খুবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে আজ ১৪ ডিসেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে সকাল ৯ টায় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শহীদ মিনারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপরই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, বিভিন্ন আবাসিক হল, বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, চেতনা ৭১ সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এসময় ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান, ডিন, রেজিস্ট্রার, ডিসিপ্লিন প্রধান, প্রভোস্ট, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি ও ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ সারওয়ার জাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাধীনতাপূর্ব এবং স্বাধীনতাত্তোর বর্তমান সময় পর্যন্ত বুদ্ধিজীবীদের প্রসঙ্গে বিভিন্ন তথ্য, তত্ত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে সারগর্ব বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।

Post MIddle

তিনি বলেন, বাঙালি জাতিসত্ত্বার জাগরণে, মনন গঠনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান অপরিসীম। তারাই বাংলাভাষা ও বাংলাভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রের বিষয়টি অনেক আগেই সামনে তুলে এনেছিলেন। অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু সবসময় তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং পরামর্শ নিতেন। তিনি বলেন বুদ্ধিজীবীরা একটি দর্শন লালন করেন যার মূল চিন্তা থাকে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সৃজনশীলতা বিকাশ, মুক্তচিন্তার চর্চা ও মানবকল্যাণ। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পরবর্তী দীর্ঘকাল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিষয়টি ¤্রয়িমান করে ফেলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশ উল্টো পথে চলায় বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে। তারা দেশ ও জাতির কমিটমেন্টের বাইরে চলে গেছেন। ছিয়ানব্বই সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার বুদ্ধিজীবীদের বিষয়টি সামনে আসতে থাকে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের দর্শন, তাদের ভূমিকা এখন আলোচিত হলেও তাদের সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম খুব কমই জানে।

তিনি বলেন বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার সুতিকাগার। শুধু সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনা করালে, পরীক্ষা নেয়া, পাশ করলেই শিক্ষকদের দায়িত্ব শেষ হয় না। শিক্ষার্থীদের মনন গঠনে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে, তাদেরকে দেশ প্রেমিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের উদ্দেশ্য, তাদের আকাঙ্খা ধারণ ও লালন করার তাগিদ দিয়ে বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে মুক্তবুদ্ধিচর্চা ও মনন গঠনের মাধ্যমে সত্যিকারঅর্থে দেশের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান, প্রফেসর ড. দিলীপ কুমার দত্ত, প্রফেসর ড. অনির্বাণ মোস্তফা, সহকারী অধ্যাপক কাজী হুমায়ূন কবীর, তুহিন রায় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসমা চৌধুরী। আলোচনা সভায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, সন্ধ্যায় শহীদ মিনার ও অদম্য বাংলা চত্তরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। এর আগে সকাল ৮-৩০ টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের (প্রশাসনিক ভবন) সম্মুখে কালোব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

পছন্দের আরো পোস্ট