খুবিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতির কলাকৌশল বিষয়ক কর্মশালা
খুবি প্রতিনিধিঃ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেছেন শিক্ষকদের কাছ থেকে সারা জীবন শেখার আছে। শিক্ষক আন্তরিক হলে, মানবিক হলে, নৈতিক বা মূল্যবোধ সম্পন্ন হলে তাঁর শিক্ষার্থীরা ভালো কিছু শিখতে পারে। আর এর প্রভাব শিক্ষার্থীর জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু অতীতের সেই চিত্র পাল্টে গেছে। সর্বত্রই আজ বাণিজ্যিক মনোভাব প্রভাব ফেলেছে। চাহিদার কারণে অধিক টাকা আয়ের প্রতিযোগিতার ফলে সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে, শিক্ষা সেক্টরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই বাণিজ্যিক মনোবৃত্তি থেকে বের হতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শিক্ষকতার মহান আদর্শ ধারণ করে নিরন্তর জ্ঞান চর্চা ও বিতরণে মানসিক স্থিতিশীলতা তৈরির বড় প্রয়োজন।
তিনি গত (১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর আয়োজিত প্রশ্নব্যাংকে নির্ভুল ও মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রাপ্তির জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতি, শুদ্ধ বানান-লিখন ও সম্পাদনার কলাকৌশল বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল আলীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বোর্ডের সচিব প্রফেসর এ এম এইচ আলী আর রেজা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র। কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিশ্বাস শাহীন আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নিভা রাণী পাঠক, খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার রুহুল আমীন।
প্রধান অতিথি প্রশ্নব্যাংকে নির্ভুল ও মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রাপ্তির জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতি, শুদ্ধ বানান-লিখন ও সম্পাদনার কলাকৌশল শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন যশোর শিক্ষা বোর্ডের এক মহতি উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন।
এই কর্মশালার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকবৃন্দ অনেক কিছুই শিখতে পারবেন এবং তাদের মাধ্যমে অন্যান্য শিক্ষকগণও উপকৃত হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন একজন শিক্ষক যখন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ণ করেন তখন তাকে নিবিষ্ট মনে তা করতে হবে। কারণ, খাতা মূল্যায়ণের ত্রুটির কারণে কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হলে সারা জীবন তাকে সে ক্ষতি বহন করে চলতে হয়। এমনকি একজন শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তাই একজন শিক্ষককে তাঁর পেশাগত মহত্তের জায়গায় অটল থাকতে হবে, তাকে প্রকৃত অর্থে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে হবে, মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হতে হবে। তিনি যদি ভালো শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারেন, ভালো মানুষ তৈরির ভিত রচনা করতে পারেন তাহলে গোটা সমাজ, জাতি উপকৃত হবে।
একজন শিক্ষকের গৌরব, আত্মতৃপ্তি সেখানেই। কর্মশালায় সভাপতি বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন যশোর বোর্ডের এই প্রশ্নব্যাংক পদ্ধতির ফলে বিভাগের আড়াই হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমন একটি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এই প্রশ্নব্যাংকে প্রশ্ন তৈরি করে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে শুদ্ধ বানান রীতি অনুসরণ ও প্রশ্ন তৈরির উৎকর্ষ অর্জনে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বোর্ডের সচিব তাঁর বক্তব্যে বলেন যশোর বোর্ড এই কর্মশালার মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী শিক্ষকদের আরও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শুদ্ধ বানান রীতি অনুসরণে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
আমরা আশা করি এর ইতিবাচক প্রভাব বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের মধ্যেও পড়বে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন যশোর বোর্ড প্রশ্নব্যাংক পদ্ধতির মাধ্যমে বিভাগের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষা গ্রহণে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। সারা দেশে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে প্রশ্ন ফাঁসের মতো কোনো সংশয় থাকবে না।
দিনব্যাপী এই কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন পর্বে বোর্ড, মাধ্যমিক অধিদপ্তর এবং খুলনা বিভাগের বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, প্রশ্নপত্র তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ অংশ নেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান উপাচার্যকে স্মারক উপহার প্রদান করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভ্যেনু ব্যবহারসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।