নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন সংকট

আয়তনে খুবই সীমিত আকারের হলেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তথা ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আশেপাশের জেলাগুলো তথা নবগঠিত বিভাগের আওতাধীন জেলা সমুহের কাজে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে চলেছে। এই অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার চাহিদা মেটাতে বেশ অগ্রণী ভুমিকা রেখে যাচ্ছে এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ সফলতা লাভ করলেও বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যায় এর শিক্ষার্থীদের জর্জরিত করে রেখেছেন। তার মধ্যে প্রধান একটি সমস্যা হল পরিবহনের চরম সংকট পর্যাপ্ত পরিবহন না থাকায় প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়মনসিংহ শহর থেকে শিক্ষার্থীদের বাসের ছাদ, দাঁড়িয়ে কিংবা বাঁদুরঝোলা হয়ে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে ।

IMAGW (3)বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল পৌর শহরের নামাপাড়ায় কবির স্মৃতিবিজরিত বটতলার কাছে ২০ একর জমিতে যাত্রা করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে ৩৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করলেও এখন ১৬টি বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০০০ হাজারের অধিক।  বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪২ একর জমিতে সম্প্রসারণ হলেও অগ্নিবীণা ও দোলনচাঁপা দুটি আবাসিক হল ছাড়া অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পুর্নাংঙ্গ হল প্রতিষ্ঠিত হয়নি।সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায় দুটি হলের মধ্যে মেয়েদের জন্য একটি নতুন হল,সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ,ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এবং শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরির কাজ চলমান আছে।

 

শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো পরিবহন ব্যবস্থা ছিল না। ত্রিশাল পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অজোপাড়াগাঁয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি হওয়ায় এখানে বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই শিক্ষার্থীদের ময়মনসিংহ শহর থেকে এসে এখানে ক্লাস করতে হয়। পর্যাপ্ত আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্থানীয় বিভিন্ন মেসে থেকে ময়মনসিংহ শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করেন।

 

শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০০৮-২০০৯ সালের দিকে ময়মনসিংহ শহর থেকে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বেশ কয়েকটি বাস ভাড়া করা হয়। পরে ভালুকা থেকে একটি বাস চালু করা হয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি বাস রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভাড়া করা ও চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব। সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংকের দেয়া একটি বাসের কারণে কিছুটা সংকট কমলেও আবাসিক হল না থাকায় শিক্ষার্থীরা বাইরের বাসেও ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করছেন। এছাড়া দুটি মিনিবাস চালু আছে। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য দুটি মাইক্রোবাস, দুটি জিপ ও একটি প্রাইভেট কার রয়েছে।

 

শিক্ষার্থীরা বলেন, আটটি বাসে একসঙ্গে গাদাগাদি করে সর্বোচ্চ ৫০জন শিক্ষার্থী আসতে পারেন। কিন্তু সেখানে প্রতিদিন আসা যাওয়া করছে ৮০-৯০জন শিক্ষার্থী। অবস্থা তখন এমনই দাড়ায় কোথাও তিল ধারনের জায়গা থাকে না। এছাড়া অন্যদের বেসরকারী লোকাল লক্কর ঝক্কর বাস ছাড়া আসার উপায় নেই। পর্যাপ্ত বাস না থাকায় সময়মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া ভাড়ায় চালিত বাসের ফিটনেস সমস্যাও রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।

 

Post MIddle

এই বছর ইতোমধ্যে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে আরো নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি  হয়েছে। তার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, বিভাগ সব কিছুই বেড়েছে কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনের কোন উপায়। এসব সংকট দিনকে দিন আরো বাড়বে বলেও জানান তারা।

 

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মেয়েরা বেশি সমস্যায় পড়েন বাসে উঠতে গিয়ে। তাদের জন্য নির্ধারিত কোনো বাস নেই আর বাস থাকলেও নেই নির্ধারিত কোন আসন সংখ্যা। ছেলেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই বাসে উঠতে হয়। প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মেয়েরা। আবাসিক হলে জায়গা না পেয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মেসে বাস করেন। শহরের মেস থেকে ত্রিশালের ক্যাম্পাসে আসতে তাদের নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ত্রিশাল ক্যাম্পাস থেকে ময়মনসিংহ শহরের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। এ পথ পাড়ি দিতে তাদের প্রতিদিন গুনতে হয় অন্তত ৯০-১০০ টাকা। একে তো বাস নেই, দ্বিতীয়ত ভাড়া বেশি। শহর থেকে ত্রিশালের বাস ভাড়া ২৫ টাকা। ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ক্যাম্পাসের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। এ দুই কিলোমিটারের রিকশাভাড়া ৩০ টাকা। ভ্যানে চড়লে ১০ টাকা।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, শিক্ষার্থীদের বাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চেষ্টা করছে।এ সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই।

 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত-উল-আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

 

জানা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নখাতে আরো ২৫০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন বাজেটের অনুদান দেয়া হয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন একটাই স্বপ্ন পিয়াসু হাজারো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এই উন্নয়ন বাজেট এর বাস্তবায়ন কতটুকু করবে এবং সেই বাস্তবায়নটাই শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রয়োজনীয় কতটা রসদ জোগানোর উপযোগী হবে? দেশের অন্যান্য বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এর চেয়ে বেশি বাজেট পাস হয় তবে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় খাতে অর্থ ব্যয়ে সংকীর্ণতার প্রমান অহরহ দেখা যায়। কিন্তু কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শির্ক্ষার্থী এটা আশা করেন, যাতে এই বাজেটের চেয়ে বেশি সেবার মান বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারে, যাতে সরকার এবং সংশ্লিষ্টরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার প্রতি আরো বেশি মনযোগী হন। তবে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পারবে কি পারবে না তা দেখার অপেক্ষায় সবাই।#

 

 

লেখাপড়া২৪.কম/ওয়াহিদ/আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট