কবি শামসুল আরেফীন-এর ‘সূর্য-পুত্র’

বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি শামসুল আরেফীন-এর কাব্যগ্রন্থ ‘সূর্য-পুত্র’। এবারের (২০১৮) বাংলা একাডেমি বইমেলা এবং চট্টগ্রামের বইমেলাকে সামনে রেখে প্রকাশিত গ্রন্থটি বাংলা একাডেমি বইমেলার ৬৫৫ নং বলাকা প্রকাশন স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে বাংলা কবিতার বোদ্ধা পাঠক ও গবেষকসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলা কবিতায় ‘সূর্য-পুত্র’-কে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কাব্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তাঁদের অনেকে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘সূর্য-পুত্র’ একটি অসাধারণ কাব্য এবং বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্র্ণ সংযোজন। বিশিষ্ট কবি শাহিদ হাসান ‘সূর্য-পুত্র’ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন: ‘‘গেল শতাব্দীর নব্বই দশকের মধ্যভাগে দু’চোখে অফুরন্ত স্বপ্ন নিয়ে কবিতার সঙ্গে সাঙ্গীতিক আলাপ শুরু করেন শামসুল আরেফীন। জীবনের তরুণবেলায় বৈকালিক মায়াবী রোদে তামাটে শরীর ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কত পঙ্ক্তি সাজিয়েছেন তার হিসেব এ-বেলায় সব কিছু মনে করা হয়তো কবি’র পক্ষে কষ্টকর। তখন কবিতাদেবীকে আপন মহিমায় ছুঁতে গিয়েও অধরা থেকেছে বারবার। হয়তো বা আজকের কবি শামসুল আরেফীন-এর সে-সময়ের নিবেদন বিন্ম ও ফুলেল ছিলো না। সজ্ঞানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সকাল পুড়িয়ে এবং মেধা ও মননের অগ্নিকু-ে অভিজ্ঞতাকে প্রতিনিয়ত সেঁকেছেন। সুদীর্ঘ সাধনার ফলন ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘রুবাইয়াত-ই-আরেফীন’ গ্রন্থে তোলা আছে। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সূর্য-পুত্র’ প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সচেতন কবি শামসুল আরেফীন বিষয়বস্তু নির্বাচনে সর্বদা সতর্ক এবং বিষয়ের সঙ্গে শব্দ ব্যবহারে যথেষ্ট যত্নবান।

লোককথা, পুরাণ, মিথ, ইতিহাস, ঐতিহ্য সহ নানা অনুষঙ্গ সমকালীন প্রেক্ষাপটে কাব্যিক বয়ানে কাব্য-সচেতন পাঠকের সমীপে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ মুক্তোর দানার মতো ছড়িয়েছে পঙ্ক্তির পরতে পরতে পুবের উজালা রঙ। কবিতার বিষয়বস্তুর সাথে যথাযথভাবে গদ্য ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শব্দের সমন্বয় সাধনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন কবি শামসুল আরেফীন। কবিতা কখনও বেদবাক্য নয়, সময়ের সাথে সাথে তার পরিবর্তন অনিবার্য। এ-বিষয়টি কবি শামসুল আরেফীন যথেষ্ট অবগত। কাব্যানুরাগী সচেতন পাঠকের কাছে আশা করি ‘সূর্য-পুত্র’ কবিতাগ্রন্থটি ভালো লাগবে।’’

Post MIddle

উল্লেখ্য, শামসুল আরেফীন ‘রুবাইয়াত-ই-আরেফীন’ ও ‘সূর্য-পুত্র’ কাব্যদ্বয় প্রকাশ করে নিজেকে কবি হিসেবে জানান দিলেও এবং ‘রুবাইয়াত-ই-আরেফীন’ কাব্যের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বাংলা কবিতার জগতে স্বতন্ত্র অবস্থান সৃষ্টি করলেও তিনি দীর্ঘকাল ধরে লোকগবেষক হিসেবেই বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত। তিনি লোক ও অন্যান্য বিষয়ে চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশন থেকে অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। ১২ টি গ্রন্থের নাম: আস্কর আলী প-িত: একটি বিলুপ্ত অধ্যায় ( ফেব্রুয়ারি ২০০৬, পৃষ্ঠাসংখ্যা ১১২), বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য ১ম খ- ( ফেব্রুয়ারি ২০০৭, পৃষ্ঠাসংখ্যা ১২৮), বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য ২য়-৪র্থ খ- ( জানুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠাসংখ্যা ২৪০), আস্কর আলী প-িতের দুর্লভ পুথি জ্ঞানচৌতিসা ও পঞ্চসতী প্যারজান (সংগ্রহ ও সম্পাদনা; ফেব্রুয়ারি ২০১০, পৃষ্ঠাসংখ্যা ২৮০), বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত ১ম খ- (সংগ্রহ ও সম্পাদনা; ফেব্রুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪৩২), বাঁশরিয়া বাজাও বাঁশি (পল্লীগানের গ্রন্থ; ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত ১ম খ-’ গ্রন্থভুক্তির মাধ্যমে প্রকাশিত), আস্কর আলী প-িত: ৮৬বছর পর (সংগ্রহ ও সম্পাদনা; ফেব্রুয়ারি ২০১৩, পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৬০), গাঙ্গেয় বদ্বীপের অনন্য সঙ্গীতজ্ঞ: স্বপন কুমার দাশ(সম্পাদনা; সরগম একাডেমি, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠাসংখ্যা ৩২), আঠারো শতকের কবি আলী রজা ওরফে কানুফকির (ফেব্রুয়ারি ২০১৭, পৃষ্ঠাসংখ্যা ১২০), আহমদ ছফার অন্দরমহল (ফেব্রুয়ারি ২০০৪, পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৪৪), রুবাইয়াত-ই-আরেফীন (ফেব্রুয়ারি ২০১৪, পৃষ্ঠাসংখ্যা ৬৪), বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার দুর্লভ দলিল (ফেব্রুয়ারি ২০১৬, পৃষ্ঠাসংখ্যা ১২০)।

//স

পছন্দের আরো পোস্ট