আমার কেটে যাওয়া ৩৬৫ দিন
ছেলেবেলা ছিল চট্টগ্রামে । কিভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকলাম সে গল্প দূরে থাক । দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিতরে এই বশেমুরবিপ্রবি যে একটা বিশাল জায়গা তা ভর্তির পরেই বুঝা যায় । আমার লেখা কেবল নবীনদের জন্যই । তাদের প্রতি হওয়া অপসংস্কৃতির প্রতিফলনের বিরুদ্ধে । হ্যা ক্যাম্পাস র্যাগিং বন্ধ হোক এটাই আমার না এ পৃথিবীর নৈতিক শিক্ষাধারী সকল মানুষের চাওয়া পাওয়া । যাই হোক শুরু করি বশেমুরবিপ্রবির গল্প নিয়ে। জাতির জনক আর তার পবিত্র মাটি , গোপালগঞ্জ । আর সেখানকার সদরের ৫৫ একর জায়গায় গড়ে উঠা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় । বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্র Learn,think and Innovative! এই তিনটি কথার পুরো প্রয়োগ আমাদের শিক্ষার্থীরা করেছে, করছে এমনকি করবেও । ২০১১ এর পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১৭ টি সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে যাচ্ছে । সংস্কৃতি, সাহিত্য, ক্যারিয়ার, সেমিনার, স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা কোনটাতেই আমরা পিছিয়ে নেই ।
আমাদের সিএসই জয় লাভ করছে প্রগ্রামিং প্রতিযোগীতায়, বানাচ্ছে সফটওয়্যার থেকে শুরু করে ড্রোন । ইয়াং বাংলায় মুখ করে নিচ্ছে আমাদের তরুণেরা, আমাদের নিউটনের হাত ধরে একুশে বই মেলায় বের হয়েছিল বই, আমাদের সুধাংশু দা কাজ করে যাচ্ছে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, আমাদের আসিফ ভাই চালিয়ে যাচ্ছে তার এনিমেশন মুভির পদক্ষেপ, সুমন ভাইয়ের হাত ধরে গড়ে উঠেছে ই- কমার্সের প্রতিফলন…এরকম আরও অনেক গল্প, অনেক সফলতা পাওয়া যাবে এই ক্যাম্পাসে । অনেকের কাছে মনে হতে পারে এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এত অল্প জায়গায় কি বা হবে? না ধারণা ভুল! অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আময়াদের ক্যাম্পাস কম ছিল না, আর তোমাদের পদচারণায় তা আরও লোকবহুল হয়ে উঠবে । দেশের দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষের সংস্পর্শ নিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের ক্যাম্পাস ।
হিন্দু, মুসলিম, চাকমা, মারমা সকলেই জাত ভুলে গোল হয়ে বসে এই ক্যাম্পাসের মাটিতে । তুমি গানের আসর চাও, আমাদের আছে সাদাকালো মিউজিক ক্লাব, তুমি মুক্তচিন্তার অনুশীলন চাও আমাদের আছে অনুরণন,তুমি যুক্তিবাদী হতে চাও আমাদের আছে ডিবেটিং ক্লাব, তুমি করতে চাও অভিনয় আমাদের রংধনু তোমাদের অপেক্ষায় বসে আসে । তুমি এ ক্যাম্পাসে বসে শরতের কাশফুলের সাথে খেলা করতে পারবে, প্রিয়জনের সাথে গল্প কিংবা গ্রুপ স্টাডি – মধুমতির পাড় তোমার অপেক্ষায় । তুমি দেখতে চাও স্বাধীনতা চলে যায় টুংগীপাড়া মাজারে, তুমি ধরে রাখতে চাও আঠার বছর বয়স চলে যায় সুকান্তের বাড়ী । তুমি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাস্ত আমাদের আছে বিজনেস ক্লাব । এটুকু এত কম সময়ে এ ক্যাম্পাসের শিক্ষক – শিক্ষার্থীর কষ্টে সফল হয়েছে ।
