‘পৃথিবীর সব থেকে আশাবাদী জাতি এখন বাংলাদেশে’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানবলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির গল্প এখন শুধু বাঙালির কাছেই নয়, সারা বিশ্বেই কৌতুহলের বিষয়। তাঁরা জানতে চায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী এমন ঘটেছে যার ফলে বিশ্বমন্দার মধ্যেও দেশটি গত এক দশক ধরে গড়ে ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। জিডিপি’র ভিত্তিতে দেশটির স্থান এখন বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম।’
শনিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম আয়োজিত ‘জীবনের কথা, অর্থনীতির কথা’ শীর্ষক গণ বক্তৃতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চত্বরে আয়োজন করা হয় এই গণ বক্তৃতার। গভর্নরের বক্তৃতা শুনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী সেখানে অংশ নেই। বক্তৃতা শেষে দর্শকদের থেকে আসা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন গভর্নর।
বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ‘গ্যালপ’-এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই সংস্থাটির মতে পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী জাতি এখন বাংলাদেশে। অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিচারে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। বিশ্ব আজ জানতে চায়, সামাজিক উন্নয়নের কী এমন ঘটেছে এখানে-যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর। এ ক্ষেত্রে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে চার-পাঁচ বছর পেছনে ফেলে দিয়েছি। শিশু মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ এরই মধ্যে জাতিসংঘ পুরস্কার অর্জন করেছে। সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর মাতৃসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। যেখানে ভারত ১৪০তম এবং পাকিস্তান ১৪৯তম।’
এসময় গভর্ণর বলেন, ‘বাংলাদেশে ১০ টাকায় ব্যাংক খোলার হিসাবের সংখ্যা এখন দেড় কোটি আর মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব তিন কোটির বেশি। দেশের অর্থনীতির গল্প এখন শুধু বাঙালির কাছেই নয়, সারা বিশ্বের কাছে এক কৌতুহলের বিষয়।’
বক্তৃতায় তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘এই দেশের বেশিরভার মানুষ গ্রাম থেকে উঠে আসে। আমিও গ্রামেই বড় হয়েছি। অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করেছি। তাই তোমরা যারা কষ্ট করে পড়াশোনা করছো তারা হতাশ হবে না। অধ্যাবসায় থাকলে তোমারা সামনে এগিয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
গভর্নর আরও বলেন, ‘বতর্মান সময়ে আমাদের সব সূচকেই স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। আমদানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে। সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যের হার, গড় আয়ুসহ অনেক সূচকেই ইতিবাচক পরিবর্তন এখন লক্ষ্যণীয়। সেই সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কমেছে মূল্যস্ফীতির হারও। তা ছাড়া দারিদ্র্য প্রায় ৬০ ভাগ থেকে ২২ ভাগে নেমে এসেছে। টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল ও জোরালো অবস্থায় রয়েছে।’
বর্হিবিশ্বের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ‘সারা পৃথিবী জানতে চায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কি এমন ঘটেছে যার ফলে বিশ্বমন্দার মধ্যেও দেশটি গত কয়েক দশক ধরে গড়ে ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। সামাজিক উন্নয়নের ফলে এদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। এক্ষেত্রে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে চার-পাঁচ বছর পেছনে ফেলে দিয়েছি।’
বাংলাদেশ এখন নি¤œ আয়ের দেশের গ্লানি ঘুচিয়ে ‘নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশের’ মর্যাদা লাভ করেছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা মধ্যম আয়ের দেশের গৌরব অর্জনে বদ্ধপরিকর বলে মন্তব্য করেছেন আতিউর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চত্বরে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাঠক ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন শুভ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পাঠক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আরিফ হাসনাত।
এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরামের ভবন নিমার্ণ কাজের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ।