

ফেসবুককে রোজনামচা হিসাবে ব্যবহার করা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু একজন শিক্ষক (মানুষ)এর সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করা থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনা ফেসবুক স্ট্যাটাস এ দেয়াটা কতটুকু যুক্তিসম্পন্ন  হবে? আমি অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী শিক্ষকের মধ্যে দুইজনের উদাহরণ দিব। একজন শিক্ষক পড়ে গিয়ে পায়ে (ঠ্যাঙ্গে) চোট পেয়েছেন। ডাক্তার তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ অবস্থায় পুরো ঠ্যাঙ্গের ছবি তুলে তার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ছেন। আরেকজন শিক্ষক সেলুনে দাড়ি শেভ করছেন। এই অবস্থায় সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। কখনো কোন অনুষ্ঠানে গেলে কারও গা ঘেঁষে সেলফি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দিচ্ছেন। মিনিট তিরিশের পর তিনি খুশিতে গদগদ হয়ে বলছেন, এই সেলফিতে অলরেডি একশ’র বেশি লাইক পড়েছে। আমার কথা অনেকের কাছেই অযৌক্তিক মনে হতে পারে। একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুন, এগুলো কি আমাদের ব্যাক্তিত্ত্বকে ছোট করে না ! আমাদের শিক্ষাদান যদি অনুকরনীয় হয়, তাহলে আমাদের ব্যক্তিত্বও শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরণীয়। ব্যক্তি এবং ব্যক্তিত্ব দুটো আলাদা ব্যাপার। ব্যাক্তি সবাই হতে পারে কিন্তু ব্যক্তিত্ববান সবাই হয় না।

 

 

বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও অনেক। সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন শিক্ষকের বন্ধু তালিকায় স্বাভাবিকভাবেই অনেক শিক্ষার্থী থাকতে পারে। তাই শিক্ষকরা যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের স্ট্যাটাস নষ্ট করে, বানান ভুল করে, অসমঞ্জস্য ছবি প্রকাশ করে তবে ঐ শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর কি ধারনা জন্মাবে?

 

Post MIddle

আমাদের শিক্ষকদের মনেরাখা উচিত  আমারা সব সময়ের জন্যই শিক্ষক, সেটা অনলাইনে হোক অথবা অফলাইনে হোক। আরও মনে রাখা প্রয়োজন শিক্ষার্থী সব জায়গা থেকেই আমাদের কাছ থেকে শিখতে পারে। আমরা শিক্ষক শুধু ক্লাসরুমেই না, সারাজীবন সব জায়গাতেই শিক্ষক। ফেসবুকে অনেক অপ্রীতিকর পেজ আছে । এ সমস্ত পেজে শিক্ষকরা অসাবধানতা বশতঃ অথবা অজ্ঞতার কারনে অ্যাড হয়ে যেতে পারেন। প্রযুক্তির ভালো খারাপ দুটো দিকই আছে। খারাপকে বর্জন করলেই সব ঠিক থাকবে। সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে অপ্রীতিকর কিছু থেকে এড়িয়ে যাবার জন্য প্রাইভেসি সেটিংস্‌ অপশন আছে। সেখান থেকে আপনি নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন। এছাড়াও অনেক অপশন আছে যা ফেসবুক ব্যবহারকারী শিক্ষকদের জানা আবশ্যক। শিক্ষক মানেই যে শুধু জ্ঞান দিতে হবে, জ্ঞান অর্জন করা যাবে না, এ কথাটি প্রচলিত ও ব্যাবহারিক কোন অর্থেই সত্য না।

 

 

প্রযুক্তির যুগে একজন মানুষের রুচিবোধ, ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে গেলে তার সাথে না মিশেই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখলেই জানার কিছু বাদ থাকে না। জ্ঞান অর্জন না করলে বিতরণ করবেন কিভাবে? শেখার কোন শেষ নেই। শিক্ষক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আসুন আমরা সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার সৎব্যবহার করি এবং ব্যাবহারের পূর্বে নিয়মগুলো ভালভাবে জেনে নেই। ফেসবুক সম্পর্কে যিনি দক্ষ তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী অথবা অন্য কোন পেশাজীবী হন, আসুন তার সাহায্য নেই।

 

শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন করানো হয় বিভিন্ন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে অথবা ইন্সিটিউটে। এ সমস্ত প্রশিক্ষণের সাথে যদি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাবহারের উপর অন্তত্বঃ অল্প সময়ের জন্য হলেও আলোচনা করা হয়, তাহলে আমার মনেহয় কাজটা শিক্ষক সমাজের জন্য অনেক ফলপ্রসূ হবে। এ ব্যাপারে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী মহোদয় আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। একজন শিক্ষক হিসেবে আরেকজন শিক্ষকের ভুলত্রুটি নিজের ঘাড়েও কিছুটা পড়ে বৈকি! তাই আসুন না, আমরা সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারে একটু সচেতন হই, আমাদের ব্যক্তিত্বকে খর্ব না করি!

 

 

লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান শামীম, প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, ভেড়ামারা কলেজ, কুষ্টিয়া।

 

লেখাপড়া২৪/এমটি/১৬০

পছন্দের আরো পোস্ট