পাবিপ্রবিতে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ১৫। পরিস্থিতি থমথমে
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি, সংঘর্ষ, বঙ্গবন্ধু হলে হামলা ও মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১০টা থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড ও সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন পদ থেকে ড. আব্দুল আলীমকে অপসারণ না করা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি।
আহতরা হলেন- সেকশন অফিসার রফিকুল ইসলাম, সেকশন অফিসার তৌফিকুর রহমান সৈকত, সিনিয়র স্টোরকিপার জমসেদ হোসেন পলাশ, নিরাপত্তা প্রহরী লিটন হোসেন, জনি, বাংলা বিভাগের মাস্টার্স শেষপর্বের আবু জাফর, শামীম হোসেন ও সাইফুল ইসলামসহ আরও অনেকে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, শুক্রবার ছিল পাবিপ্রবির প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার ডিউটির সময়ে পাবিপ্রবি’র সামাজিক অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম আব্দুল আলীমের সাথে গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ড. আলীমকে মারপিট করে।
ঘটনার রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে মারপিট ও লাঞ্ছিতের খবর জানতে পেরে শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের পাশে অবস্থান গ্রহণ করে। এ খবর পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাঠিসোঠা নিয়ে অবস্থানকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় উভয়গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।
এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু হলে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মারপিট ও লাঞ্ছিত করে। বিক্ষুব্ধরা ক্যাম্পাসে রাখা প্রচুর মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেকশন অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল আলীমের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী লাঠিসোঠা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।’ এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে আহতাবস্থায় হাসপাতালের সামনে বাংলা বিভাগের মাস্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জানাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে আমাদের উপর অতর্কিত এই হামলা চালায়।’
পাবিপ্রবি’র বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমার উপর হামলা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েই শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিল। আমাকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বা ভিত্তিহীন। এ ঘটনার সাথে আমার কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।’
এদিকে পাবিপ্রবি’র কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জি এম শামসদ ফখরুল ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি জামসেদ হোসেন পলাশ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড ও সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন পদ থেকে ড. আব্দুল আলীমকে অপসারণ না করা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা করা হয়েছে।
পাবিপ্রবি’র প্রক্টর আওয়াল কবির জয় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষক ড. আব্দুল আলীমের সাথে অসদাচরণ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেন প্রক্টর।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।