নতুন করে আরও ১০ হাজার নার্সের পদ সৃষ্টি করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে নার্সের পদ রয়েছে ৫ হাজার। আরও ১০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’২০১৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রাজুয়েট নার্সের ব্যবস্থা করেছি। আগে শুধুমাত্র ডিপ্লোমা নার্স ছিলো। আমাদের প্রতিটি জেলায় নার্সিং ইনিস্টিটিউট করার লক্ষ্য আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নার্সদের বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণে পাঠাচ্ছি। তারা পিএইচডি ডিগ্রি করতে পারছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭ হাজার সরকারি ডাক্তার, সহকারী ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। সেখানে নার্সদের জন্য মাত্র ৫ হাজার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলবো, আরো ১০ হাজার নার্স নিয়োগের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসুন। এখানে ৫ হাজার থাকলো। আরো ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দিতে হবে।
‘এতে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত লাগবে। কথায় বলে, অর্থই সব অর্নথের মূল। সেখানে গেলেই সমস্যা। তো সে সমস্যা হবে না। এটুকু আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যেই শিশুস্বাস্থ্যের বিষয়টি নিহিত রয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুধু শহর নয়, গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ যাতে সহজে চিকিৎসা সুবিধা পান, আমরা সে ব্যবস্থা করেছি। সারাদেশে প্রায় ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য কমপক্ষে একজন করে মোট ১৩ হাজার ২৫০ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় ২৯ ধরনের ওষুধ নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত ৫ বছরে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ২ হাজার ৪৪০ জন সহকারী সার্জন এবং ১৯৬ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এডহক ভিত্তিতে ৪ হাজার ১৩৩ জন সহকারী সার্জন নিয়োগ করা হয়েছে। ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ৬ হাজার ২২১ জন সহকারী সার্জন বৃহস্পতিবার যোগদান করবেন।
৬৪টি জেলায় ৬ হাজার ৩৯১ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ করা হয়েছে। ৪র্থ শ্রেণীর বিভিন্ন পদে ২ হাজার ৯৮৯ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ১ হাজার ৭৮৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ১টি করে শিশু হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে একটি করে শিশু হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে।
এছাড়া ১ হাজার ২০ জন সাব অ্যাসিট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
২০১১ সালে শুরু হওয়া এইচপিএনএসডিপি কর্মসূচি ২০১৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে জরুরি প্রসূতি সেবা, প্রশিক্ষণ, ইপিআইসহ আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৫ বছরে ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রচারণা ও সচেতনতার কারণেই এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, গত মেয়াদে ২০০৯ সালে আমি মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ সরকারিভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছিলাম। ২০১০ সাল থেকে এ দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের দেশের মায়েরা নবজাতক শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ প্রবণতায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল।
তবে আশার কথা, কয়েক বছর ধরে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ জোরেসোরে পালিত হওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৫ বছরে ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী জন্ম থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত পৃথিবীর সকল শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে বছরে ১৫ লাখেরও বেশি শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সকল শিশুকে জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শুরু করে ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হবে।