মন হারানোর দিন পহেলা বৈশাখ

13036438_1745554575716192_1265454166_oদুগন্ড বেয়ে অঝোরে ঘাম ঝরছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। প্রচ- তাপমাত্রায় গায়ের লাল পাঞ্জাবিও অর্ধেক ভিজে গেছে। সেদিকে না আছে কোন খেয়াল, না আছে কুছপরোয়া। ঢাকের তালে মনোযোাগ চলে গেছে একদিকেই। পহেলা বৈশাখ।

 

বাঙালির ঐতিহ্য গরুর গাড়িতে বসে আছেন নববধূ। পাশে রুমাল মুখে নতুন বর। গরুর গাড়ির চাকার চিরচেনা শব্দ আর হেলেদুলে চলার চিত্র আজ পহেলা বৈশাখের জানান দেয়। সেই সাথে ঢাকের তালে তালে গাছের ডালে ডালে উৎসবের ছোঁয়া। তার সাথে মেতে উঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ সকল পর্যায়ের মানুষ।

 

পহেলা বৈশাখ ১৪২৩। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালির এক মহাসম্মেলন। চৈত্রের শেষ হতে না হতেই বাংলার মানুষের মাঝে ফিরে আসে উৎসবের ছোঁয়া। সারা দেশে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করা হয় এক মহাসমারোহে। যার আমেজে মেতে উঠে রাজশাহী বিশ্¦বিদ্যালয়।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রতিটি বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজন করে। আর শোভাযাত্রা শেষে চলেছে পান্তা খাওয়ার ধুম। যেখানে অংশগ্রহণ করে ধর্ম-বর্ণ সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। প্রাণোচ্ছল এক উৎসবের আমেজে তারা রাবিতে বরণ করে নিয়েছে পহেলা বৈশাখকে।

 

Post MIddle

12980858_1745554109049572_913114896_oভোরের সূর্য প্রচ- তাপমাত্রার আভাস দিলেও তা উপেক্ষা করে পাঞ্জাবি আর রঙিন শাড়ির পড়ে ক্যাম্পাসে ভীড় জমাতে থাকেন সবাই। প্রতিটি বিভাগ থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে সবাই জমায়েত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আঙিনায়। যেখানে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখের উদ্বোধন করেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজান উদ্দিন। তারপরই শুরু হয় বিরাট মঙ্গল শোভাযাত্রা।

 

সাদা পাঞ্জাবি আর মাথায় গামছা বাধা। ফর্সা গালে সাদা আর হলুদ রঙে লেখা শুভ নববর্ষ ১৪২৩। চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ফাহিম খান। প্রচ- গরমে সামান্য ক্লান্তির ছাপটুকুও নেই চোখে-মুখে। জানালেন, চারুকলা অনুষদ থেকে প্রতিবছরই ্আয়োজন করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার। আর তার সাথে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। যেখানে এবারও বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী নাচ- গান যেমন, গম্ভীরা, ভাওয়াইয়া ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালির সার্বজনীন সংস্কৃতি।

 

কখনো বিভাগের সামনে অথবা ক্যাম্পাসের খোলা জায়গায় প্যান্ডেল বসিয়ে আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন নাচ-গান-আবৃত্তিতে। ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক-সাংবাদিক সংগঠনগুলোও নিয়ে এসেছে ভিন্ন মাত্রা। পহেলা বৈশাখের আগে থেকেই বিভিন্ন নাটক, গান আর নৃত্যের মহড়ায় দক্ষ করে তুলেছে নিজেদের। এসব গান-নাটক আর নৃত্যের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছে বাংলার সংস্কৃতি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিজভী আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথমবার উদ্যাপন করলেন বাংলা নববর্ষ। রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। মুখে স্বতস্ফুর্ত হাসি। জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো উদ্যাপন করেছি পহেলা বৈশাখ। অসাধারণ অনুভুতি। সত্যিই মন হারানোর একটি দিন। বাঙালি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যেকে লালন করে নতুন বধু বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ এসেছে বাংলার বুকে। আর তার পূর্ণ ছোঁয়ায় মেতে উঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। উপলক্ষ, এ দিনটির মতোই সারা বছর সকল বাঙালি মিলে এক সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে চলবে। যাতে বাঙালির চলার পথটা হয় সুন্দর। দীর্ঘায়ু হয় আগামীর পথে।#

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট