ঘুরে এলাম সেন্টমার্টিন
অনেকদিনের স্বপ্নছিল দারুচিনি দ্বীপ নামে পরিচিত সেন্টমার্টিন ঘুরে দেখার। হাতে সময় পেয়ে কয়েকবন্ধু মিলে এ স্বপ্নপূরণে পা বাড়াই। ঢাকা থেকে গিয়ে কক্সবাজারে নামি। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি সকাল ১০টায় জাহাজ ছাড়ে টিকেট পেতে হলে আরও আগে রওনা দিতে হবে। যাই হোক ৫টায় ঘুম বিসর্জন দিয়ে সকাল ৮টায় টেকনাফ পৌছেও সীটের সাক্ষাৎ পাইনি বা সৌভাগ্য হয়নি। অগত্যা ট্রলার নিয়েই রওয়ানা দিলাম। ভাড়া নিল ৪০০ টাকা আসা যাওয়া দুই টিকিট একসাথে। লোকমুখে শোনলাম ২ঘণ্টার মতো সময় লাগবে শেষপর্যন্ত আমাদের ৩ঘণ্টা লেগেছিল। উত্তেজনায় রাতে ঘুম না হওয়ায় ট্রলারে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙ্গল কয়েকজনের চিৎকারে। দ্রুত ট্রলারের উপর উঠে এলাম। সকলের সাথে আমিও অবাক। সাগরের উপর একটি ছোট্ট ভূখন্ড ভাসছে। বোঝার আর বাকী রইলনা যে ঐ ছোট্ট ভূখন্ডটিই সেন্টমার্টিন। ট্রলারের আগেই আমার মন ঐ দ্বীপে নোঙ্গর ফেলল। ট্রলার তীরে ভিড়ার সাথেসাথেই নেমে পড়লাম। ব্রীজ পার হয়ে পরম তৃপ্তিতে দ্বীপের বুকে পা রাখলাম। নিরেট বালিতে দ্বীপের বুককে খুব নিষ্পাপ মনে হচ্ছিল। আমাদের হাতে সময় ছিল ২ঘণ্টা তাই সময় প্রক্ষেপণ না করে দ্রুত হেটে চলি। দ্রুত সকল জায়গা ঘুরার জন্য ২৫০টাকা দিয়ে একটি ট্রলি ভাড়া করি। যদিও আমরা থাকার উদ্দেশ্যে যাইনি, তারপরও যখন শুনি ৪০০টাকা হলে রুম ভাড়া পাওয়া যাবে; তখন মত পাল্টাই। কারন ততক্ষণে বুঝেগেছি যে একদিনে এ দ্বীপ দেখে মন জুড়াবেনা। রুম ভাড়া নিয়ে তাতে আমাদের সবকিছু রেখে ট্রলি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি দ্বীপজয়ে নয়ন জুড়াতে। সারা দিনের ক্লান্তি ততক্ষণে অনেকটা দূর হয়েছে।
প্রথমে আমরা যাই নারিকেল জিন্জিরাতে, বালির বুকচিরে আকাশের দিকে চলে গেছে সারি সারি নারিকেল গাছ; প্রতিটা গাছে বড়বড় ডাব। পাশেই বসা ঢাব বিক্রেতার কাছ থেকে ডাব কিনে খেয়ে ক্লান্তিকে আরেকটু শিথিল করি।
তারপর যাই দারুচিনি দ্বীপে, এখানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বালির উপর বিভিন্ন আকারের পাথরে ছড়াছড়ি। বিধাতা যেন নিজহাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপর ঢেউ এসে পাথরগুলোর তৃষ্ণা নিবারণ করে যাচ্ছে। আর পাথরের ফাঁকেফাঁকে অসংখ্য সামুদ্রিক মাছ খেলা করছে।
অতপর আমরা যাই হুমায়ুন আহমেদ এর বাড়ি “সমুদ্র বিলাস”এ, মূলগেইট দিয়ে ঢুকলে দুপাশের চারটি বাংলো পার হলেই সামনে পড়ে বারান্দাযুক্ত মুল বাড়ির ফটক। দোতলা বাড়িটির ওপর তলা থেকে অনায়াসে সমুদ্রের খেলা দেখা যায়। পাওয়া যায় সমুদ্রের নির্মল হাওয়া।
সবশেষে আমরা যাই সৈকতে, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আমরা সৈকতের সাথে পানির খেলা দেখি। তারপর লবণাক্ত পানির ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ি সাগরের বুকে। প্রায় ঘণ্টাদেড়েক ঝাপাপাঝি, স্বচ্ছ পানিতে মাছ ধরার ব্যর্থ চেষ্টার পর গোসল সেরে হোটেলে ফিরে আসি।
হোটেলে এসে ক্লান্ত শরীর শান্ত করে। রাত্তির খাবার শেষ আবার বেরিয়ে পড়ি রাত্তির দ্বীপ দর্শনে। চাঁদনী রাত ছিল। সমুদ্র বুকে চাঁদও মনে হয় তার প্রতিবিম্ব দেখে অবাক হচ্ছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আসা ঝিরঝির দমকা হাওয়া মনপ্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছিল। চারদিকটাকে খুব নিষ্পাপ মনে হচ্ছিল। এ সময় একটি প্রত্যাশিত ফোন আমার প্রশান্তির মাত্রা আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর ঘুমানোর জন্য হোটেলে ফিরে আসি।
পরদিন সকালে উঠে নাস্তা সেরে। আমরা প্রত্যেকেই একটি করে সাইকেল ভাড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ি সকালের দ্বীপ দর্শনে। সৈকত হয়ে দ্বীপটাকে একটা চক্কর দিয়ে পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলে ফিরে আসি। তারপর বাজারে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করি আর প্রস্তুতি নিই ফিরে আসার। দুপুরে খাবার হিসেবে খাই নানান সামুদ্রিক মাছ।
অতঃপর সময় ফুরালে আবার ট্রলারে উঠে বসি। ততক্ষণ পর্যন্ত দ্বীপের দিকে চেয়েছিলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বীপটি দৃষ্টিসীমার ভিতরে ছিল। আবার ফেরার প্রত্যাশায় ভ্রমনে ইতি টেনেছিলাম।#
লেখাপড়া২৪.কম/আরএইচ-৪৫৫৫