শিক্ষা ও গবেষণার কথা বলি । তোমাদের আগমনের সাথে সাথে আমাদের একটি ব্যাচ বের হয়ে যাবে । ১১ থেকে শুরু করে কোন রকম সেশন জ্যাম ছাড়া তোমাদের বড় ভাইয়েরা বের হতে চলেছে । এটা কি বড় নয়? গবেষণা, এই অল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছে ২ টি গবেষণা পত্রিকা । যেখানে লিখেছিল, দেশ বিদেশী অনেক লেখক। এমবিএ আর পিএইড ডি প্রোগ্রামও চলে এসেছে এই বশেমুরবিপ্রবিতে ।
শিক্ষক, যারা তোমাদের গার্জিয়ান, তাদের রুপ অন্যান্য জায়গার থেকে আলাদা তা তোমরা বুঝতে পারবেই । শ্রদ্ধা – স্নেহের বন্ধনে আমাদের বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক । সবচেয়ে বড় বিষয়, এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তোমাকে সংগঠকরুপে গড়ে তুলবে । তুমি চাইলে তোমার শিক্ষকের সহযোগীতায় গড়ে তুলতে পার তোমার চিন্তাধারা বহি:প্রকাশ । গড়ে তুলতে পার তোমার সংগঠন ।
ডিজিটালাইজেশনে আমরা পিছিয়ে নেই । এ ক্যাম্পাসে বসে তুমি উপভোগ করতে পার স্যাগ অনলাইনে হাজার হাজার ই বুক । আমাদের আছে আপডেটেড ই লাইব্রেরি । অনেক গল্পই বললাম… এবার মোড় ঘুরাই ।
যারা ক্যাম্পাস র্যাগিং নামক অপসংস্কৃতি লালন পালন করছেন তাদের উদ্দেশ্য কিছু কথা বলি । যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর বিরুদ্ধে ও এক বছরের বহিষ্কারের আইন প্রণয়ণ করেছে তবুও এই অপসংস্কৃতি কমবে না । নবীনদের হেনস্তা করিয়ে পরিচয় লাভ করার কোন যুক্তি নেই । যুক্তি নেই বাদর নাচ কিংবা চু এর ঘরের নামতা পড়ানোর ।
সত্যিকারের বড় ভাই তারা যারা নবীনদের ডেকে নিয়ে পরিচিত হয়, পরিচিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতার গল্প বলে, পরিচিত হয় এ ক্যাম্পাসের সংগঠনের কথা বলে, পরিচিত হয় এ ক্যাম্পাসের আলোকিত মুখ সুমন ভাই, উজ্জ্বল দা, সুধাংশু দা, নিউটন মজুমদার, ফাহিম ভাইয়ের চিন্তা চেতনার কথা শুনিয়ে ।
সামান্য সালাম না দেওয়ার জন্য বাদর নাচ নাচানো মানুষগুলো এ ক্যাম্পাসের জন্য বিষফোড়া । নতুনদের গোল করে বসানো হোক বাবলা তলায় । ছুড়ে দেওয়া হোক এ ক্যাম্পাসের প্রাপ্তির কথা । গণরুমের র্যাগের বদলে চলুক মুক্তচর্চা, ফজিলেতুন্নেছার মেয়ে গুলো হোক বঙ্গমাতার আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠা নারী । অভদ্র হয়ে ভদ্রতা শিখানোর কোন মানেই হয় না!
যে শিক্ষার্থী এ ক্যাম্পাসের সফলতা সম্পর্কে জানবে, এ ক্যাম্পাসের প্রপ্তি বুকে তুলে নিবে… সে সিনিয়র জুনিয়র সকলকে শ্রদ্ধা বা স্নেহ দুটোই করবে। তাকে আর শেখাতে হবে না ।
সবশেষ আমরা দু:খিত তোমাদের জন্য যারা ভর্তি পরীক্ষার সময় মেসে মেসে, গণ রুমে স্বীকার হয়েছ এই ক্যাম্পাস র্যাগিং এর । সৌহার্দ্য আর ভালবাসায় গড়ে উঠুক নবীনদের পদচারণায় – এটাই সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া ।
লেখাপড়া২৪.কম/বশেমুরবিপ্রবি/তন্ময়/এমএএ-০৩৪৭