হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া দুই বছর
কথা সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ভেলভ্যু হসপিটালে ইন্তেকাল করেন তিনি। কত শত ভক্ত আর প্রিয়জনদের কাদিয়ে দু’বছর আগে এদিনে ইহলোক থেকে বিদায় নেন কিংবদন্তি এ কথা সাহিত্যিক।
হুমায়ুন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের ভাষায়, ‘আমরা এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’ তেমনি শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তার পাঠক, দর্শক ও ভক্ত অনুরাগীরাও।
আজ নূহাশ পল্লীতে জননন্দিত হুমায়ূনের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হবে। পবিত্র কুরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও কবরে ফাতেহা পাঠ করা হবে। হুমায়ূন আহমেদের মা থাকছেন মিরপুরের পল্লবীতে ছোট ছেলে কার্টুনিস্ট আহসান হাবিবের বাসায়। সেখানেও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৪৮ সালে নেত্রকোনায় জন্ম নেয়া হুমায়ূন আহমেদ বাবার কর্মস্থল পরিবর্তনের সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকটা সময় কাটান। মুক্তিযোদ্ধা বাবার ছেলে হুমায়ূন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডক্টরেট করেন। এর আগে তিনি প্রথমে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তরুণ শিক্ষক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল।
প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে বের হওয়ার পর হুমায়ূন আহমেদ নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেন অল্প দিনে। বাংলাদেশে বইয়ের পাঠক সৃষ্টির কিংবদন্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে হুমায়ূন আহমেদকে।
শুধু কথাশিল্পী নয়, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও তিনি সিদ্ধহস্ত। শিশুদের জন্যও লিখেছেন প্রচুর। হিমু, মিসির আলী ও ফিহা তার তিনটি অনন্য সৃষ্ট চরিত্র। হিমু হলুদ পাঞ্জাবি তরুণদের প্রিয়। হিমু যুক্তি মানে না। অন্য দিকে মিসির আলী তার বিপরীত। যুক্তির নাটাইয়ে বাঁধা মিসির আলীর কাছে কখনো কখনো রূপসী তরুণীদের চেয়ে মাছিটাই বড় হয়ে দেখা দেয়। ফিহা গাণিতিক সমীকরণে মিলান সব কিছু। এর বাইরেও তার অনেক সহজ স্বভাবসুলভ গল্প-উপন্যাস আছে।
‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকটি দিয়ে তিনি মাতিয়ে তোলেন দর্শক। ওই নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি নিয়ে ঢাকায় মিছিল-সমাবেশ-অনশন পর্যন্ত হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নাটকের নক্ষত্র হয়ে আবির্ভূত হলেন তিনি। ছবি বানানোয় হাত দিলেন হুমায়ূন। ‘আগুনের পরশমণি’ ছবিটি বানিয়ে তিনি হুলস্থুল ফেলে দেন।
কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পান এর জন্য। মুক্তিযুদ্ধ তার সাহিত্যে যেমন এসেছে তেমনি তার বানানো নাটক ও ছবিতেও। তার নির্মিত ‘শ্যামল ছায়া’ পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
সাহিত্যের সব শাখায় তিনি সৃষ্টি করেছেন রসবোধ। হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাসে দুঃখবোধের চেয়ে হাসি আনন্দটাই বেশি। নগরজীবনের কষ্ট, সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ, বেকারত্বের অভিশাপ, মানুষের বিচিত্র সব ইচ্ছা উঠে এসেছে তার লেখনীতে। মানুষের মনের গভীরে চেপে থাকা কথাগুলো তিনি সহজ করে বলেছেন।
হুমায়ূন আহমেদ গাজীপুরে গড়ে তোলেন নূহাশ পল্লী। সেখানে তিনি নাটক ও সিনেমার শুটিংয়ের পাশাপাশি নিজের অবকাশ যাপনের জন্য ব্যবহার করতেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপে তিনি গড়েছেন সমুদ্রবিলাস কুটির। সেখানেও তিনি জীবনের সুন্দর অবকাশ যাপনের কিছুটা সময় কাটাতেন বছরের শীত মওসুমে।
হুমায়ূন আহমেদ লেখক শিবির পুরস্কার থেকে শুরু করে একুশে পদক পর্যন্ত জয় করেছেন। তিনি প্রথম বিয়ে করেন গুলতেকিনকে। টেকেনি। হুমায়ূনের শেষ জীবনে সাথী ছিলেন শাওন ও তার সন্তান নিষাদ ও নিনিত। গুলতেকিন আছেন তিন কন্যা নোভা, শীলা ও বিপাশা এবং এক ছেলে নূহাশকে নিয়ে।
হুমায়ুন নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা ঘেটুপুত্র কমলা মুক্তি পেয়েছে গত বছর। তার লেখা শেষ উপন্যাস দেয়ালও প্রকাশিত হয়েছে।
এ দিকে হুমায়ুন আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন গত বৃহস্পতিবার রাতে নূহাশ পল্লীতে গেছেন। পিরুজালী এলাকা ও নূহাশ পল্লীর আশপাশের কমপক্ষে আটটি মাদরাসা ও এতিমখানার শিশুদের দাওয়াত করা হয়েছে। শনিবার দিনব্যাপী কুরআন তিলাওয়াত হবে। ইফতার মাহফিলে হুমায়ুন ভক্ত, শিল্পী এবং বিভিন্ন অঙ্গনের কলা-কুশলীরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন নূহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র জয়ন্ত পাল গতকাল নূহাশ পল্লীতে যান। সেখানে তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু দিবসেও তিনি এখানে থাকছেন। তার বন্ধু ওয়ার্ল্ড ইউনিভিার্সিটির তানভীর হাসান বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে যতটা ভাবি, নূহাশ পল্লীতে এসে তার চেয়ে বেশি পাই। নূহাশ পল্লীকে তিনি স্বপ্নের চেয়েও বেশি করে সাজিয়েছেন।
পিরুজালী গ্রামের অনার্সপড়–য়া রফিকুল ইসলাম বলেন, হুমায়ূন স্যারের জন্য পিরুজালী থেকে হোতাপাড়া রাস্তাটি সংস্কার হয়েছে।
বর্তমানে রাস্তাটি প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। কিন্তু পাকা সড়ক থেকে নূহাশ পল্লীর গেট পর্যন্ত দূরত্ব সর্বোচ্চ ৩০০ ফুট হবে। প্রায় প্রতিদিন অনেক দর্শণার্থী নূহাশ পল্লীতে আসেন। বর্ষায় এ পথটুকু দর্শনার্থীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হুমায়ূন আহমেদ। তার প্রিয় গাজীপুরের পিরুজালীর সেই নূহাশ পল্লীর লিচু তলাতেই ওই বছরের ২৪ জুলাই তাকে দাফন করা হয়।
স: ইএইচ