আলিয়া মাদরাসার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
মিনহাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশে বর্তমানে চার ধরনের মাদরাসা প্রচলিত। আলিয়া, কওমী, হাফেজী ও ফুরকানিয়া বা ইবতেদায়ী মাদরাসা। এর মধ্যে আলিয়া মাদরাসা হলো সরকারি অনুমতিপ্রাপ্ত ও বেতনভুক্ত। যেখানে কুরআন, হাদীস, ফিক্্হ, আকাঈদ, আরবী ভাষা ও সাহিত্যসহ ইসলামের মৌলিক বিষয়াদির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি, পৌরনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, কৃষি, কম্পিউটার, কারিগরি প্রভৃতি বিষয় শেখানো হয়। এক কথায় মাদরাসাশিক্ষা হলো ‘টু ইন ওয়ান’ একের ভেতর দু’ধারার শিক্ষাব্যবস্থা। যেখানে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় জগতের জ্ঞান লাভ হয়। এ আলিয়া মাদরাসার ইতিহাস অতি প্রাচীন।
ওহীর জ্ঞানের মাধ্যমেই মাদরাসাশিক্ষার সূত্রপাত। আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন, ‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম (বস্তুজগতের জ্ঞান) শিক্ষা দিলেন।’ আল্লাহ্ তাঁকে বিভিন্ন বস্তুর সত্তা, নাম, বৈশিষ্ট্য ও জ্ঞাতব্য বিষয়সমূহ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূলনীতিসমূহ ও বিভিন্ন শিল্পের ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করেন। সুতরাং বলা যায়, মাদরাসাশিক্ষার প্রবর্তক স্বয়ং আল্লাহ্। আর হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির পর হতেই মাদরাসাশিক্ষার সূত্রপাত। তাঁর বংশধরদের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দিক দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে এ মাদ্রাসাশিক্ষা। তাদের মাধ্যমেই বঙ্গদেশে মাদরাসাশিক্ষার ভিত গড়ে ওঠে।
ইসলামপূর্ব যুগে বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা: হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর প্রতি আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশ হলো, ‘তোমরা সকলেই এ স্থান হতে নেমে যাও।’ এ ঘোষণায় তারা দু’জন সরাসরি জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নেমে আসেন। আদম (আঃ) শ্রীলঙ্কায় ও হাওয়া আদম (আঃ) জেদ্দায়। একটি জনশ্রুতি রয়েছে ভারতের অযোধ্যায় হযরত আদম (আঃ)-এর পুত্র হযরত শীশ (আঃ) এর কবর রয়েছে। আর হযরত নূহ (আঃ)-এর প্রপৌত্র ‘বং ইবনে হিন্দ ইবনে হাম ইবনে নূহ’ এর বংশধরেরা বাংলায় বসতি স্থাপন করেন। সেমেটিক ভাষায় আল অর্থ বংশধর। তাই বং-এর সাথে আল শব্দের যুগল সন্ধিতে বাঙ্গাল বা বাংলা নামের উৎপত্তি ঘটেছে। এছাড়াও বং এর নামানুসারে (বং+ উপসাগর) বঙ্গোপসাগর নামকরণেরও তথ্য পাওয়া যায়। অনুমান করা হয় ৫-৬ হাজার বছর আগে এ বঙ্গে জনপদের সৃষ্টি হয়েছে।
বঙ্গের এ জনপদে সর্বপ্রথম দ্বীনের দাওয়াত কে নিয়ে এসেছেন এবং দীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কে গড়ে তোলেন এর সঠিক ইতিহাস পাওয়া কঠিন। তবে কেউ না কেউ বিষয়টি এনেছেন এটা সত্য। বিষয়টি গবেষণার যোগ্য। ‘আল-কুরআন এসেছে, ‘এমন কোনও সম্প্রদায় নেই, যার কাছে সতর্কবাণী প্রেরিত হয়নি।’ এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় প্রাচীন যুগে বঙ্গদেশেও কোনও নবী বা তার উত্তরাধিকারী আলেম-ওলামা দ্বারা ইসলামী দাওয়াতের কাজ অব্যাহত ছিল। ধারণা করা হয়, আরব বণিকরাই সর্বপ্রথম এদেশে আগমন করেছিলেন। কারণ তারা আবহমানকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন। তারা একদিকে ছিলেন বণিক আরেক দিকে ছিলেন মিশনারি। যে বণিকদল হযরত ইউসূফ (আঃ)কে কূপ থেকে উদ্ধার করে মিসরের রাজকর্মচারীর নিকট বিক্রি করেন তারা ছিলেন আরববাসী। আরবরা শীত ও গ্রীষ্মকালে ভিন্ন ভিন্ন দেশে বাণিজ্যে যেত। কুরআনে এসেছে, যেহেতু ‘কুরাইশদের আসক্তি আছে, আসক্তি আছে তাদের শীত ও গ্রীষ্মে সফরের।’ তাদের ব্যবসায়ী কাফেলা গ্রীষ্মকালে সিরিয়া ও শীতকালে ইয়েমেনে গমন করতো।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই আরব বণিকদের ব্যবসা চীন পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল। তারা ব্যবসার উদ্দেশে মালাবার (মাদ্রাজ প্রদেশের সমুদ্র তীরবর্তী একটি জেলা), চট্টগ্রাম, সিলেট প্রভৃতি স্থানে বসতি গড়ে তোলে। এভাবে হযরত নূহ (আঃ)-এর বংশধর ও আরবদের সাথে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের যোগসূত্র ঘটে এবং ইসলাম প্রচার-প্রসার ও ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্রভূমি গড়ে ওঠার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে বাংলাদেশে মাদরাসাশিক্ষা: ৬১০ খ্রি. ১ ফেব্রুয়ারি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। তার কাছে প্রথম ওহী নাযিল হয় ‘ইক্রা’ পড়। আর এরপর নির্দেশের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শিক্ষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু। তিনি নবমুসলিমদের শিক্ষার জন্য হযরত আরকাম ইবনু আবিল আরকাম (রাঃ)-এর গৃহে ‘দারুল আরকাম’ নামে গড়ে তোলেন একটি শিক্ষালয় তথা মাদরাসা। এটিই পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষা নিকেতন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিজরতের পরবর্তীকালে মসজিদে নববীকে প্রধান শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে তোলেন। যার পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আসহাফে সুফ্্ফা’ নামে শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বপ্রথম আবাসস্থল।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইসলামী শিক্ষাপ্রচারের আন্দোলনটি ছিল বিপ্লবাত্মক। এ বিপ্লবের ঢেউ আরব বণিকদের মাধ্যমে মালাবার, চট্টগ্রাম, সিলেট ও চীন দেশেও পৌঁছেছিল। চেরর (মালাবার) রাজ্যের শেষ রাজা চেরুমল পেরুমল ইসলাম গ্রহণের অভিলাষে মক্কায় এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করে স্বদেশে ফিরে যান। স্থানীয় রাজার ইসলাম গ্রহণের পর মালাবারবাসীগণও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হন। পরবর্তীতে মালাবারের এ মুসলিম আরব মুহাজিরদের অনেকেই চট্টগ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। আর তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ইসলামের বাণী পৌঁছে যায়। উল্লেখ্য, রাজা চেরুমল ও পেরুমলের ইসলাম গ্রহণের মতো একটি বড় ঘটনা হাদীসের কোন গ্রন্থে বর্ণিত না হওয়ার কারণ হিসেবে পাওয়া যায়, সম্ভবত তিনি পরিচয় গোপন রেখে মহানবীর (সাঃ)-এর দরবারে পৌঁছে ইসলাম গ্রহণ করে স্বদেশে ফিরে আসেন। এ কারণে তার ইসলাম গ্রহণে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কোনও কৌতূহলের উদ্বেগ ঘটেনি।
ওপরের আলোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, মাদরাসা তথা ইসলামী শিক্ষা এ অঞ্চলে প্রচলিত হওয়ার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। বঙ্গদেশে যারাই ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তারাই এখানে ইসলামী শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় ইসলামের দাওয়াত নিয়ে জনৈক সাহাবী এ অঞ্চলে আগমন করেন। এছাড়া সাহাবীগণ মহানবী (সাঃ)-এর বিদায় হজের ভাষণে দীন প্রচার ও প্রসারে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েন। আর এ কথা ইতিহাস স্বীকৃত যে, বাংলাদেশে তিনভাবে ইসলামের আগমন ও ইসলামী শিক্ষার ভিত্তি গড়ে ওঠে। (ক) সূফী সাধক ও আউলিয়া কেরামের মাধ্যমে (খ) মুবাল্লিগদের মাধ্যমে (গ) রাজশক্তির মাধ্যমে। তারা যেখানেই ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন, সেখানেই মসজিদ, মাদরাসা ও খানকা গড়ে তুলেছেন। যেগুলো ছিল ইসলামী জ্ঞানচর্চার এক একটি উজ্জ্বল বাতিঘর।
খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে বাংলাদেশে মাদরাসাশিক্ষা: দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) এর যুগে (৬০৪-৬৪৪ খ্রি.) হযরত মাহমুদ ও মুহাইমিন (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি মুবাল্লিগ দল বাংলাদেশে আগমন করেন। এরপর সাহাবীদের কয়েকটি দল এখানে পর পর আসতে থাকেন। তাদের মধ্যে একটি দলে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উতবান, আসেম ইবনে আমর আত-তামীমী, সুহার ইবনে আল আবদী, সোয়াইব ইবনে আদী এবং আর হাকাম ইবনে আবিল আস-সাকাফী (রাঃ)। এছাড়াও হিজরী ১৫ সনে বাহরাইন ও ওমানের গবর্নর ওসমান ইবনে আবুল আবী সাকাফী তিনি তার ভাই মুগীরাকে একদল সেনাবাহিনী নিয়ে করাচি প্রেরণ করেন। হযরত আলী (রাঃ)-এর সময় ০৯ হিজরীর প্রারম্ভে হারিস ইবনে মুররা আবদী সিন্ধু সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করে জয়ী হন।
উমাইয়া শাসক হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের সময় বাংলার প্রাচীন জনপদ রংপুরের কুড়িগ্রাম অঞ্চলে বর্তমানে লালমনিরহাট জেলায় ‘মাজদের আড়া’ নামক জায়গায় ৬৮ হিজরী (৬৯০ খ্রিঃ) ‘হারানো মসজিদ’ নামে একটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। জার্মানভিত্তিক রেডিও ডয়েসেভলের এক প্রতিবেদনে বলা হয় বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই হবে সর্বপ্রথম মসজিদ। মসজিদের প্রাচীন থেকে লিপিতে আরবী ভাষায় ৬৮ হিজরী সনের কথা লেখা রয়েছে। তবে এ ইস্টক খ-টির অস্তিত্ব প্রকৃত গবেষণার বিষয়। এ অঞ্চলটি কোনও উপকূলবর্তী না হলেও সম্ভবত আরব বণিক দল বাংলার বৃহতত্মনদী গঙ্গা বা তিস্তা নদীর উপকূল বেয়ে দেশের অভ্যন্তরে দীনের দাওয়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রবেশ করতে পারেন। এ অঞ্চলে ব্যবসায়ীদের আগমনের আরও একটি তথ্য রয়েছে। ৫২৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে রংপুর অঞ্চলে তিস্তা পাড়ে তৈরিকৃত রেশমী পোশাক রোমান স¤্রাট আরিলিয়ান অগ্নিমূল্যের কারণে তার সম্রাজ্ঞীর রেশম বস্ত্রের আবদার পূরণে ব্যর্থ হয়ে রেশম চাষের প্রযুক্তি হস্তগত করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রচুর পুরস্কারের লোভে দুই ইরানী বণিক তিস্তা অববাহিকায় (যা লালমনিরহাট জেলার মাজদের আড়ায় অবস্থিত হারানো মসজিদ সংলগ্ন এলাকা) এসে সহজ-সরল মানুষগুলোর সঙ্গে মিশে সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে ফাঁকা লাঠির ভেতর পুরে রেশম কীটের ডিম নিয়ে যায় রোমে। ৫৫২ খ্রিঃ সে ডিম থেকে কীট জন্মিয়ে তুঁতগাছের পাতা খাইয়ে রেশম উৎপাদন করেন।
হিজরী ৯০ সান মোতাবেক ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম সমগ্র সিন্ধু অঞ্চলটি জয় করেন। এভাবে হিজরী প্রথম শতকেই ইসলাম ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী ১২০০ খ্রিঃ সর্বপ্রথম বঙ্গদেশে অভিযান পরিচালনা করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। আর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করেন মসজিদ, মাদ্রাসা ও খান্কা। ইতিহাসে পাওয়া যায় তিনি রংপুরেও একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এভাবে বাংলাদেশে ওলামা- মাশায়েখ ও মুব্বালিগগণের অব্যাহতভাবে দীন প্রচার ও মুসলিম রাজশক্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় একানে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটতে থাকে। ম্যাক্সমুলারের মতে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮০ হাজার মাদ্রাসা চালু ছিল। কিন্তু বৃটিশ সরকার বাংলা দখল করে মসজিদ-মাদ্রাসার খরচ নির্বাহের জন্য বরাদ্দকৃত ‘ওয়াক্ফ সম্পত্তি’ বাজেয়াপ্ত করলে মাদ্রাসাগুলো ধীরে ধরে বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর মুসলমানদের দাবির প্রেক্ষিতে ও ইংরেজদের প্রয়োজনে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে ১ অক্টোবর (শাবান, ১১৯৪ হি.) সনে বৃটিশ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা। আর এ কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার আদলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল শ্রেণীর হাজার হাজার আলিয়া নিসাবের মাদ্রাসা। যে মাদরাসাগুলো অক্ষয় পিরামিডের ন্যায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে হেরার আলোকরশ্মি কুরআন-সুন্নাহর ইল্ম বিতরণ করে চলেছে জ্ঞান সুধার সবুজ চত্বরে। অক্টোবরের এ দিিেনত যেহেতু আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার ঐতিহাসিক পথচলা শুরু। তাই ১ অক্টোবরের এ শুভ দিনটি জাতীয় মাদরাসা শিক্ষা দিবস হিসেবে সরকারি স্বীকৃতির দাবি উঠছে বাংলার বিভিন্ন গগন থেকে।
বর্তমানে বাংলাদেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্সরাসার সংখ্যা ৬,৮৮২টি, দাখিল মাদ্রাসা ৯,২২১টি, আলিম মাদ্রাসা ২,৬৮৮টি। ফাযিল মাদ্রাসা ১,৩০০টি ও কামিল মাদ্রাসা ১৯৪টি। এ আলিয়া মাদ্রাসাগুলো জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার মূলস্রোত ধারায় চলে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয় আশির দশকে। ১৯৮৫ সালে দাখিল এসএসসি সমমানের সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৭ সালে আলিম এইচএসসি সমমান। আর ২০০৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধিত আইন-০৬ জাতীয় সংসদে পাস হলে ফাযিল ও স্নাতক ও কামিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মর্যাদা লাভ করে। এছাড়া ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ হতে দেশের ০১টি আলিয়া মাদ্রসায় ফাযিল স্নাতক অনার্স কোর্স চালু হয়।
দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং মাদরাসাগুলোর বিকাশ সাধনে বর্তমানে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো পূরণের আশু প্রয়োজন।
১. স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা প্রদান। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৬,৬৭২টি প্রাইমারি স্কুল সরকারি ঘোষণা করেন। আর ২০১২ সালে শেখ হাসিনা ২৬,১৯৩টি রেজি: প্রাইমারি স্কুল জাতীয়হকরণের ঘোষণা দেন। এখন ৬,৮৮২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা সরকারি করণের ঘোষণা দেয়ার পালা। তাহলে শিক্ষাবান্ধব সরকারের শিক্ষা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে।
২. মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয় শিক্ষার মূল ধারায় দাঁড় করাতে হলে কামিল হাদীস, কামিল তাসির, কামিল ফিক্হ ও কামিল আদব কোর্সের সাথে কামিল অর্থনীতি, কামিল পৌরনীতি, কামিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান, কামিল আইন ও কামিল ইতিহাস কোর্স চালু করা প্রয়োজন।
৩. প্রতিটি জেলায় একটি করে মডেল মাদ্রাসা স্থাপন এবং একটি করে ফাযিল/কামিল মাদ্রাসা সরকারিকরণ।
৪. মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তর স্থাপন ও একটি স্বতন্ত্র টেক্সট বোর্ড প্রতিষ্ঠাকরণ।
৫. রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগে আরও পৃথক দু’টি মাদরাসা বোর্ড স্থাপন।
৬. ইসলিামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউটের অধীনে ফাযিল-কামিলের প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপকরণ।
৭. ইবি কর্তৃক প্রণীত জনবল কাঠামো কার্যকরীকরণ।
৮. ১ অক্টোবরকে জাতীয় মাদরাসা শিক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণা প্রদান।
৯. কামিল স্নাতকোত্তর পাস শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা যথা-এমএড, এমফিল ও বিএইচডি ডিগ্রি লাভের সুযোগদান।
উল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হলে আলিয়া মাদ্রাসাগুলো অতি সহজে পৌঁছে যাবে তার পূর্ণাঙ্গ অভিষ্ট লক্ষ্যের সোনালী সোপানে।