আনন্দ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে “সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও মানবিক চেতনা বিকাশে উচ্চশিক্ষা”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও হল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, গবেষণা ও আবিস্কার বিষয়ক প্রদর্শনী প্রভৃতি।

 

সকাল সোয়া ১০টায় প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জাতীয় পতাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন এবং উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচী শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দিনব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। এর আগে সকাল ১০টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন হল থেকে শোভাযাত্রাসহ প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জমায়েত হন।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক র‌্যালির নেতৃত্ব দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভ্যাগত অতিথি, ছাত্র-ছাত্রী, বিএনসিসি, রোভারস্ ও রেঞ্জারস ইউনিটের সদস্যরা র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালিটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয়।

 

সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বর্তমান শতাব্দীকে জ্ঞান -বিজ্ঞানের শতাব্দী হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, আধুনিক সমাজে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান কাম্য নয়। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থানে সামরিক শাসকরা দায়ী উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান জারি করে একাত্তরের ঘাতক ও মৌলবাদীদের এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। এ ধরণের মানুষের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল করা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।

 

Post MIddle

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, এটাই সত্য। এর বাইরে যা বলা হবে তা ইতিহাসের বিকৃতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষাকে সেই উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে চাই – যেখানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ থাকবেনা।

 

মূল প্রবন্ধে রামেন্দু মজুমদার বলেন, মানবিক বোধ জাগ্রত করার একটা বড় ক্ষেত্র হচ্ছে উচ্চশিক্ষা। উচ্চশিক্ষা মানুষকে মানুষ হবার শিক্ষা দেয়, মানবিক গুণাবলীর উৎকর্ষ সাধনে উদ্বুদ্ধ করে এবং সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে যুক্তি দিয়ে তাকে সবকিছু বুঝাতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসাবে মানববিদ্যার চর্চা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় কেবল শিক্ষার কেন্দ্র নয়, তার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞান চর্চা।

 

শিক্ষার আলো জ্বালানো ছাড়া মনের অন্ধকার দূর করা যাবে না। দেশের সব মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে পারলে আপনা আপনিই দূর হবে সকল অন্ধবিশ্বাস ও ভ্রান্তি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে উঠে মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য গৌরবের অংশী হয়ে আমাদের সত্যিকার মানুষ তৈরির শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে হবে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে দুর্লভ পা-ুলিপি প্রদর্শনী, কার্জন হলে বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও গবেষণা প্রদর্শনী এবং চারুকলা অনুষদে চিত্রকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

 

এছাড়া উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গতকাল ৩০ জুন ২০১৬ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপী নিজস্ব কর্মসূচী গ্রহণ করে। এ উপলক্ষে হল, বিভাগ ও অফিসসমূহ আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা ছিল। ##

পছন্দের আরো পোস্ট