স্টামফোর্ড জনসংযোগ কর্মকর্তা সুপা সাদিয়ার জীবন ও কর্ম

13557702_10153960129957670_4995557075723614601_nসুপা সাদিয়া। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার, জীবনানন্দ দাশ, সুফিয়া কামাল, মুকুন্দ দাসসহ অনেক মহতী ব্যক্তির শহর বরিশালে জন্ম ১৯৮০ সালে । বরিশাল থেকেই ১৯৯৫ সালে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ। গণিতে ও উচ্চতর গণিতে ৯০ এর বেশি নম্বর পাওয়া এবং স্টার মার্কসসহ পাশ করায় মনোরমা বসু মাসিমা বৃত্তি লাভ করেন তিনি। এরপর সরকারি ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ২০০২ সালে গণিতে স্নাতক ও ২০০৪ সালে গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন দ্বিতীয় শ্রেণীতে।বর্তমানে কাজ করছেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে। তার জীবনের পথচলা ও সফলতার গল্প আমরা তুলে ধরতে চাই তার বর্ননা থেকে ।

Post MIddle

সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন

লেখাপড়ার পাশাপাশি সুপা সাদিয়া জড়িত হয়ে পড়েন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে। ২৫ বছর ধরে বাবা যেহেতু বরিশাল উদীচীর সভাপতি সেহেতু  উদীচীর হাত ধরেই শুরু হয় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে পথচলা। তবে বয়সের কারনে সদস্য পদ না পেলেও ১৯৯৭ সালে উদীচী শিল্পী গোষ্টি, বরিশাল এর সদস্য পদ লাভ করেন তিনি। বর্তমানে ঢাকা উদীচীর সাথে কাজ করছেন।

বরিশাল নাটকের সাথে যুক্ত ১৯৯০ সাল থেকে। প্রান্তিক সংগীত বিদ্যালয় থেকে ৫ বছরের নাচের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সন্ধানী মেডিকেল ক্লাব বরিশাল এ সক্রিয় ছিলেন ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত।প্রথম আলো, বন্ধুসভা বরিশাল এর প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক পরবর্তিতে কোষাধ্যক্ষ, সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও প্রগতি লেখক সংঘের সাথে যুক্ত হয়ে মহিলা সমিতির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

কর্মজীবন

২০০১ সালে বাংলাদেশ বেতার, বরিশালে অনুষ্ঠান ঘোষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। পাশাপাশি শিক্ষানুরাগী হওয়ায় কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে ঢাকার গাজীপুরস্থ ইন্টারন্যাশনাল এঞ্জেল এসোসিয়েশন এর ইউরিকো এঞ্জেল স্কুলে গণিত বিষয়ে শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন সুপা সাদিয়া।

এরপর ২০০৬ সালের মার্চ মাসে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর জনসংযোগ বিভাগে নির্বাহী হিসেবে যোগদান এবং বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন সুপা সাদিয়া। পাশাপাশি বহির্বিশ্ব কার্যক্রম. বাংলাদেশ বেতার এ অনুষ্ঠান ঘোষক হিসেবে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল দৈনিক বাংলাদেশ সময়-এ সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

প্রশিক্ষণ

১৯৯৫ সালে টাইপ রাইটিং এবং কম্পিউটারে প্রথম প্রশিক্ষণ। সাংবাদিকতার উপর প্রথম আলো কর্তক আয়োজিত লেখাজোকা কর্মশালায় অংশগ্রহণ এবং গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট থেকে টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা কৌশল এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ ছাড়াও গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ফটেগ্রাফির উপরও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

পচ্ছন্দের কাজ

ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির অভ্যাস। ১৯৯৩ সালে প্রথম লেখা দৈনিক দক্ষিনাঞ্চল পত্রিকায় ‘চাদের দেশে মানুষ’ প্রকাশিত হয়। এরপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় শতাধিক লেখা প্রকাশিত। ২০০৫-২০০৬ সালে গণিত শিখি ০-৩, ৪ টি বই প্রকাশিত প্রিসমেটিক কালারস থেকে। ২০০৭ সালে স্মরণীয় দিনপঞ্জি প্রকাশিত জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে। ২০১১ সালে ৫২ এর বায়ান্ন নারী প্রকাশিত জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে। এর দ্বিতীয় সংস্করণ(পরিবর্ধন ও পরিমার্জিত) প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে কথা প্রকাশ থেকে। ৭১ এর একাত্তর নারী ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় কথা প্রকাশ থেকে। লেখালেখির ফলশ্রুতিতে ২০১২ সালে বাংলা একাডেমির সাধারণ সদস্য পদ লাভ। লেখালেখি, বই পড়া আর গান শোনা পচ্ছন্দের তালিকায়।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

ভবিষ্যত নিয়ে বললেন, আরও বেশি পড়তে চাই, আরও বেশি জানতে চাই, লিখতে চাই আরও বেশি। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে এগিয়ে যেতে চাই।

13466329_10153938211602670_5057863578051493065_n

পরিবার

মূলত বাঙালি পরিবার। দাদা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এর সাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন। বড় চাচা ছিলেন ন্যাপের প্রথম সারির কর্মী। একমাত্র মামা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাবা বদিউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত। মা তাহমিনা রহমান মুক্তিযুদ্ধের সাথে যুক্ত ছিলেন। এক ভাই ও এক বোন দুজনই ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত।

মুক্ত মনা মানুষ অপু হাসানের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ।

পচ্ছন্দের পোষাক : শাড়ি

পচ্ছন্দের রং: সাদা, নীল

পচ্ছন্দের গান: গানের ক্ষেত্রে আমি সর্বভ’ক। তবে রবীন্দ্র সংগীত পচ্ছন্দের তালিকায় প্রথম।

পচ্ছন্দের খাবার: ভাত-ভর্তা-মাছ আর কফি

পচ্ছন্দের ছায়াছবি: বাংলা শিল্পবোধ সম্পন্ন ছবি

পচ্ছন্দের উপন্যাস: ম্যাক্সিম গোর্কি : মা, দ্যা গড অব স্মল থিংস: অরুন্ধুতি রায়, শেষের কবিতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অন্যান্য

পচ্ছন্দের ব্যক্তিত্ব: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকান্ত ভটাটাচার্য, ক্ষুদিরাম ও সরদার ফজলুল করিম

13442367_10153928051832670_5541297761981511583_n

মনে পড়ে

শিক্ষা জীবনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব দিনই যেন বিশেষ আমার জীবনে। অসংখ্য বন্ধু পেয়েছি, পেয়েছি অনেক শিক্ষকের ভালবাসা। যখনই যে রেজাল্ট করেছি শিক্ষকদের ধারনা এর থেকে বেশি যোগ্য ছিলাম আমি। পুথিগত বিদ্যার থেকে অনেক বেশি বিচক্ষণ ছিলাম, শিক্ষকদের এ ধরনের কথাই সারা জীবনের পথের পাথেয়।

ছাত্রছাত্রীদের প্রতি

লেখাপড়া ভালো করতে প্রথম শর্ত মনোযোগী হওয়া। তবে আমি মনে করি লেখাপড়ায় ভাল করার থেকেও একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে হলে জীবনবোধের শিক্ষা খুব প্রয়োজন। একজন ভাল মানুষ লেখাড়ায় ভাল হতেই পারে। কিন্তু একজন লেখাপড়ায় ভাল কেউ ভাল মানুষ নাও হতে পারে। তাই সবকিছুর আগে আমি চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম একজন ভাল মানুষ হোক। ভালবাসতে শিখুক নিজের জনদের, অন্য জনদের। তবে আর আমাদের সন্তানেরা জংগী হতে পারবে না।

লেখাপড়া অবশ্যই করতে হবে, তার পাশাপাশি ভাল বই পড়া, গান শোনাও দরকারি। আর দরকার এই দেশকে ভালবাসতে শেখা।তবেই একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে।

পছন্দের আরো পোস্ট