তিন প্রাইভেট ভার্সিটিতে নানামুখি জটিলতা, বিপাকে শিক্ষার্থীরা

ইবাইস, প্রাইম ও দারুল ইহসান-এই তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে জটিলতা।সমস্যা সমাধানে আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। এ কারণে বছরের পর বছর হয়ে যাচ্ছে। বিপাকে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক মালিক, একাধিক শাখা ও একাধিক ভিসি। ফলে চাকরির প্রতিযোগিতায় গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্টিফিকেটধারীদের।

IBAIS

 

শিক্ষার্থী ভর্তিতে গণমাধ্যমে পৃথক পৃথক বিজ্ঞাপ্তিও প্রকাশ হচ্ছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। আর না জেনে শিক্ষার্থীও ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু নীরব শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

 

 

ইউজিসি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, অপর পক্ষ আদালতের আশ্রয় নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এরপরই নীরব হয়ে যায় ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন দুজন পৃথক উপাচার্য। কোনটি বৈধ, কোনটি অবৈধ তা নির্ধারণ করতে পারছে না কেউ। ফলে চাকরির প্রতিযোগিতায় গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেটধারীদের। সমপ্রতি সহকারি গ্রন্থগারিক নিয়োগেও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাওয়া প্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন।

 

 

সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, মন্ত্রণালয় চাইলে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ইউজিসি রাজধানীর অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক বিবদমান দুটি গ্রুপের সমস্যা সমাধান করেছেন। এখন দু পক্ষের মালিকরা এক হয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। কিন্তু এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এমনটি করেনি ইউজিসি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ইউজিসি অবৈধ আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। সমপ্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এমন অভিযোগ করেছে।

 

 

বিরোধপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে- শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বারবার এমন ঘোষণা দিলেও তা ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ। মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে এখন নীরব।

 

 

এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, আমরা জানি না কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ। পত্রিকা ও ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।

 

 

ধানমণ্ডিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারের সাময়িক অনুমোদন পায় ১৯৯৩ সালে। তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দারুল ইহসান ট্রাস্ট’ নামের একটি ট্রাস্টি বোর্ড ছিল। ট্রাস্টের সেক্রেটারি ছিলেন সৈয়দ আলী নকী ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন ছয়জন।

 

Post MIddle

Darul-ihsan-university

 

২০০৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ জারির পর ২০০৬ সালের ২ এপ্রিল সংঘ স্মারক নিবন্ধনের মাধ্যমে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী নকী হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন দাখিল করে। এর মাধ্যমে তারা ২৯টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা সম্পর্কে স্থগিতাদেশ লাভের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ৩৩টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করে। ওই স্থগিতাদেশের সুযোগ গ্রহণ করে অপর ৩টি ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত ৩টি ক্যাম্পাস বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭০টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করে। এখন চারটি পৃথক ট্রাস্টির মধ্যে ২টি ট্রাস্টি বোর্ডে পুর্ণাঙ্গ বোর্ড ওয়েবসাইটে রয়েছে। তাদের নিযুক্ত দুইজন ভিসি রয়েছেন।

 

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সমস্যা সমাধানে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। ওই কমিটিই বিশ্ববিদ্যালয়টির সনদ বাতিলের সুপারিশ করে। কিন্তু সরকার কমিশনের ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি।

 

 

তবে বর্তমানে ধানমণ্ডি ছাড়াও সাভার, মিরপুর, উত্তরাও ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। ইউজিসি বলছে, একমাত্র ধানমন্ডিতে ক্যাম্পাসটি বৈধ। কিন্তু অন্যান্য ক্যাম্পাসেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ওয়েবসাইটি চারটি ঠিকানা রয়েছে। ধানমণ্ডিতে ভিসি হিসাবে রয়েছেন অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম এবং মিরপুর ক্যাম্পাসে ভিসি হিসাবে রয়েছেন অধ্যাপক আকবর উদ্দিন আহমেদ। এ তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক ওয়েবসাইটেও দেয়া আছে।

 

 

বিশ্ববিদ্যালয়টির দুটি মালিক পক্ষ রয়েছে, ভিসিও দুইজন। দুইটি পরিচালনা পরিষদ। প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কর্তৃপক্ষ বলে দাবি করছে। দুই পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা ও পরিচালনার বৈধ কর্তৃপক্ষ দাবি করে আদালতে গিয়েছেন।

 

 

একটি পক্ষের প্রধান জাকারিয়া লিংকন। তিনি ইবাইস ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ভারপ্রাপ্ত ভিসি। অন্য একটি পক্ষে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক আরিফুর রহমান। তাদের রয়েছে তিনটি ক্যাম্পাস। ধানমণ্ডিতে দুটি আর লালমাটিয়ায় একটি। ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন জাকারিয়া লিংকন। ২০১১ সাল বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ন্ত্রণে নেন তার ভাই কাওসার হোসেন। তার সঙ্গে যুক্ত হন শওকত আজিজ রাসেল। এরপর উভয়পক্ষ মালিক হতে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়। ২০১৩ সালের ৪ জুন সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ইবাইস ইউনিভার্সিটির সব কার্যক্রম মোহাম্মদপুর, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির প্রধান সড়কের ২৭ নম্বর বাড়িতে পরিচালনার রুলনিশি জারি করে। বর্তমানে দুটি পৃথক ট্রাস্টিবোর্ড পৃথক ক্যাম্পাস পলিচালনা করছে।

 

Prime-university

প্রাইম ইউনিভার্সিটিতেও দুটি পৃথক ট্রাস্টি বোর্ড ও দুজন ভিসি। উভয়ই নিজেদের মূল মালিক দাবি করেছে। একটি মিরপুরে অন্যটি উত্তরায়। ইউজিসি বলছে, মূল ক্যাম্পাসটি মিরপুরে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. প্রফুল চন্দ্র সরকার। আর ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি আশফাক উদ্দিন চৌধুরী। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছেন বলে জানিয়েছেন উত্তরা ক্যাম্পাসের কর্মকর্তারা। এই প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া। ভিসি অধ্যাপক রহমত ই খোদা।

 

 

স: ইএইচ

 

পছন্দের আরো পোস্ট