‘সরকারি কলেজগুলোতে ৩৪৭৫ শিক্ষকের পদ খালি’
শিক্ষকসংকট ও নেতিবাচক ছাত্ররাজনীতি সরকারি কলেজগুলোর জন্য বড় সমস্যা বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষেরা। তাঁরা বলেছেন, কলেজে ভর্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অছাত্র ছাত্রনেতারা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী ‘সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সম্মেলনে’ শিক্ষামন্ত্রীকে এসব সমস্যা ও সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষেরা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকসংকটের কথা উল্লেখ করে বদলির ক্ষেত্রে তদবিরের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এ কাজে যত লোক আসেন, তাঁদের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনই ঢাকায় থাকতে চান। ক্ষমতাবান অনেকের কাছ থেকে অনেকে লিখিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁদের উদ্দেশে বলছি, এখন থেকে বদলির জন্য সবাইকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কেউ যদি এটি না করে কারও কাছ থেকে লিখিয়ে আনেন, তাহলে সেটা নেতিবাচক হিসেবে গণ্য হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, একটি কলেজে ৩৭টি পদ আছে। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। সবার শুধু ঢাকা ভালো লাগে। ঢাকার বাইরের ছেলেমেয়েরা কি পড়বে না? মন্ত্রী বলেন, তাঁর নিজ এলাকার কলেজেই শিক্ষকসংকট রয়েছে বলে পত্রিকায় এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ১৮ লাখের বেশি। এসব কলেজে শিক্ষকের পদ আছে ১৬ হাজার ১৪১টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭৫টি পদ খালি।

অধ্যক্ষদের বক্তব্য পর্বে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তাঁর কলেজে ৫৬ পদের মধ্যে ২৬টি পদ ফাঁকা। প্রাণিবিদ্যা ও গণিতে একজনও শিক্ষক নেই। তিনি মফস্বল এলাকার কলেজে যাতে শিক্ষকেরা থাকেন, সে জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দাবি করেন। শিক্ষকসংকটের কথা উল্লেখ করে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মতিন মিয়া বলেন, মাউশিতে আবেদন-নিবেদন করেও কাজ হচ্ছে না।
খুলনার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষেরা ছাত্রনেতাদের জ্বালা-যন্ত্রণা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বলে জানান সুন্দরবন কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওয়াহিদুজ্জামান। সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ সচীন কুমার রায় বলেন, যাঁরা অছাত্র হয়েও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁরাই ব্যাপকভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সরকারি ভিকু মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল ইসলাম শিকদার বলেন, ছাত্ররাজনীতি অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সারা জীবন ঢাকায় চাকরি করার সুযোগ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্গম এলাকার কলেজের জন্য আলাদা ভাতা রাখা উচিত। অধ্যক্ষদের অবহিত না করে বদলি না করার অনুরোধ জানান ভোলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পারভীন আখতার।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে পদ সৃষ্টি না হওয়ায় বাংলা কিংবা ইংরেজির শিক্ষক দিয়ে আইসিটি পড়ানো হয়। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন। এটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ছাড়া আর কিছুই নয়। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় অধ্যক্ষদের বসার জন্য আসন রাখা হয় না, পেছনে বসতে হয় বলে অভিযোগ করেন শরীয়তপুর কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন।
সভায় মফস্বল এলাকার কলেজগুলোতে তীব্র শিক্ষকসংকটের কথা উঠলেও ঢাকা শহরের চিত্র উল্টো। সঞ্চালকের বক্তৃতায় মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ৩২৯টি কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১২ জন অধ্যক্ষ শিক্ষকসংকটের কথা জানিয়েছেন। তবে ঢাকা কলেজে ২০০ পদের বিপরীতে আছেন ২২৪ জন, তিতুমীর কলেজে ১১৭ পদের বিপরীতে ১৯৮ জন ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ২৩ পদের বিপরীতে ৪৮ জন। মাউশির মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইনসহ বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষেরা।#
আরএইচ