ইবিতে ভর্তি জালিয়াতচক্রের তিনজনকে কারাদন্ড

IU PIC-18ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০১৫-১৬ স্নাতক (সম্মান) শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি পরীক্ষা দেয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ একটি ভর্তি জালিয়াতি চক্র ধরা পড়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত এফ ইউনিটের পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন থেকে ঢাবি ছাত্র আবুল হোসেনকে আটক করেন কর্তব্যরত শিক্ষকরা। এরপর আটক আবুল হোসেনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার সহযোগী ও মুলহোতা ইবি ছাত্র রিপন আলী ও কুষ্টিয়ার শ্যামল নামে দুইজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। আটক প্রক্সিবাজদের মধ্যে ঢাবি ছাত্র আবুল হোসেনকে ১ বছর ও তার সহযোগী রিপন আলী ও শ্যামলকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে গোয়েন্দা তথ্য ও আটক আবুল হোসেনসহ তার সহযোগীদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, দেশের সকল পাবলিক পরীক্ষায় প্রক্সি পরীক্ষা দেয়ার কাজে জালিয়াতির সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় চক্র রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় বিপথগামী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে জালিয়াত চক্রটির নেটওয়ার্ক। ঢাবি থেকে জালিয়াত চক্রের নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রিত হয় বলে আটক আবুল হোসেনের দেয়া স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার এফ ইউনিটের পরীক্ষা চলাকালে প্রবেশপত্র নিয়ে প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিল ঢাবি ছাত্র আবুল হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের ৩৩২ নং কক্ষ থেকে কর্তব্যরত শিক্ষকরা সন্দেহমুলক ভাবে আবুল হোসেনকে আটক প্রক্টরিয়াল বডির কাছে সোপর্দ করে। এসময় প্রক্টরিয়াল বডির জেরায় আটক আবুল হোসেন পরীক্ষায় জালিয়াত চক্র নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। আবুল হোসেনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রিপন আলী ও কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র শ্যামলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

 

প্রক্টর অফিস ও গোয়েন্দা তথ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রক্সি পরীক্ষা দেয়ার সময় আটক আবুল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সে অমর একুশে হলের সালাম ৫০৩নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র। এছাড়া জানা গেছে, আবুল হোসেন চাদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।

 

Post MIddle

প্রক্টর অফিস ও আবুল হোসেনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ইকবালের সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রিপন আলীর টাকার বিনিময়ে প্রক্সি দেওয়ার চুক্তি হয়। ইকবাল ও রিপনের চুক্তির ভিত্তিতে ইবিতে প্রক্সি পরীক্ষা দিতে আসে আবুল হোসেন। আবুল হোসেন প্রক্টরিয়াল বডি ও গোয়েন্দাদের আরো জানান, ঢাবির আইন বিভাগের ইকবালসহ ঢাবির প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র সারাদেশের সকল পাবলিক পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার কাজের সাথে জড়িত। ইকবালের নেতৃত্বে জালিয়াত চক্রের সেকেন্ড ইন কমান্ড আরেক ঢাবি ছাত্র হাবিব সারাদেশের প্রক্সিবাজদের সাথে লেনদেনের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে। তাদের চক্রে প্রায় অর্ধশতাধিক মেধাবী ছাত্র সারাদেশের বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে থাকে।

 

এদিকে বিকাল চারটার দিকে পাবলিক পরীক্ষা সমূহ অপরাধ আইন ১৯৮০র ধারা ৩ অনুযায়ী আবুল হোসেনকে ১ বছর ও একই আইনের ধারা ৭ ও ১৩ অনুযায়ী সহযোগী রিপন আলী ও শ্যামলকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঝিনাইদহের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার রায় এ দন্ড প্রদান করেন। এসময় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার খোদেজা খাতুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান, ছাত্র-উপদেষ্টা ড. আনোয়ার হোসেন, সহকারী প্রক্টর ড. আবুল আল মুহিত, শামীম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

 

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন,“ আবুল হোসেনের সাথে কথা বলে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একটি সংঘবব্ধ জালিয়াত চক্রের সন্ধান পেয়েছি। এই চক্রের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হলো রিপন আলী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত এই চক্রটি সকল পাবলিক পরীক্ষার জালিয়াতির সাথে জড়িত রয়েছে বলে আবুল হোসেন স্বীকার করেছে। এছাড়া আবুল হোসেনের মোবাইলে কল করে অনেকে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ঘুষের প্রস্তাবসহ হুমকি দিয়েছে। আবুল হোসেনের কাছ থেকে প্রাপ্ত সকল তথ্য আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জালিয়াত চক্রের মুল হোতাদের ধরার স্বার্থে আমরা সব তথ্য দিতে পারছিনা। এব্যাপারে আইন শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা রয়েছে।

 

লেখাপড়া২৪.কম/ইবি/নবীন/এমএএ-০২০৩

পছন্দের আরো পোস্ট