ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ

21-5-16ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে দু’দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা প্রশিক্ষণ কোর্স’র সমাপনী অনুষ্ঠান গতকাল (২১ মে ২০১৬) শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন।

 

সনদ বিতরণ শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের এক অসাধারণ ঘটনা। প্রতি মাসে, প্রতিদিনে কত মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, গণহত্যার শিকার হয়েছে; পৃথিবীতে তা এক বিরল ঘটনা- যা ছিল ‘হাই ভোল্টেজ জেনোসাইড’। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে তা নিজের প্রজন্মের কাছে যার যার কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। উপাচার্য আরও বলেন, শুধুমাত্র কলা কিংবা মানববিদ্যা অনুষদ নয়, সকল অনুষদের ছাত্র-ছাত্রী-গবেষক-শিক্ষক অংশ নেবেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায়, যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে জানতে হবে। সামরিক এবং সিভিল নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে, তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যের সাথে নতুন প্রজন্মের সাথে যোগসূত্র সৃষ্টি করতে হবে। তাই কিছুদিন পর পর এ ধরনের কর্মসূচী গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের প্রতি উপাচার্য পরামর্শ দেন।

 

উপাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ । দিব্যদৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যতকে দেখেছিলেন। তিনি যে মুক্তির কথা বলেছিলেন সে ভিত্তিতে তাঁরই নেতৃত্বে রাজনৈতিক মুক্তি আমরা অর্জন করেছি। অর্থনৈতিক মুক্তি, কুসংস্কার থেকে মুক্তি তথা সার্বিক সামাজিক কল্যাণের জন্য আমাদের মুক্তির লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। উপাচার্য প্রশিক্ষণার্থীদের বলেন, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তির বিষয়ে প্রতিবাদ আসে। এদেশের কিছু মানুষ রাজনীতির নামে মানুষ হত্যা করছে- এসব হত্যাকা-কেও তারা সমর্থন করে। এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ যে অপপ্রচার করছেন সেসবের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আজ এই তরুণ প্রজন্মকে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ পৃথিবীতে গণহত্যা সমর্থনযোগ্য নয়, আজও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে বিচার অব্যাহত রাখতে হবে।

 

Post MIddle

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৫জন শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষকরা ছিলেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মেজর (অব:) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক ড. সোনিয়া নিশাত আমিন, অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, ড. আকসাদুল আলম, জনাব মুফিদুল হক, জনাব আফসান চৌধুরী, প্রমুখ।

 

গত ২০ মে ২০১৬ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে দু’দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা প্রশিক্ষণ কোর্স’র উদ্বোধন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করেন।

 

অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান উদ্বোধনকালে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সামরিক নেতৃত্ব, ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-শ্রমিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক-কর্মীদের এমনকি শরণার্থীদেরও ভূমিকা ছিল বলে উল্লেখ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপকরণের বিভিন্ন দিক আছে, জাতীয় ক্ষেত্র ছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন দেশের ভূমিকা, প্রবাসীদের ভূমিকা, জাতিসংঘের ভূমিকা সম্পর্কে জানবার উপকরণ আছে নানা মাত্রায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যেও সার্বজনীন অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়েই সংগঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ।

 

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বাঙালি জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায় সকলের সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতে সংগঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল-এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জনসাধারণের সমর্থন নিয়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পর্যায়ক্রমে। বিশেষত ছয় দফা আন্দোলনের আবেদন, সত্তরের নির্বাচনে এই জনসমর্থন নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক অর্জন। পরিশেষে কর্মসূচীর উদ্বোধন করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রশিক্ষণার্থীদের অভিনন্দন ও প্রশিক্ষকদের ধন্যবাদ জানান। হাতে-কলমে গবেষণা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করার মধ্য দিেেয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর সাফল্য কামনা করেন তিনি।

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট