ফুলের নগরী জাবি ক্যাম্পাস

ছবি ৩‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বর্ষায়’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ে প্রবেশ করলেই এই গানের কথা মনে পড়ে যায়। বর্ষাকে সামনে রেখে গ্রীষ্মের এ খরতাপে সূর্যের সবটুকু উত্তাপ কেড়ে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস ফুলের নগরীতে সেজেঁছে মন মাতানো রূপে। গাছে গাছে হরেক রকমের বাহারি ফুল পসরা সাজিঁয়ে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বার ডেইরি গেট দিয়ে পা রাখলেই মনে হবে এ যেন ফুলের এক স্বর্গরাজ্য। রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর দিকে তাকালেই মন ভরে যায়। প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে, লাখে লাখে, স্তবকে স্তবকে, ফুল ফুটে আছে। কোনটা গোলাপী, কোনটা ফুল শ্বেত, কোনটা যেন রক্তমাখা, আবার কোনটা যেন হলুদ।

 

এ ফুলের মাঝেই কোথাও মৌমাছি, কোথাও ভ্রমর বাসা বেধেঁছে। আবার সেখানে কোকিল মন মাতানো ‘কুহু কুহু’ সুর ধরেছে যেন কিছু বলে যাচ্ছে। বাতাসের সঙ্গে মন মাতানো ফুলের ঢেউ এবং সুরভীতে ছন্দময় হয়ে ওঠেছে জাবির প্রাকৃতিক পরিবেশ। তার মাঝে আবার বৃক্ষের সবুজ রঙের সমারহ। উঁচু-নিচু পিচঠালা রাস্তা। কোথাও সমতল ভূমি। সবুজ গাছের সারি । যেন সবুজ তারুণ্যে জেগে উঠা জাবির প্রতিটি অঙ্গন। যেন খুজেঁ পেয়েছে মন হারানোর দিন। প্রাণ জুড়ানো এ দৃশ্য দেখে যে কেউ থমকে দাড়াতে বাধ্য হয়।

 

গ্রীষ্মের আগমনে যে প্রকৃতির সাজ তা যেন এই ক্যাম্পাসের প্রকৃতির মাঝেই খেলা করে। সৃষ্টি যেন তার সবটুকু দিয়ে প্রকৃতিকে সাজিঁয়ে তুলেছে। গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, রাধাচূড়া, ক্যাসিয়া রেনিজারাসহ লেকে ফুটে থাকা লাল রক্তমাখা ফুটন্ত শাপলা। বাহারি এ ফুলের সৌন্দর্যে আর মিষ্টি সুবাস লালন করছে এখন লাল মৃত্তিকার প্রকৃতিতে।

 

প্রাকৃতিক জলাধার, মৌসুমী ফল আম-কাঠাল, পাখি, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহীদদের স্মৃতির লাল সিরামিক ইটে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অপূর্ব এক নির্মাণশৈলী ও নান্দনিক স্থাপত্য মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ।এ ক্যাম্পাসে যেন প্রকৃতি তার সবটুকু সৌন্দর্যই উজাড় করে দিয়েছে। গাছের জড়া- জীর্ণতা ভেঙ্গে নতুন কুড়িতে ছেয়ে গেছে গাছগুলো। জীবননান্দ দাশ হয়তো প্রকৃতির এ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই রচনা করেছেন তার অমর কীর্তি ‘রূপসি বাংলা’ কাব্য।

 

গ্রীষ্মের অতি পরিচিত কৃষ্ণচূড়া ফুল রক্ত রাঙা রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ফুটে আছে এ ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন থেকে শুরু করে বিশমাইল গেট পর্যন্ত প্রতিটি রাস্তায় অসংখ্য গাছে এ ফুলের রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস। এবং পথের দু’পাশে যেন লাল,হলুদ ও গোলাপি গালিচা বিছানো।  গন্ধহীন এ ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। নমনীয় কোমল, মাঝে লম্বা পরাগ। ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখে যে কেউ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এ গাছের পাতা ক্ষুদ্র, যৌগিক ও চিরুনির মতো সাজাঁনো।

 

Post MIddle

এই সময় ‘ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুল’ লালন করছে অন্য রকম সৌন্দর্য। এ ফুলে ছেয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষরাজি। শ্বেতশুভ্র ভিনদেশি এ প্রজাতির ফুলগাছের আদি নিবাস জাপান। এর স্নিগ্ধ রূপ ও রং বৈচিত্র্য থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া কঠিন। ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া’। মধ্যম আকারের এ বৃক্ষের উচ্চতা সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিটার লম্বা। চিকন ডালগুলো ঝুলে থাকে। রোপণের চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বৃক্ষে নয়নাভিরাম শ্বেতশুভ্র গোলাপি ফুল আসে।

 

এই বৃক্ষ আমাদের সহজাত বৃক্ষ নয় বলে এটি তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত। বর্ষা ছাড়া মোটামুটি বছরের বেশির ভাগ সময়ই বৃক্ষটি পত্রহীন অবস্থায় থাকে। আর পত্রহীন এ বৃক্ষটিতে ফেব্রুয়ারির শেষদিক থেকে শুরু করে এপ্রিল, মে মাস পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ফুলের দেখা মেলে। এরপর ক্রমে নতুন পাতা গজায় আর গোলাপি ফুলগুলো ক্রমে সাদা হতে থাকে। ক্যাসিয়া রেনিজেরা বাংলাদেশে খুব স্বল্প পরিচিত এবং খুব সুন্দর ফুল হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

 

এ সময় জাবির সৌন্দর্যেও অন্য দূশ্য হচ্ছে লেকগুলোর ফুটন্ত শাপলা। এই গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন গ্রাম-গঞ্জের খাল-বিল, নদী-নালা যখন শুকিয়ে চৌচির, ঠিক সেই মুহুর্তে জাবির লেকগুলোর কোল ভরে উঠেছে লাল শাপলা ফুলের আগমনে। অন্য একটি লেকে মনোমুদ্ধ কর পদ্মফুল যেন দৃষ্টি কেরে নেয়। ক্যাম্পাসে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক রয়েছে। তার মধ্যে এখন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এবং জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেকে লাল শাপলা ফুল ফুটেছে। এ রক্তিম ফুল জাবির সৌন্দর্যকে যেন আরো কয়েকগুনে বাড়িয়ে তুলেছে।

 

ফুলের প্রতি সব মানুষের ভালবাসা চিরকালের। দিগন্তের চারপাশ সাড়া জাগিয়ে ফুলগুলো সারাক্ষণ দোল খায় পুরো ক্যাম্পাসে। সকালের সূর্যের আলোতে ফুলগুলোর ঝিকঝিক সৌন্দর্য দেখতে মন চান। ফুলের এ দৃষ্টি দেখতে যাদের মন চায় তারা ঘুরে যেতে পারেন এ অপরূপ জাবির আঙ্গিনা থেকে।

 

যারা প্রকৃতি প্রেমী তারা এক বার হলেও যান্ত্রিক জীবনের বাইরে ঘুরে যেতে পারেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসের এক অনাবিল আনন্দ-উপভোগের স্বর্গরাজ্য থেকে। প্রকৃতি তার মনোমুদ্ধ কর রূপ, সুবাস দিয়ে প্রবলভাবে মোহিত করে রেখেছে এ স্থানটিকে।#

 

 

আরএইচ

 

পছন্দের আরো পোস্ট