শেষ হলো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ
গতকাল (২৩ এপ্রিল) শনিবার নানা উৎসাহ উদ্দীপনা ও দুই শতাধিক অংশগ্রহণকারীর মাধ্যমে ঢাকায় শেষ হলো যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আয়োজিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০১৬’। বিশ্বের ২২০টিরও বেশি নগরীর মতো বাংলাদেশ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতা শনিবার সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হয়।
ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি)-এ টানা ৩৬ ঘন্টার চূড়ান্ত হ্যাকাথন শেষে আয়োজিত সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বেসিস সভাপতি শামীম আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউবির উপাচার্য প্রফেসর এম ওমর রহমান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন নাসার প্রধান বিজ্ঞানী এলেন রিনি স্টোফান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসিসের পরিচালক ও নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের আহ্বায়ক আরিফুল হাসান অপু।
বাংলাদেশ পর্বে বিজয়ী ও চ্যাম্পিয়ন যথাক্রমে ঢাকা অঞ্চলে উইনগার ও গার্ডিয়ান অব দ্য এয়ার, রাজশাহী অঞ্চলে মৈত্রী : দ্য ড্রোন এইডার ও ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই সিস্টেম ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ট্রাকইট ও প্রজেক্ট জেদ। অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও সকল অংশগ্রহণকারীদের কাছে সনদপত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা দেশে আন্তর্জাতিকমানের উদ্যোগ তৈরিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ১০০০ উদ্ভাবনী প্রকল্প, কানেক্টিং স্টার্টআপস বাংলাদেশ, ইনোভেশন ফান্ড, ন্যাশনাল হ্যাকাথন, ন্যাশনাল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট প্রতিযোগিতা, প্রোগ্রামিং কনটেস্টসহ নানা আয়োজন রয়েছে। বেসিসের আয়োজনে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে আমাদের তরুণরা মহাকাশ সম্পর্কিত বেশ কিছু ভালো প্রকল্প তৈরি করেছে যেগুলো এই প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভালো করবে বলে প্রত্যাশা করি।
বেসিস সভাপতি শামীম আহসান বলেন, দেশে দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এবারের আয়োজনে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য আইডিয়া বের হয়ে এসেছে। আমরা মনে করি সেদিন আর বেশি দুরে নয়, যেদিন বাংলাদেশের তরুণদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নাসাতে সাড়া ফেলবে। এছাড়া নাসার মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিদের চাকরি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ঠতা বাড়বে। বাংলাদেশেই তৈরি হবে নাসার মতো প্রতিষ্ঠান।
আইইউবির উপাচার্য প্রফেসর এম ওমর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পর্বের দুটি আয়োজনেই সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। আমি প্রত্যাশা করি এই আয়োজনের মাধ্যমে বেশ কিছু ভালো উদ্ভাবন বেরিয়ে আসবে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এ ধরণের উদ্যোগে আগামীতেও আমরা পাশে থাকবো।
নাসার প্রধান বিজ্ঞানী এলেন রিনি স্টোফান বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের উৎসাহ দেখে আমি অনুপ্রাণিত। আমি প্রত্যাশা করি তারা ভালো করবে। এসময় প্রতিমন্ত্রী তাঁকে আগামী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেটি সাদরে গ্রহণ করেন ও বাংলাদেশের আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এবারের আয়োজনে মহাকাশে নভোচারীদের নিরাপত্তা, আবহাওয়া, তথ্য ইত্যাদি সম্পর্কে আইডিয়া, অ্যাপস, গেইমের মাধ্যমে নানা সমাধান নিয়ে হাজির হয় অংশগ্রহণকারীরা। বিশেষজ্ঞ মেন্টরদের সহযোগিতায় সেগুলো আরও উন্নত করে উপস্থাপনের প্রয়োজনীয় সকল সুবিধাই দেওয়া হয় তাদের। এরপর বিজ্ঞ বিচারকদের সাথে অংশগ্রহণকারী প্রজেক্টগুলো যথাযথ যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ পর্বের বিজয়ীদের নাম ঘোষনা করা হয়।
সম্প্রতি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আঞ্চলিক পর্যায়ের ফাইনাল বুটক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক পর্যায় থেকে নির্বাচিত ৫০টি দলে মোট ২০০ জন চূড়ান্ত হ্যাকাথনে অংশ নেয়। বাংলাদেশ পর্যায়ের এই চূড়ান্ত হ্যাকাথন থেকে বিজয়ীরা নাসার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
উল্লেখ্য, গতবারের মতো বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতার আয়োজক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। এবারের প্রতিযোগিতার সহযোগিতায় রয়েছে বেসিস স্টুডেন্টস ফোরাম ও ক্লাউডক্যাম্প বাংলাদেশ। পৃষ্ঠপোষকতা করছে বাগডুম ডটকম, পিবাজার ডটকম ও পিপলএনটেক। এছাড়া অ্যাকাডেমিক পার্টনার হিসেবে থাকছে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি।