বেরোবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

একাডেমিক ভবন-৪ ও বঙ্গবন্ধু হলের মাঝামাঝি দুই তলা বিষিষ্ট একটি বর্গাকৃতি ভবন। আশে পাশে বড় কোন গাছপালা নেই। কিন্তু চারদিকটায় সবুজের সমারোহ। ছোট ছোট অসংখ্যা উদ্ভিদ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। সামনে কোন সাইন বোর্ড কিংবা কোন নেমপ্লেট না থাকলেও ভবনের উপরের মাঝখানে লেখা ‘সেন্ট্রাল লাইব্রেরি এ্যান্ড ইনভরমেশন সেন্টার।’ কেউ ভবনের ভেতরে ঢুকছে আবার কেউ বেরিযে আসছে। সারাটা দিনের অফিস চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভীড় করে সেথায়। আমি বলছি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কথা।

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৭ টি বছর পার হয়ে গেলও অন্যান্য উন্নতির সাথে কেন্দ্রীয় এ গ্রন্থাগারের তেমন কোন উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় তলায় বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি, শিক্ষক, কর্মকর্তা, গবেষকদের জন্য একটি এবং অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি করে রিডিং রুম আছে। সাথে জার্নাল কক্ষও রয়েছে।

এসব রিডিং রুমে বইয়ের সেলফ আছে। কিন্তু অধিকাংশ সেল্ফই ফাকা। তথ্য প্রযুক্তিতে যখন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেই সময়ে জার্নাল রুমে হাতে গোনা ১২ টা দৈনিক সংবাদপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে অধিকাংশ সময়ে দেখা যায় পড়ার কক্ষগুলোতে হাতে গোনা ২-৩ জন শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-তাদের পড়ার মতো পর্যাপ্ত বই এখানে নেই। আবার নিজস্ব কোন বইও ভেতরে আনতে দেওয়া হয় না। কাজেই সীমিত বইয়ে সব সময় সবার চাহিদা থাকে না। এর চেয়ে বিভাগগুলোর সেমিনারেই তুলনামূলকভাবে বেশি বই পাওয়া যাচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমান বই না থাকায় আর প্রয়োজনমতো শিক্ষার্থীদের বই ভেতরে আনতে না দেওয়ায় তেমন আসেন না শিক্ষার্থীরা। তবে একেবারেই যে তারা আসেন না তা কিন্তু নয়। তবে যেটা আসার কথা সেটা হতাশাজনক।

এ লাইব্রেরীসূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫ হাজার কপি বই এখানে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বিভাগের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোকপ্রশাসন, ইলেট্রনিক্স এ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম, উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানসহ মোট ৬ টি বিভাগের কোন বইয়েই এখনো গ্রন্থাগারে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। আবার যেগুলো আছে তাও পর্যাপ্ত পরিমাণে না।

যার সম্পর্কটাই বই পড়ার সাথে। সেখানে শিক্ষার্থীরা তেমন আসেন না! কারণ তাদেও প্রেমটাতো বইয়ের সাথে কিন্তু খোলসাযুক্ত লাইব্রেরীর সাথে নয়।

Post MIddle

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রনি জানান,‘যদি আমাদের নিজস্ব বইপত্র নিয়ে এসে এখানে পড়ার সুযোগ থাকতো তবে হয়তবা আরো বেশি শির্ক্ষাথী এখানে আসতো। তখন অনেক ভালোই লাগতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তার কোন সুযোগ নাই। আদৌ তা হবে কিনা সন্দেহ।

জার্নাল রুমে পড়তে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ জানান,‘এখানে অল্প কয়েকটা দৈনিক পত্রিকা নেয়া হয়। সবারতো আর সব পত্রিকা ভালো লাগে না। তাই যদি আরো কিছু দৈনিক পত্রিকা এখানে সরবরাহ করা যেত তবে আরো অনেক শিক্ষার্থী এখানে আসতো।

গ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক আব্দুস সামাদ প্রধান বলেন,‘আমাদের যে ৬ টি বিভাগের কোন বই এখনো এখানে আসে নাই। তার জন্য সম্ভবত অর্ডার হয়েছে। আমরা হযতবা সামনে তা পেয়ে যাবো।’

শিক্ষার্থীদেরকে কিভাবে আরো বেশি করে গ্রন্থাগারের সাথে যুক্ত করা যায় এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আসলে লাইব্রেরীর জন্য এই ভবনটির কাঠামোগত ভুল আছে। এখানে যেটুকু জায়গা সেখানে শিক্ষাথীদের আলাদা করে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব নয়। যদি তাদেরকে আলাদা পড়ার সুযোগ করে দেয়া যেত, যেখানে তারা নিজেদের বইপত্র নেিয় এসে পড়তে পারবেন, তবে ভালো হতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এখানে সবার চাহিদা মতো বই সরবরাহ করা সম্ভব নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ টি ব্যাচের প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে খুব বেশি যদি হয় তবে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে যান। এতো বড় একটা অংশ এই সুবিধা হতে বাদ পরে যাচ্ছে। আর বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী শিক্ষার্থীদের কতটা চাহিদা পূরণ করতে পারছে? কবে সম্ভব হবে এটাকে শিক্ষার্থীমুখী করা? না কি শুধু নামেই থাকবে কামে ফাকি দিবে? এসব প্রশ্ন এখন ৭ হাজার শিক্ষার্থীর।#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট