দেশের প্রথম নারী মেডিকেল ফিজিসিস্ট হাসিন অনুপমা

000বলছি ড. হাসিন অনুপমা আজহারীর কথা। জন্ম চট্টগ্রামে, নার্সারী থেকেই সেরা তিন জনের মধ্যে রেজাল্ট। ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত সেলমেরিস ইংলিশ মিডিয়াম হাই স্কুলে লেখাপড়া। মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন হলি ক্রস স্কুল এন্ড কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে দেখতে থাকেন নতুন স্বপ্ন। আর যদি হয় স্বপ্নটি ডাক্তার হওয়ার তাহলে তো কোন কথাই নেই। ডাক্তার হওয়ার জন্য শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজে অপেক্ষমাণ থাকায় চিটাগাং মেডিকেল কলেজে ডাক্তারীতে ভর্তি হন অনুপমা। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তার পরিবার ঢাকায় বদলি হলে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ এ ভর্তি হতে হয় তাকে। পূরণ হয় তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নও। রেজাল্ট ভাল থাকায় মেডিকেল পড়াশুনা শেষ হতেই বাংলাদেশ মেডিকেলে মেডিসিন, গাইনি বিভাগে রেজিস্ট্রার হওয়াসহ বিভিন্ন প্রস্তাব আসে। কিন্তু চাকরিগুলো আকৃষ্ট করতে না পারায় চাকরিগুলো করা হয় না। পরে অবশ্য ইবনে সিনা ও সেন্ট্রাল হাসপাতালে অনেকদিন কাজ করেন ড. আজহারী।

 

ইচ্ছা ছিল ভিন্নতর বিষয়ে  কিছু করার।কে জানত সেই ইচ্ছেটিই তাকে পরবর্তী সময়ে  বাংলাদেশের প্রথম নারী মেডিকেল ফিজিসিস্ট হওয়ার সম্মান এনে দেবে। বায়োকেমিস্ট্রির এক আত্নীয়ের মুখে শুনেই মেডিকেল ফিজিক্স সম্পর্কে সৃষ্টি হয় অতীব কৌতুহল। গণস্বাস্থ নগর হাসপাতালে মেডিকেল ফিজিক্স এর বিজ্ঞাপন দেখে নতুন স্বপ্ন পূরণের হাতছানি  ডাক দেয় তাকে। মেডিকেল ফিজিক্স সম্পর্কে ভালভাবে জানা এবং বোঝার পর তিনি উপলব্দি করতে পারেন যে বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন এবং ক্যান্সার ও রেডিওথেরাপিতে অত্যন্ত জরুরী। পরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগাযোগ করে ভর্তি হয়ে যান কেননা একমাত্র গণ বিশ্ববিদ্যালয়েই যে মেডিকেল ফিজিক্স বিভাগ রয়েছে।এক সময় দেখতে দেখতেই শেষ হয় নতুন করে শুরু করা পড়াশুনা, মেডিকেল ফিজিক্স নিয়ে এম.এস.সি এবং পি.এইচ.ডি। মেডিকেল ফিজিক্স আর ডাক্তারীর মধ্যে ব্যাপক ভিন্নতা খুজে পান ডঃ আজহারী। আর তাইতো সে মেডিকেল ফিজিক্স সম্পর্কে সকলকে জানাতেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়েই থেকে যান তিনি।বর্তমানে তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভৌত ও গাণিতিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন হিসেবে কর্মরত আছেন।

 

মেডিকেল ফিজিক্স  নিয়ে মাত্র দুজন নারী বাংলাদেশ থেকে পি.এইচ.ডি. করেন তার পূর্বে । তবে তারা এম.এস.সি. করেন নি। পূর্ণাঙ্গ দিক থেকে ডঃ অনুপমা আজহারীই দেশের প্রথম নারী মেডিকেল ফিজিসিস্ট ।

 

Post MIddle

ড. হাসিন অনুপমা আজহারী মনে করেন, নারীরা পূর্বের তুলনায় বেশ কর্মক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে তবে তা যথেষ্ট না। নারী পুরুষ মিলেই ঘর এবং কর্মক্ষেত্র সামলাতে হবে বলে নারীদের অধীক উৎসাহের মাধ্যমে আহ্বান করেন ঘর থেকে বাইরে আসতে। আর পুরুষদেরও সাহায্য করতে হবে নারীদের নয়ত নারীরা এগুতে পারবে না। সর্বপ্রথমে নারীদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে,সংসারও করতে হবে আবার কাজ ও করতে হবে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই নারীর অগ্রগতির জন্য বিভিন্ন স্কলারশীপ দিচ্ছে নারীরা যেন শীর্ষ পর্যায়ে পৌছাতে পারে।

 

এক সময় মেডিকেল ফিজিক্স বাংলাদেশে একেবারেই ছিল না। প্রথম ১৯৯০ সাল থেকেই বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. গোলাম আবু জাকারিয়া এবং জার্মানের একটি দল মেডিকেল ফিজিক্স চালু করার চেষ্টা করেন।পরবর্তীতে ২০০০ সনে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তা চালু করা হয় । বর্তমানে মাত্র অল্প কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই এই বিভাগ রয়েছে যার বেশির ভাগই শুধুমাত্র উচ্চতর ডিগ্রি এম.এস.সি।দেশের প্রয়জনে মেডিকেল ফিজিক্সের প্রয়জনীয়তা দেখা দিচ্ছে। তাই সরকারের উচিত সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেডিকেল ফিজিক্স চালু করা।

 

ব্যক্তিগত জীবনে এখনো একা  ড. হাসিন অনুপমা আজহারীর বেশিরভাগ সময়ই সামাজিক কাজে কাটে। তবে পারিবারিক সাহায্য না পেলে এতদুর আসা হত না বলে পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মহিলা বিজ্ঞান সমিতির সহ-সভাপতি, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স সমিতি এবং এশিয়ান ফেডারেশন অফ মেডিকেল ফিজিক্স এর আজিবন সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।#

 

আরএইচ

 

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট