ছাত্র ইউনিয়নের ৩৮তম সম্মেলনের উদ্বোধন

রবিবার বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় ছাত্র আন্দোলনের অগ্রদূত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৩৮তম সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ইমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি বলেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সংগ্রামী ঐতিহ্য থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এর ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ওতোপ্রতভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ছিল সমাজ বিপ্লবের চেতনা এবং সেকারণেই স্বাধীন বাংলাদেশে একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি গৃহীত হয়েছিল। আজ পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের দোসর শাসকগোষ্ঠী সেই শিক্ষানীতিকে পরাজিত করার চক্রান্তে সেটিকে ত্রিমুখী করে ফেলেছে। যাতে শোষিতের ঐক্য গড়ে না উঠে প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতন্ত্র জয়লাভ করে। আজকে ছাত্র ইউনিয়নকে প্রকৃত অর্থে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের কাক্সিক্ষত সমাজ বিপ্লবের পথে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা সংস্কৃতি রক্ষা করে সমাজ পরিবর্তনের জ্ঞানের চর্চার ও প্রসারের জন্য সংগ্রাম করতে হবে।

সাধারণ সম্পাদক জিলানী শুভর পরিচালনায় উদ্বোধনী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে লাকী আক্তার বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের মাটির শিক্ষা সংস্কৃতিকে নির্ধারণ করেছে। একারণেই বাংলাদেশে একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন শিক্ষানীতি গৃহীত হয়েছিল। আজকে কথিত ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নফাঁস করা হচ্ছে, অর্থমন্ত্রী বলছেন, সকল পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েকগুণ ব্যয়বৃদ্ধি করা হবে, হেফাজতে ইসলাম-ওলামালীগের প্রেসক্রিপশনে পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িকীকরণ, ভুলেভরা পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিক্ষা তথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গতিধারায় অর্জিত সংস্কৃতিকে ধ্বংসের আয়োজনকে সুসম্পন্ন করার অপতৎপরতা চলমান। বহুজাতিক কোম্পানীর সেবাদাস এবং ভোক্তা তৈরির জন্য আজকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচালনা করতে গিয়ে ক্রমেই ধ্বংসের পথে নেওয়া হচ্ছে। আজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা কার পক্ষে যাব? ঐ নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীসুলভ বহুজাতিকদের পক্ষে নাকি আমাদের শোষিত নিপীড়ত ফসলের মূল্য-মজুরি না পাওয়া কৃষক-শ্রমিকদের পক্ষে যাব। ছাত্র ইউনিয়ন মেহনতি জনতার সাথে ছাত্র সমাজের ঐক্যের কথা বলে। আজকে চুনারুঘাটে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন যেভাবে ঐক্য গড়ে তুলেছিল, যেভাবে বৌদ্ধ পল্লীতে আগুন দেওয়ার পরে ছাত্র ইউনিয়ন যেভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে এগিয়ে গিয়েছিল, ঠিক সেভাবে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ প্রতিরোধে ছাত্র জনতার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনের চেতনায় ছাত্র ইউনিয়নকে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যের মশালকে ঘরে ঘরে নিয়ে যেতে হবে। সেই ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যের আঘাতেই বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণের চক্রান্তকে ভেঙে চুরমার করে মুক্তিযুদ্ধের কাক্সিক্ষত সমাজ বিপ্লবের ধারায় শিক্ষা সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে হবে।

আহ্বায়কের বক্তব্যে সুমন সেন গুপ্ত ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন সফল করতে সারাদেশের নেতাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে সাধুবাদ জানান।
চেয়ারম্যানের বক্তব্যে আবু তারেক সোহেল বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন তার ৩৮তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার লড়াই সংগ্রামকে আরও বেশি সংঘবদ্ধ করে এগিয়ে নেবে।সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নেপাল হতে আগত ANFSU এর সাধারণ সম্পাদক সুনীতা বড়াল, শ্রীলঙ্কা হতে আগত সোস্যালিস্ট ইয়ুথ ইউনিয়নের অভয়ারণ্য আচার্য্য, উফডি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাবেক সহ-সভঅপতি গিরীশ আনন্দ পান্ডে। তারা ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে নিজেদের দেশ ও আন্তর্জাতিক ছাত্র সমাজের পক্ষে বিপ্লবী অভিনন্দন জানান এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আন্তর্জাতিক ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে ফ্যাসিবাদ-সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. গোলাম আরিফ টিপু, অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, ছাত্রমৈত্রীর সাবেক সভাপতি ও রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাজ্জাদ জহির চন্দন, হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল, লুনা নূর, বাকী বিল্লাহ, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, মানবেন্দ্র দেব, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট একাংশের সভাপতি ইমরান হাবিব রুম্মন, অপরাংশের সভাপতি নাঈমা খালেদা মনিকা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিকসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশ শেষে একটি র‌্যালি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে দিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।  বিকেলে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক ইউনিয়নসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে অংশগ্রহণ করে সারাদেশ হতে আগত সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের শিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ব্যান্ড। আগামীকাল সোমবার সকাল ১১টায় টিএসসি অডিটোরিয়ামে শ্রীলংকা-নেপাল-ভারতসহ বিভিন্ন দেশ হতে আগত ছাত্র নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ‘নব উদারবাদে আগ্রাসনে শিক্ষা সংস্কৃতি’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ৪ ও ৫ এপ্রিল কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে ৩৮তম সম্মেলনের পর্দা নামবে।

পছন্দের আরো পোস্ট