সংস্কৃতির মিলনমেলা জাবির টিএসসি

ju tscআমার হার কালা করলাম রে……আরে আমার দেহ কালার লাইগা রে……..মনোমুগ্ধকর এই গানের সুর ভেসে আসছে একটি কক্ষ থেকে। একটু উঁকি দিয়েই দেখা গেল এ দৃশ্য শুধু ঐ কক্ষেই নয়, গানের কক্ষের পাশেই একটি ছোট জটলা থেকে ভেসে আসছে তা তা থই থই, তার সঙ্গে নৃত্যের তালে ঘুঙ্গরের শব্দ। তার পাশের একটি কক্ষ হতে শোনা যাচ্ছে যেন নজরুলের বজ্র কন্ঠের আওয়াজ “বল বীর ,বল মম উন্নত করি শির….।

 

বলছিলাম ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) কথা। পড়ন্ত বিকেল থেকে গোধুলী পর্যন্ত এহেন দৃশ্য শুধু জাবির টিএসসিতেই দেখা যায়। এ যেন সংস্কতির আঁকড়াখানা, সংস্কৃতির মিলনমেলা ! মোট ১০ টি সংগঠন নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটটি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলো হল: কাল বৈশাখী, সুস্বর, আনন্দন, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, ধ্বনি, জলসিঁরি, ঘীতনাট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিধ্যালয় ডিবেট অর্গানাইজেশন(জুডো) ইত্যাদি। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়ন ও দেশের সংস্কৃতিকে লালন করেছে। এই কেন্দ্রটিকে ঘিরেই এখানের সাংস্কৃতিক আসর।

 

Post MIddle

সংস্কৃতি রাজধানী খ্যাত জাবিকে অনেকেই আদর করে ‘জানবিবি’ বলে ডেকে থাকেন। যার পরতে পরতে রয়েছে নাচ, গান, কবিতা, আবৃত্তি, নাটক। এই সংগঠরনগুলো যেন প্রাণের প্রয়াস ! যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে এনে দেয় এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের ছোঁয়া। সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সুস্বর। কথা হলো সংগঠনের সদস্য রেজওয়ান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠাকাল (২০১৪) হতেই মাটি-মানুষের গান ও হারিয়ে যাওয়া আমাদের সংস্কৃতির বাদ্যযন্ত্রকে ব্যবহার করে ‘শুৃদ্ধ সংগীতের প্রসারে’ কাজ করে।‘ আনন্দন ’ একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন। ‘বিক-শিত মেধায় লড়ব একুশ শতক’ স্লোগানকে ধারণ করে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। রবীন্দ্র, নজরুল, লোকজ ইত্যাদি গানে সংগঠনের কর্মীরা মোহিত করে রাখে মুক্তমঞ্চের হাজারো দর্শক।

 

এতো গেল গান, এবার নাচের দিকে ফেরা যাক। নাচের কথা বলতেই প্রথমে আসে কালবৈশাখী ও ঘীতনাট এর কথা। কাল বৈশাখী! নামটি শুনলেই কেমন যেন মনের ভেতর এক ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। গান আর নাচ না হয় হলো। তাই বলে একটু কবিতার স্বাদ পাব না তা তো আর হবে না। তাহলে আর দেরি কেন? চলে আসুন ধ্বনির কাছে। মনে হয় যেন শব্দ আর বাক্য নিয়ে খেলা করে সে। কি তার তেজ! বজ্রের মত তার কন্ঠ। এত কিছুর মাঝেও নিজেকে যদি একটু যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে চলে আসুন ‘জাহাঙ্গীরনগর ডিবেট অর্গানাইজেশন (জুডো) তে। ২০০৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘খবঃ নব ষরমযঃ বহবফ’ স্লোগানকে সামনে রেখে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। আর নাটক কথাটি স্মরণ করতেই সামনে চলে আসে মঞ্চনাটকের প্রবাদ পুরুষ সেলিম আল দীনের কথা। তাঁর হাতের ছোঁয়াতেই বিখ্যাত হয়ে আছে জাবির নাট্য সংগঠন ‘জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার’। তিন যুগ ধরে এই সংগঠনটি তাদেও পরিবেশনা দিয়ে দেশের সংস্কৃতিকে আরেক ধাপ তুলে ধরতে কাজ করছে নিরলস ভাবে। তবে যে সংগঠন গুলোর কথা বলা হল তাদের মূল চালিকা শক্তি ও প্রাণবায়ূ হল শিক্ষার্থীরা। তাদের পদচারণা ও ঘামের ফসলই হল টিএসসির সংস্কৃতি।

 

সাংস্কৃতিক জোটের বর্তমান সভাপতি জুবায়ের টিপু বলেন, ‘বিভিন্ন উপলক্ষ্যে সংগঠনগুলো ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তবে বিভিন্ন সময়ে খুন,হত্যা এবং তনু হত্যার প্রতিবাদে আমরাই এগিয়ে আসি । এ বিষয়ে বিভিন্ন নাটক মঞ্চে উপস্থাপন করি। এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার কারণে মাঝে মাঝে কাজ করতে সমস্যা হয়।’ শিক্ষকদের নির্দেশনার মাধ্যমে এই সংগঠনগুলো চলার শক্তি পায়। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে লালন করি, ধারণ করি নিজের হৃদয়ে। হয়ত কখনো কখনো কোন ছলনায় ভুলে থাকার প্রয়াস চলে আসে নিজের মনে। আর ঠিক তখনই নিজের অস্তিত্বের কথা স¥রণ করিয়ে দিতে ভুল করে না এই সংগঠনগুলো। আর তার পরিপূর্ণ রূপ দেয় প্রিয় জানবিবি টিএসসি। এ যেন সংস্কৃতির মিলন মেলা, যেথায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ও ঐক্যমত্য। #

পছন্দের আরো পোস্ট