জুয়েলের ফ্রেন্ডশিপ স্কুল বঞ্চিত শিশুদের পাশে

Jnu Special pic
সমাজের অবহেলিত, অসচ্ছল ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এগিয়ে আসেন অনেকেই। কিন্তুু ক’জনই বা হয়ে ওঠেন জুয়েল আহমেদ? জুয়েল, জগন্নাথ বিশ্বদ্যিালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন ফ্রেন্ডশিপ স্কুল নামের একটি বিদ্যায়তন। অসচ্ছল ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের খুঁজে বের করে স্কুলে নিয়ে এসে বিনা খরচে শিক্ষা দিচ্ছেন জুয়েল আহমেদ। এ জন্য তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে ছুটে চলেন নিজ জেলা টাঙ্গাইলে। আবার শনিবার রাতেই স্বপ্নের ফ্রেন্ডশিপ স্কুল ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়।

 

 

টাঙ্গাইলে জুয়েলের বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে ওঠা এই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি, আজ অমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি। এভাবেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দীনসহ বহু কবির কবিতা ও ছড়া ছন্দ মিলিয়ে পড়ে চলেছেন এক দল শিশু। ছড়ার ছন্দে মুখরিত পুরো এলাকা। কিন্তু শিশুদের মাথার উপর খোলা আকাশ। সেখানে সুর্যের প্রখর রোদের তিব্রতা রক্ষায় একটি বড়ই গাছ। মায়ের আচঁলের মত আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে গাছটি। এরা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশু। সেই মা বড়ই গাছটির মতই শিশুদের আধুনিক শিক্ষার আলো জ্বালাতে বাবা ভূমিকায় এগিয়ে এসেছেন জুয়েল।

 

জানাযায়, ছোট বেলা থেকেই নাকি জুয়েল আহমেদ স্বপ্ন দেথতেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলোতে আলোকিত করার। ধীরে ধীরে তিনি স্কুল জীবনে স্বপ্নের আলো জ্বালাতে থাকেন। ঝরে পড়া শিশুদের বাসা বাড়ি কিংবা বস্তিতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতেন। ২০১০ সালের দিকে তিনি অনুধাবন করেন এভাবে একার পক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই তিনি আট জন সদস্য নিয়ে হিউম্যানিটি ফর পিপল্স নামে একটি সেচ্চাসেবী ও শিক্ষামূলক সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠনের সকল সদস্যের উদ্বেগে গঠিত স্কুলটি জুয়েলের বাড়িতেই খোলা হয়।স্কুলের এই শাখায় শিক্ষক রয়েছেন চার জন। তাদের নামে মাত্র দুই হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। যা জুয়েল নিজে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের টিউশনি করে আয়কৃত টাকা দিয়ে পরিশোধ করেন। সেখানে কথা হয় সুবিধিবঞ্চিত শিশু দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাখি আক্তার সঙ্গে। রাখি বলেন, আমার বাবা রংয়ের কাজ কররেন। আপা-ভইয়ারা (শিক্ষক) আমাগো অনেক আদর করে পড়ান। বকা দেন না। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান বলেন, আমার আব্বু মাছ বেচে। আম্মু মানুষের বাড়িতে কাজ করে। স্যাররা অনেকগুলা ছড়া শিখাইছে।

 

ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের একজন উদ্যেক্তা ও শিক্ষিকা মাহবুবা মনি বলেন, এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে কাজ করতে অনেক ভালো লাগে। ওদের পাশে থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। তবে জুয়েল ভাই আমাদের খুশি হয়ে যখন যা দেন আমরা খুশি হয়ে তাই নিয়ে থাকি।’ সুবিধাবঞ্চিত শিশু রাহুলের মা ময়না বেগম বলেন, জুয়েল ভাই প্রথম যখন স্কুল খোলে আমার ছেলে রাহুলকে ভর্তি করিয়ে দেই। এখন সে বাংলা ইংরেজি ছাড়া ও নামতা পড়তে পারে।’

 

ইলিজা বেগম বলেন, ফ্রেন্ডশিপ স্কুলে আমার তিন সন্তান পড়াশুনা করে। তার একজন আবু জিহাদ পঞ্চম শ্রেণীতে, রিয়াদ চতুর্থ শ্রেণী ও এশা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমার সন্তান মানুষ করারা জন্য জুয়েলের অবদান অনেক বেশি। আল্লাহ ওরে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখুন।’

 

Post MIddle

জুয়েলের পিতা আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। আমি তাকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছি। সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা তার কাজের প্রসংশা করছে। এসব কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারতের একাধিক শিশু সংগঠন আমার ছেলেকে পুরস্কার দিয়েছে, এ জন্য পিতা হিসেবে আমি গর্বিত।

 

কথা হয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা জুয়েল আহমেদের সাথে।তিনি জানান, বর্তমানে স্কুলটির চার শাখায় ১৪০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু পড়াশোনা করছে। তাদের পাঠ দিচ্ছেন মোট ৯ জন শিক্ষক।এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন দিতে গিয়ে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছেন জুয়েল। ওই শিশুদের লেখাপড়া এগিয়ে নেয়ার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা করার আহবান জানান তিনি।

 

টাঙ্গাইল সদর পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরন জানান, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে গড়া এ স্কুল নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। জুয়েলের সঙ্গে আমিও শিশুদেও জন্য কিছু করতে চাই।

 

 

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বলেন,কিছুদিন আগে আমি ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের কথা শুনেছি। স্কুলটি পরিচালনার জন্য সাহায্যের আবেদন পেলে আমি সব ধরনের সহযোগিতা করবো।#

 

 

আরএইচ

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট