কুবিতে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত
‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নিয়ে বিভ্রান্তি; উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়মে অনিয়ম ও নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ, অবৈধভাবে ভাতা উত্তোলন, দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগে শিক্ষক সমিতির টানা আন্দোলন; উপাচার্য ও প্রশাসন কর্তৃক এসব বিষয়ে কোন ধরনের সুষ্ঠু মীমাংসা না হওয়ায় চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। এসব ঘটনার ফলে গত সোমবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার প্রসঙ্গে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ আজ ৩ সপ্তাহ ধরে (১৬ অক্টোবর থেকে)। ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে বেশকিছু প্রক্রিয়া একাধিকবার সভা-সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় যা এই অবস্থায় কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছেনা। তাই বাধ্য হয়েই ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে।’ এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষা কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় সম্পূর্ণ শিক্ষক সমিতির ওপর বর্তাবে বলে মন্তব্য করেন উপাচার্য।
দায় অস্বীকার করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: আবু তাহের বলেন, ‘আমরা ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছি। এই অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছিলো। কিন্তু উপাচার্য ‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করে দিলেন। এতে করে কোমলমতি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরোক্ষভাবে জিম্মি করা হচ্ছে।’
এদিকে বিবাদমান শিক্ষকদের দুটি পক্ষ এবার মুখোমুখি মানববন্ধন করেছে। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ১টায় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের সামনে দুই সাড়িতে মুখোমুখি হয়ে মানববন্ধন করেন শিক্ষক সমিতি ও উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা।
মানববন্ধনে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’র ব্যানারে শিক্ষক সমিতি দাবী করেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার পক্ষে আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা ছিলো। কিন্তু দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, সরকারী অর্থ আত্মসাৎকারী উপাচার্য ভর্তিচ্ছুদের জিম্মি করে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। আর এতে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে উপাচার্যপন্থী কিছু দুষ্কৃতিকারী শিক্ষক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
উল্টোদিকে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির নামে কতিপয় শিক্ষকের অশোভন আচরণ ও অসহযোগিতার কারণেই মূলত আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বাধার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সব ধরনের আপগ্রেডেশন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এতে বিশ^বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’
মুখোমুখি অবস্থায় এই মানবন্ধন দেখে কৌতুহলি শিক্ষার্থীরাও জড়ো হন। মানবন্ধনের বিবাদমান শিক্ষকদের আক্রমণাত্মক ও পাল্টাপাল্টি বক্তৃতায় তারা শ্লেষ্মা প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে যদি ভর্তি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত না হয় তবে তাতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ রাখবো, নিজেদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে ভর্তি আগত পরীক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ করে দিতে।’